দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর খাবারের ব্যবস্থা করতে না পারলে তাদেরকে ঘরে রাখা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যারা দিন আনে দিন খান-দিন মজুর তাদেরকে বলা হচ্ছে ঘরে থাকো। ঘরে থাকলে তো তাদের খাওয়া আসছে না। কিভাবে আহজারি করছে গার্মেন্টসের শ্রমিকরা, গৃহকর্মীরা, এরা অত্যন্ত দুঃস্থ হয়ে গেছে এখন কাজ নেই। যে বস্তিতে তারা থাকে সেখানে ঘর ভাড়া দেয়ার উপায় নেই, সেখান থেকে তাদেরকে উচ্ছেদও করা হচ্ছে। গ্রামের দিনমজুর, ক্ষেতমজুর, যারা রিকসা চালায়, ঠেলা গাড়ি চালায় ওদের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এই ইনফামাল সেক্টরের লোকজনের কথা চিন্তা করতে হবে। যে ফেরি করতো হকার, বাজারের আসতো এসব কিন্তু বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরকে নিয়ে ভাবতে হবে। শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
করোনাভাইরাস সংক্রামণের ব্যাপকতার পরিপ্রেক্ষিতে মহাদুর্যোগ মোকাবেলায় জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের দাবি জানিয়ে মিজা ফখরুল বলেন, করোনা দুর্যোগের নানামুখী প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হবে বলে মনে হয়। এমতাবস্থায় পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে সুসমন্বিত ও সুবিবেচিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, ত্রাণ বিতরণ, বিভিন্ন সেক্টারে প্রণোদনা ও ঋণ প্যাকেজ বন্টন ইত্যাদি বিষয়ে সরকারকে পরামর্শ দেওয়ার জন্যে একটি জাতীয় টাস্ক ফোর্স গঠনের প্রস্তাব আমরা করছি। এখনই খাদ্য ও ত্রাণ বন্টনে এবং করোনার পরবর্তী পুনর্বাসনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই প্রক্রিয়াটিকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে।
কারোনা মোকাবেলায় অগ্রাধিকার বিষয়গুলো কী হতে পারে প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সবার আগে এখন স্বাস্থ্য, চিকিৎসা এবং টেস্ট টেস্ট টেস্ট প্রয়োজন। রোগীদের স্বাস্থ্য সেবা দেয়াটা দেয়া সবচেয়ে আগে। এছাড়া দিনমজুরদের কাছে খাদ্য পৌঁছানো, তাদের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করা এবং তাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা সবচেয়ে গুরুত্ব পাওয়া উচিত, টপ অগ্রাধিকার পাওয়া প্রয়োজন। এটার জন্য উপযুক্ত হচ্ছে সামরিক বাহিনী।
বিএনপি কোনো কাজ করছে না বলে ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের যেসব অভিযোগ করেছেন এই সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, একটা রাষ্ট্রের মূল চালিকা শক্তি হচ্ছে সরকার। সরকারের যদি জনগণের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকে, তাদের কোনো দায়-দায়িত্ব থাকে না, মানুষের প্রতি কমিটমেন্ট থাকে না। যার ফলে এটা সরকার উপলব্ধি করছে না যে, এখন যেটা দরকার সবাইকে একখানে আনা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে আমরা এই বিষয়ে কথা বলেছি, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য লিফলেট বিতরণ করেছি, মাস্ক দিয়েছি। ২৪ মার্চ থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা সারাদেশে দুঃস্থ, দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করছে। সারাদেশে কমপক্ষে ৫ লাখ পরিবারের কাছে আমাদের সাহায্য ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এটা অব্যাহত রয়েছে এবং অব্যাহত থাকবে। দুর্ভাগ্য আমাদের তথ্যমন্ত্রী সেগুলো দেখতে পান না।
প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্যাকেজ শুভঙ্করের ফাঁকি অভিযোগ করে অর্থনীতির এই শিক্ষক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৯৫ হাজার ৬১৯ কোটি টাকার অর্থনৈতিক প্যাকেজটি কলেবরে বড় হলেও এটি একটি শুভঙ্করের ফাঁকি, লোক দেখানো আইওয়াস মাত্র। প্যাকেজটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রণোদনা বলা হলেও মূলত অধিকাংশই ব্যাংক নির্ভর ঋণ-প্যাকেজ যা বিভিন্ন সেক্টরের ব্যবসায়ী মহলকে দেয়া হবে ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে। এতে সরকারের প্রণোদনা নিতান্তই অপ্রতুল।
এর আগে সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে করোনায় মৃত্যুবরণকারী ডা. মঈন উদ্দীনের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা নিবেন করেন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন রিয়াজ উদ্দিন নসু, শায়রুল কবির খান, ও শামসুদ্দিন দিদার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন