বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ইতালির দেখানো পথেই চলবে ইউরোপ

যুক্তরাষ্ট্রে ১০০ বিমানকর্মী আক্রান্ত শনাক্ত : ১৪,৭৮,২৮৮ মৃত ৮৬,৭৪৪ সুস্থ : ৩,১৬,৭৯৫

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০২০, ১১:৫১ পিএম

বিশ্বে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনায় মৃত্যু আর সংক্রমণের সংখ্যা। গোটা বিশ্বে গতকাল পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৮ জন মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ৮৬ হাজার ৭৪৪ জনের। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়েছেন ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৯৫ জন। যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সে মৃতের সংখ্যা বাড়লেও অবস্থার উন্নতি হয়েছে ইতালিতে। করোনা মোকাবিলায় তাদের সাফল্য দেখে এখন ইউরোপের অন্যান্য দেশেও তাদেরকে অনুকরণের চিন্তা করছে।
গতকাল রাত ১১টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ইউরোপের কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বে সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। সর্বাধিক মৃত্যু ঘটেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩৬৯ জন, এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৯৩০, স্পেনে ৬২৮, ইতালিতে ৫৪২, , বেলজিয়ামে ২০৫, হল্যান্ডে ১৪৭, ইরানে ১২১, সুইডেনে ৯৬, জার্মানিতে ৮৯, তুরস্কে ৮৭, সুইজারল্যান্ডে ৭২, পর্তুগালে ৩৫, অস্ট্রিয়ায় এবং পোল্যান্ডে ৩০ জন করে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে সোমবার থেকে মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড ১ হাজার ৯৩৯ জনের মৃত্যু হয়। গতকালসহ দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৬৮ জনে দাঁড়িয়েছে। করোনা আঘাত হানার পর একদিনে এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যু। দেশটিতে এর মধ্যে নিউ ইয়র্কের অবস্থা ভয়াবহ। শুধু এই অঞ্চলেই একদিনে ৭৩১ জনের মৃত্যু হয়। মোট মৃত্যু ৫ হাজার ৪৮৯ জন। এ ছাড়া করোনায় ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে স্পেন, ফ্রান্স ও ইটালিতেও। তবে বাকি দেশগুলির কোথাওই সংক্রমণের সংখ্যাটা আমেরিকার ধারে কাছে পৌঁছয়নি। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। এখন পর্যন্ত আক্রান্ত ৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৮৫ জন। যা বিশ্বের যেকোন দেশের তুলনায় বেশি।
ফ্রান্সে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা, হাসপাতালে ভর্তির হার বাড়ছে। ১ মার্চ থেকে বুধবার পর্যন্ত ফ্রান্সে ১০,৩২৮ জন মারা গেছে। আর বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত দেশটিতে রেকর্ড ১ হাজার ৪১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৫ মার্চ থেকে দেশটিতে লকডাউন জারি করা হয়েছে। লকডাউনের নিয়ম না মানলে করা হচ্ছে জরিমানা। গত ২৪ ঘণ্টায় ফ্রান্সের হাসপাতালগুলোতে যে কয়জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই সংখ্যাটি আগেরদিনের সংখ্যার প্রায় সমান। এর মধ্যে আরো ৮২০ জনের মৃত্যু হয়েছে নার্সিং হোমগুলোতে।
ফ্রান্সের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক জেরোম সালোমন জানান, ফ্রান্সে মহামারি পরিস্থিাতি এখনো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে শীর্ষ ধাপে এখনো পৌঁছায়নি। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকলেও জটিলভাবে আক্রান্ত রোগীদের অনেকেই সুস্থ হতে থাকায় হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ কমছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশটির প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপ ‘জাতীয় কোয়ারেন্টিন দীর্ঘায়িত হবে’ বলে জানান। এখন পর্যন্ত ১৫ই এপ্রিল পর্যন্ত ফ্রান্সে লকডাউন চলার কথা থাকলেও এই সময় দীর্ঘায়িত হবে বলে আশা করছেন অনেকে।
তবে এখনও পর্যন্ত করোনার হানায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু দেখেছে ইতালি। সেখানে ১৭ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছেন। মৃতের সংখ্যার দিক থেকে ইতালির কাছাকাছিই রয়েছে স্পেন। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দেড় লাখের নীচে রয়েছে। তবে মৃতের সংখ্যা এখনই ১৪ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। করোনার গ্রাসে ফ্রান্সও। সেখানে লাখেরও বেশি মানুষ সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ফ্রান্সে। জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত হাজার দু’য়েক। কিন্তু সেখানে হু হু করে বাড়ছে সংক্রমণ।
ইতালিতে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। গতকাল শনাক্তের সংখ্যা কিছুটা বেড়ে ৩ হাজার ৮৩৬ হলেও মঙ্গলবার ছিল ৩ হাজার ৩৯ জন এবং সোমবার ৩ হাজার ৫৯৯। গতকাল মৃতের সংখ্যা পূর্বের দিনের ৬০৪ জন থেকে কম। সোমবার এই সংখ্যা ছিল ৬৩৬।
ইতালির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি জানান, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার করোনা মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। যার জন্য ২৪ হাজার ৩৯২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পেরেছেন। সূত্র : ডেইলি মেইল, দ্য সান।
যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ বিমানকর্মী করোনায় আক্রান্ত
দ্য ডালাস মর্নিং নিউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে অন্তত ১০০ বিমানকর্মীর শরীরে করোনা ধরা পড়েছে। বিমানকর্মীদের সংগঠনের নেতারা বলছেন, এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আমেরিকান এয়ারলাইন্সে প্রায় ২৫ হাজার কর্মী কাজ করেন। তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম। তবে বিমান সংস্থাগুলো তাদের ঠিক কতজন কর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত সেই সংখ্যা প্রকাশ করতে চাইছে না।
ফোর্ট ওয়ার্থ ভিত্তিক আমেরিকান এয়ারলাইনস নিশ্চিত করেছে যে, ফিলাডেলফিয়ার একজন ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট, পল ফ্রিশকর্ন, ২৩ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন। আমেরিকান এয়ারলাইন্সের পাইলট এবং ডিএফডাবিøউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্টস ইউনিয়ন তাদের সদস্যদের উদ্দেশ্যে একটি চিঠিতে বলেছিল যে, ‘প্রত্যেককে এই হুমকির গুরুত্বকে উপলব্ধি করা দরকার।’ তারা জানায়, ‘কোভিড-১৯ একটি মারাত্মক বৈশ্বিক মহামারী এবং এটি আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলেছে, এবং এখন আমাদের জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।’
ডালাস ভিত্তিক সাউথ ওয়েস্ট এয়ারলাইনসও ক্যারিয়ারে কোনও নির্দিষ্ট আক্রান্তের সংখ্যা প্রকাশ করেনি, যদিও বেশ কয়েকটি ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট বলেছে যে, তারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং বর্তমানে কোয়ারান্টিনে রয়েছেন।
আমেরিকান এয়ারলাইন্সের মুখপাত্র রস ফিনস্টেইনের একটি বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আমাদের গ্রাহকরা এবং দলের সদস্যদের নিরাপত্তা আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার। আমরা রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রসম‚হ এবং জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা-সংক্রান্ত যে কোন পদক্ষেপে তাদের সাথে সমন্বয় করছি।’
আমেরিকান এয়ারলাইন্স তাদের ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট এবং অন্যান্য ক্রুদের নিজস্ব মুখোশ আনার অনুমতি দেয়া হয়েছে। বিমান সংস্থাটি তাদের সদস্যদের জন্য ফেস মাস্ক সংগ্রহ করেছে এবং আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এগুলি বিতরণ করা হবে বলে জানিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন