করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে জানুয়ারির শেষের দিকে চীন যখন লকডাউনে চলে গিয়েছিল, অর্থনীতিবিদরা ভেবেছিলেন যে, দেশটির অর্থনৈতিক বৃদ্ধির গতিপথটি ভি-আকৃতির মতো ধারালো সঙ্কোচনের মুখে পড়বে।
বেশিরভাগ বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালের প্রথম ৩ মাসে চীনের অর্থনীতিতে ১০ শতাংশের বেশি সঙ্কোচন ঘটেছে।
তবে চীন সরকার উল্লেখযোগ্য সাফল্যের সাথে করোনা মহামারি সামাল দিয়ে দেশটিতে সাধারণ অবস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। দেশটিতে নতুন করে কোনো করোনা সংক্রমণের খবর নেই। অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সরবরাহ এবং চাহিদা উভয়ই বাড়ানো বাঞ্ছনীয়। তাই ভোগের পরিবর্তে উৎপাদনের উপর জোর দেয়া মার্কসবাদী তত্তে¡ বিশ^াসী চীন আবারো উৎপাদনে ফিরে গেছে।
চীনা কর্মকর্তারা গর্ব করে বলেছেন, পরিস্থিতি আবার প্রায় স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। দেশটির সিকিওরিটিজ রেগুলেটর বলছে, তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯৮ শতাংশ সম্পূর্ণভাবে কাজ আবার শুরু করেছে। চীনের পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, সারা দেশে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে গ্যাস পাইপলাইন স্থাপনা পর্যন্ত ৮৯ শতাংশ বড় বিনিয়োগ প্রকল্পগুলির কাজ পুরোদমে চলছে।
তবে নতুন করে মহামারি সংক্রমণের ব্যাপারে অতি মাত্রায় সতর্ক চীন। দেশটির জিয়াংসু প্রদেশের একটি অপটিক্যাল কেবল কারখানার জার্মান পরিচালক তাদের কর্মীদের ক্রস-ইনফেকশনের ঝুঁকি কমাতে ১০টি পৃথক ইউনিটে ভাগ করেছেন। ইউনিটগুলোকে কারখানা, ক্যান্টিন এবং আবাসগুলিতে একে অপরের থেকে আলাদা করে রাখা হয়। তিনি বলেছেন যে, এ জাতীয় পদক্ষেপগুলো জটিল, তবে প্রয়োজনীয়।
উৎপাদনের দিক থেকে সামগ্রিক চিত্রটি কিন্তু উৎসাহজনক। চীনের বড় মাপের প্রতিষ্ঠানগুলি জানিয়েছে যে, তারা পুরোপুরি উৎপাদনশীল। দেশটির অ্যাপলের বেশিরভাগ আইফোন তৈরি করা সংস্থা ফক্সকম বলেছে যে, তারা চলতি মাসে আবার স্বাভাবিক উৎপাদন শুরু করবে। এমনকি রাষ্ট্রটির অনেকগুলো ছোট সংস্থার অবস্থাও বেশ ভাল। জার্মানির অটোমেশন সংস্থার লেনজে’র চীনের মহাব্যবস্থাপক শেন শি জানিয়েছেন যে, উহানে আটকেপড়া দম্পতিসহ তার ২৬০ জন কর্মচারীই সাংহাইয়ের কারখানায় কাজে যোগ দিয়েছে। উশি শহরের একটি কেমিক্যাল কারখানার নির্বাহী বলেছেন, ‘সমস্ত চাকা এখানে খুব দ্রæত ঘুরতে শুরু করেছে, তবে অর্ডার নেই।’
বিশ^ব্যাপী করোনা মহামারির কারণে এই মুহূর্তে চীনের রফতানি চাহিদা কমে গেলেও দেশটিকে খুব বেশি চিন্তিত দেখা যাচ্ছে না। চীন ২০০৭ থেকে ২০০৯ সালের বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কট থেকে শিক্ষা নেয়ার কারণে সংকটময় মুহূর্তে রফতানির ওপর কম নির্ভরশীল। এখন দেশটি রফতানি খাতের পরিবর্তে অভ্যন্তরীণ খরচের ওপর বেশি জোর দিচ্ছে। রাষ্ট্রটি অবকাঠামো এবং নির্মাণ শিল্পের মতো বিষয়গুলোর জন্য তহবিল সংগ্রহের জন্য প্রদেশগুলোকে আরো সহায়তা দিতে শুরু করেছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন