স্টাফ রিপোর্টার : ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক গত শুক্রবারের জুমার নামাজের খুতবা নির্দিষ্ট করে দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গতকাল পৃথক পৃথক বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মসজিদ কুরআন ও সুন্নাহর বিষয়ে বয়ানের স্থান। কোন রাজনৈতিক দলের বা কোন সরকারী সংগঠনের গলাবাজি বা রাজনৈতিক বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করে প্রচারের স্থান নয়। গত শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে নির্দিষ্ট খুতবা পাঠে খতিবগণকে বাধ্য করার বিষয়টি অনভিপ্রেত। খুতবায় চাপ সৃষ্টি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। খুতবা নিয়ন্ত্রণের অপচিন্তা বাদ না দিলে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে উঠতে পারে। সুতরাং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল পাঠ্যসূচিতে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করলে মগজ ধোলাই করে কোন ছাত্রকে সন্ত্রাসী বা জঙ্গি বানানো যাবে না। এটা সরকার তথা শিক্ষা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে উপলব্ধি করতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম ও সেক্রেটারী মাওলানা এবিএম জাকারিয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, মসজিদে কোন সময়ই সন্ত্রাস বা সাম্প্রদায়িকতা শিক্ষা দেয়া হয় না। খতীবগণ অত্যন্ত বিনয়ীভাবে মানুষকে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শৃঙ্খলা, পরস্পর ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সুদৃঢ়করণ ও ভারসাম্য সমাজ গঠনের লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। যার মাধ্যমে সমাজের নানাবিধ সমস্যা সমাধান হয়ে থাকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের খুতবাহ নির্দিষ্টকরণ বিষয়টি খুতবাহ’র ভূমিকা বাঁধাগ্রস্ত করবে। কাজেই সরকার এধরণের নজরধারী করে মূলত ইসলামকেই হেয়প্রতিপন্ন করেছে। ফলে বিশ্বে ইসলাম চরমভাবে অবজ্ঞারপাত্রে পরিণত হবে। তারা আরও বলেন, ইসলামকে যারা হেয় করতে সন্ত্রাসকে ইসলামের সাথে তালগুল করে ফেলেছে তারা মূলত ইসলামের কল্যাণ চায় না।
জাতীয় তাফসির পরিষদ বাংলাদেশ
জাতীয় তাফসির পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, উপদেষ্টা মুফতী কেফায়েতুল্লাহ কাশফী, কেন্দ্রীয় নেতা মুফতী ওমর ফারুক যুক্তিবাদী, প্রিন্সিপাল মুফতি বাকী বিল্লাহ প্রমুখ এক বিবৃতিতে বলেছেন, জু’মার খুতবাহ নিয়ন্ত্রণের অর্থ হলো মসজিদ থেকে সকল সন্ত্রাসের জন্ম। এধরনের বিশ্বাস থাকলে ইসলাম ও মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ হয়ে যাবে। মসজিদ আল্লাহর ঘর। মসজিদে আসলে মানুষের মন নরম হয়ে আল্লাহর ভয় জাগ্রত হয়। ফলে মানুষ অন্যায় ছেড়ে ভাল মানুষে পরিণত হয়। খতীবগণও অন্যায় কাজ, গর্হিত কাজ থেকে সকলকে বেঁচে থাকার তাগিদ দেন। খতীবগণ সব সময় দেশ, স্বাধীনতা ও মানবকল্যাণে ব্রত হওয়ার গুরুত্ব দেন। নজরধারীর নামে মসজিদের খুতবাহ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে কারো জন্যই কল্যাণ হবে না। তারা বলেন, ইসলামী শিক্ষা সর্বত্র উপেক্ষিত হওয়ার কারণেই সন্ত্রাসবাদ সর্বত্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সন্ত্রাস রুখতে হলে শিক্ষার সকল স্তরে নৈতিকতা শিক্ষা অপরিহার্য।
কসরে হাদী খানকাহ শরীফ
কসরে হাদী খানকার খলিফা, শাহসুফী সৈয়দ আব্দুল হান্নান আল হাদী এক বিবৃতিতে বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে মসজিদের খুতবাহ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে যে খুতবাহ তৈরি করে দেয়া হয়েছে তাতে অনেক অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হয়েছে। সাধারণত: খতীবগণ মুসলমানদের জীবন চলার পাথেয় হিসেবে ভাল কাজ করা, মন্দকাজ ছাড়া সর্বোপরি ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নতি, অগ্রগতি ও শান্তি কামনা করে দোয়া করেন এবং দিক-নিদের্শনা দিয়ে থাকেন। কিন্তু ইফার খুতবায় অমুসলিমদের জন্যও দোয়া করা হয়েছে যা ইসলামী শরীয়তে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। কেননা আল্লাহর নবী হযরত নূহ (আ:) তার অমুসলিম সন্তানের জন্য দোয়া করলে এবং হযরত ইবরাহীম আঃ তাঁর পিতার জন্য দোয়া করলে আল্লাহ তা ওহীর মাধ্যমে নিষেধ করে দেন। কাজেই কোন অমুসলিমের কল্যাণের জন্য দোয়া করা যাবে না। ইফা নির্ধারিত খুতবায় তা করে ইসলামবিরোধী কাজ করেছেন। তিনি আরও বলেন, মসজিদে কোন প্রকার সন্ত্রাসবাদ শিক্ষা দেয়া হয় না। অতীতে কেউ দেয়নি, বর্তমানেও দেয়া হয় না এবং ভবিষ্যতেও সন্ত্রাসবাদ শিক্ষা দেয়া হবে না। কাজেই খুতবাহ বা মাহফিল নিয়ন্ত্রের ব্যর্থ চেষ্টা থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে।
মুসল্লী কল্যাণ পরিষদ
ক্ষমতা, জমি, খাল, বিল, স্কুল, কলেজ ও অফিস-আদালত সবকিছু দখলের পর এখন জুমার খুতবা ও বয়ান দখলের চেষ্টা চলছে। মসজিদগুলো এতদিন আল্লাহ ও রাসূলের নিয়ন্ত্রণে চলত। এখন কী সরকার ইবাদত-বন্দেগির ক্ষেত্রেও নিজেদের দখল ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় মেতেছেন? গতকাল এক বিবৃতিতে মুসল্লী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি হাজী আবু তাহের এক বিবৃতিতে একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, গত পরশু জুমার নামাজে সরকারিভাবে রাজনীতি ও দুনিয়াবি কথা বলতে দেশের ইমাম-খতিবদের বাধ্য করা হয়। মসজিদে নামাজে সব মুসলমান অংশ নিয়ে থাকেন। এখানে কোন দল ও সংগঠনকে প্রকাশ্যে নাম নিয়ে গলাবাজি করার কোন নিয়ম নেই। মসজিদ দলনিরপেক্ষ স্থান। কোন মসজিদ রাজনৈতিক বক্তব্য বা বিভেদ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। দেশের ইমাম ও আলেমদের সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা চাপের মুখে রেখে কোরআন ও সুন্নাহর বক্তব্য স্তব্ধ করতে চায়। মানুষের ইবাদতে হস্তক্ষেপ কোনদিনই মঙ্গল ডেকে আনে না। অতীতে কেউ দেয়নি বর্তমানেও দেয়া হয় না। ভবিষ্যতেও সন্ত্রাস বা শিক্ষা দেয়া হবে না। কাজেই খুতবা বা মাহফিল নিয়ন্ত্রণের ব্যর্থ চেষ্টা থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন মুরাদনগর উপজেলা
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মুরাদনগর উপজেলা শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি হাফেজ মাওলানা সুলাইমান ও সেক্রেটারী মাস্টার মু. মফিজুল ইসলাম এক বিবৃতিতে খুতবাহ নিয়ন্ত্রণের সরকারী উদ্যোগে গভীল উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে এধরনের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানিয়ে বলেছেন, যারা সন্ত্রাস করছে তাদের ভেতর ইসলাম না থাকার কারণে। ইসলামী শিক্ষা থাকলে কেউ সন্ত্রাসের সাথে জড়িত থাকতে পারে না। প্রাইমারী থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকলে এভাবে মসজিদের খুতবাহ নিয়ন্ত্রণের কোন প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন