জনদুর্ভোগ চরমে : বন্দরে ৩নং সঙ্কেত
চট্টগ্রাম ব্যুরো : উত্তর বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন বাংলাদেশের ওপর জোরদার বর্ষার মৌসুমি বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে গত দু’দিন ধরে চট্টগ্রামে টানা ভারী বর্ষণ হয়েছে। সেই সাথে প্রবল সামুদ্রিক জোয়ারের দ্বিমুখী চাপে বন্দর নগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জোয়ার ও অতিবর্ষণে থমকে যায় দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রাম মহানগরীর বন্দর-শিপিং ও ব্যবসা-বাণিজ্যিক কর্মকা-। শনিবার রাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত নগরীর কোথাও কোথাও হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে প্লাবিত হয়। চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আগ্রবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় দোকানপাট, গুদাম, আড়তে মজুদ থাকা বিপুল পরিমাণ মালামাল বিনষ্ট হয়েছে। দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে জোয়ার ও প্রবল বর্ষণের কারণে নিচু এলাকায় জনদুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। দুপুরের পর থেকে বর্ষণ স্তিমিত হয়ে আসে। আজও (সোমবার) চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এদিকে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় উপকূল ও সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর ৩নং সঙ্কেত বলবৎ রয়েছে।
দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু তথা বর্ষার বায়ুমালা উত্তর বঙ্গোপসাগর হয়ে বাংলাদেশের দিকে আরো জোরালো হয়েছে। এর সক্রিয় প্রভাবে শনিবার রাত থেকেই চট্টগ্রাম অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। গতকাল দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামে অঝোরধারায় বৃষ্টি পড়ে। সেই সাথে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যায়। সাগরে মাছ ধরা ট্রলার ও নৌযানসমূহকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে গতকাল চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙ্গরে আমদানি-রফতানিমুখী মালামাল লাইটারিং খালাস, ডেলিভারী পরিবহন কার্যক্রম অনেকাংশে ব্যাহত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য ও লেদদেনে ভাটা পড়ে। ভারী বর্ষণের কারণে সর্বত্র নাগরিক দুর্ভোগ বেড়ে যায়। নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, শোলকবহর, নাসিরাবাদ, বাকলিয়া, চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, রাজাখালী, আছাদগঞ্জ, আগ্রাবাদ, সাগরিকা, হালিশহর, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক, অলিগলি, বসতঘর, দোকানপাট, গুদাম ও আড়ত কাদাপানিতে প্লাবিত হয়। অনেক সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে করে চট্টগ্রামবাসীকে বিভিন্নমুখী দুর্ভোগে পড়তে হয়।
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, বর্ষার মৌসুমি বায়ুর বর্ধিতাংশের অক্ষ বা বলয় ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি থেকে প্রবল অবস্থায় রয়েছে।
২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
দক্ষিণাঞ্চলে বৃষ্টিপাত স্বাভাবিকের চেয়ে কম
নাছিম উল আলম জানান, ভরা বর্ষার বৃষ্টিবিহীন আষাঢ় পেরিয়ে পূর্ণিমার ভরা কাটালকে সামনে রেখে শ্রাবণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূল ভাগজুড়ে গত তিন ধরে থেমে থেমে মাঝারী বর্ষণ হলেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এখনো স্বাভাবিকের তুলনায় কম। ভরা বর্ষার গত জুন মাসে বরিশাল বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৩০% কম। পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গতকাল সকালে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমেছে উপকূলসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলেই। শনিবার সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে প্রায় ৪২ মিলিমিটার এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়াতে প্রায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও গতকাল সকালের সে চিত্র অনেকটাই পাল্টেছে। গতকাল সকালের পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ২৫ মিলিমটার এবং কলাপাড়াতে মাত্র তিন মিলমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে মাত্র ৭ মিলিমিটার। সন্ধ্যায় এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলের আকাশ অনেকটাই পরিষ্কার হয়ে আসে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আজ সকালের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় আবহাওয়া পরিস্থিতির পরিবর্তনের আভাসও দেয়া হয়েছে। তবে শনিবার দুপুর ৩টা থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারীবর্ষণের যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল, মেয়াদ শেষে তা আর সম্প্রসারণ করা হয়নি। পায়রাসহ সবকটি সমুদ্র বন্দর থেকে সতর্ক সংকেতও প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবকটি নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা বহাল রাখা হয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের মতে, গত মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩০% কম বৃষ্টি ঝড়েছে। তবে এসময় সারা দেশের গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২৯% কম। এমনকি গত ১৭ জুন বর্ষা মাথায় করে দেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিস্তার লাভ করলেও তা যথেষ্ঠ কম সক্রিয় থাকায় কাক্সিক্ষত বৃষ্টি ঝড়েনি। গতমাসে বঙ্গোপসাগরে দু’টি মৌসুমী লঘুচাপ সৃষ্টি হলেও এর একটিও নিম্নচাপে পরিণত হয়নি।
চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৫১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের স্থলে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫৯৫ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া বিভাগ তার দীর্ঘ মেয়াদী বুলেটিনে। তবে মাসের শুরু থেকে গতকাল সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সে নিরিখে ভড়া বর্ষার চলতি মাসেও দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক বৃষ্টি হবে কিনা সে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি আবহাওয়া পর্যবেক্ষকগণ।
মংলায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত
মংলা সংবাদদাতা : উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার প্রভাবে শনিবার সকাল থেকে মংলা বন্দর এলাকাসহ সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে থেমে থেমে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টিপাতের ফলে বন্দরে অবস্থানরত দেশী-বিদেশী বাণিজ্যিক জাহাজে পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহণ কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন