বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ফিঙ্গারের বেড়াজালে হজযাত্রীরা

প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

৪ আগস্ট প্রথম হজ ফ্লাইট পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়ার চুক্তি করা সম্ভব হয়নি
শামসুল ইসলাম : দশ আঙুলের ফিঙ্গারের বেড়াজালে পড়েছেন বাংলাদেশের লক্ষাধিক হজযাত্রী। সউদী সরকার চলতি বছর থেকে হজ ভিসা ইস্যুতে হজযাত্রীদের দু’হাতের ১০ আঙুলের ফিঙ্গার নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে। গত এপ্রিল মাসে ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি ধর্ম মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার পরও অদ্যাবধি তা সুরাহা হয়নি। সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম সম্পর্কে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ধীরগতি পথ চলার কারণে হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন হাব নেতৃবৃন্দ। আগামী ৩ আগস্ট আশকোনাস্থ হাজী ক্যাম্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিকভাবে হজ কার্যক্রম (২০১৬) উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে আগামী ৪ আগস্ট বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রথম হজ ফ্লাইট ও ৫ আগস্ট সউদিয়া এয়ারলাইন্সের প্রথম হজ ফ্লাইট আরো এক সপ্তাহ পিছিয়ে যেতে পারে। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নির্দেশে গত সপ্তাহে হজ ব্যবস্থাপনার সার্বিক কার্যক্রম তদারকি ও দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটিকে সরকারি অব্যবহৃত ৪ হাজার ৮শ’ হজযাত্রীর কোটা সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির মধ্যে বণ্টনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কিন্তু উল্লেখিত হজযাত্রীর কোটা বণ্টন নিয়ে নানা টালবাহানার কারণে বাংলাদেশের চূড়ান্ত হজযাত্রীর সংখ্যা অদ্যাবধি সউদী হজ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা সম্ভব হয়নি। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। হজযাত্রী কোটা বণ্টনের কাজ কবে নাগাদ সম্পন্ন হবে তা কেউ বলতে পারছে না। এদিকে, চূড়ান্ত হজযাত্রীর সংখ্যা সউদী আরবে না পৌঁছায় মক্কায় অপেক্ষমাণ হজ এজেন্সির মুনাজ্জেমরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এতে সউদী ওজারাতুল হজ-এ হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারছে না হজ এজেন্সির মালিক প্রতিনিধিরা। মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা আইবিএএন-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে সউদী আরবে নেয়া সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে গতকাল রোববার মক্কার স্থানীয় সময় বাদ এশা বাংলাদেশ হজ মিশনে অপেক্ষমাণ হজ এজেন্সির মালিকদের নিয়ে কাউন্সেলর হজ মো: মাকসুদুর রহমানের বৈঠক করার কথা। মক্কা থেকে হাবের একজন ইসি সদস্য এ বিষয়টি জানিয়েছেন। হজ এজেন্সির মালিকরা মক্কা-মদিনায় নিজেদের পছন্দের বাড়ি নির্বাচন করলেও বাড়ির চুক্তি করতে বিলম্ব হওয়ায় স্ব-স্ব হজযাত্রীদের ফ্লাইটের দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে পারছে না। হজযাত্রীরাও তাদের হজ ফ্লাইটের তারিখ ও সময় জানার জন্য হজ এজেন্সিগুলোতে ধরনা দিয়ে চরম হতাশায় ভুগছেন।
মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা আইবিএএন-এর মাধ্যমে প্রেরণের প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ায় সউদী মালিকদের সাথে বাড়ি ভাড়ার চুক্তি সম্পন্ন করতে পারছে না এজেন্সির মুনাজ্জেমরা। মক্কা থেকে হাবের একজন ইসি সদস্য গতকাল রোববার টেলিফোনে এ তথ্য জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাবের ঐ ইসি সদস্য বলেন, সউদী-ই-হজ সিস্টেম অনুযায়ী আইবিএএন-এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা সউদী আনা শুরু না হওয়ায় একজন বাড়ির মালিকের সাথে চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে হজ ব্যবস্থাপনার কার্যক্রম ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর হজ মৌসুমে জেদ্দায় হজ টার্মিনালে হজযাত্রীরা পৌঁছলে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ৬-৭ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এতে অনেক বয়োবৃদ্ধ হজযাত্রী ইমিগ্রেশনের বিড়ম্বনার শিকার হয়ে ফ্লোরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসব বিড়ম্বনা লাঘবে সউদী কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের ১০ আঙুলের ফিঙ্গার নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। হজযাত্রীদের ১০ আঙুলের ফিঙ্গার ইস্যু নিয়ে সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দরকষাকষি চলছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে হজ অফিসের পরিচালক হজ (উপ-সচিব) ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে ৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল গত ১৪ জুলাই ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে এক বৈঠকে হজযাত্রীদের ১০ আঙুলের ফিঙ্গারের পরিবর্তে ৪ আঙুলের ফিঙ্গার নিয়ে চলতি বছর হজ ভিসা ইস্যুর প্রস্তাব দেয়া হয়। কারণ স্বল্প সময়ে ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হজযাত্রীর ১০ আঙুলের ফিঙ্গার দেয়া সম্ভব নয়। পাসপোর্ট অধিদপ্তরে প্রত্যেক হজযাত্রীর ৪ আঙুলের ফিঙ্গার জমা রয়েছে। এ ৪ আঙুলের ফিঙ্গার নিয়ে হজযাত্রীদের ভিসা ইস্যুর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে অনুরোধ জানানো হয়। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের ৪ আঙুলের ফিঙ্গার নেয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। উল্লেখিত বৈঠকে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের দু’জন কর্মকর্তা, এনআইডির দু’জন কর্মকর্তা এবং ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়োগকৃত আইটি বিজনেস অটোমেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদুল হাসান মিতুল উপস্থিত ছিলেন। দূতাবাস কর্তৃপক্ষ হজযাত্রীদের ৪ আঙুলের ফিঙ্গার নেয়ার প্রস্তাব বিবেচনার জন্য সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের আশ্বাস দেন। সউদী দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, হজযাত্রীদের ১০ আঙুলের পরিবর্তে ৪ আঙুলের ফিঙ্গার নেয়ার প্রস্তাব সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে অদ্যাবধি তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। হজ অফিসের পরিচালক হজ ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ ৪ আঙুলের ফিঙ্গার নেয়ার আমাদের প্রস্তাবে প্রাথমিক পর্যায়ে একমত পোষণ করলেও সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত দিকনিদের্শনা পেলেই আমাদের অবহিত করবে। এক প্রশ্নের জবাবে পরিচালক হজ বলেন, ৪ আঙুলের ফিঙ্গারের বিষয়টি অনুমোদিত হলে জেদ্দা হজ টার্মিনালে আমাদের হজযাত্রীদের ইমিগ্রেশনের জন্য আর ৮-৯ ঘণ্টা বসে থাকতে হবে না। হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, ১০ আঙুলের ফিঙ্গার নিয়ে জটিলতার বিষয়টি শিগগিরই সুরাহা হবে। আগামী ২-১ দিনের মধ্যে সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশী হজযাত্রীদের ৪ আঙুলের ফিঙ্গার নেয়ার অনুমতি আসতে পারে বলে হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। হাবের মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহকে এ বিষয়ে রাতে একাধিকবার টেলিফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ১২ সেপ্টেম্বর পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবার কথা। প্রথম হজ ফ্লাইট শুরুর আর মাত্র ১৮ দিন বাকি। আইবিএএন-এর মাধ্যমে মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা সউদী আরবে প্রেরণে জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ি ভাড়ার চুক্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। সউদী-ই-হজ সিস্টেম অনুযায়ী মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা আইবিএএন-এর মাধ্যমে সউদীস্থ রিয়াদ ব্যাংকের অনুকূলে পাঠাতে হবে। গত ১৬ জুলাই ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব (হজ-২) মো: শহীদুল্লাহ তালুকদার এক বিজ্ঞপ্তিতে আইবিএএন-এ বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা জমা করার তাগিদ দেন। বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে প্রয়োজনে স্ব-স্ব মুনাজ্জেমকে মক্কাস্থ কাউন্সেলর হজ মো: মাকসুদুর রহমানের পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ জানানো হলেও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আইবিএএন-এর মাধ্যমে বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা সউদীতে প্রেরণের কোনো সার্কুলার জারির উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সিগুলো সউদীতে আইবিএএন-এ বাড়ি ভাড়ার টাকা পাঠানোর জন্য বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ধরনা দিয়ে চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। গতকাল একাধিক হজ এজেন্সির স্বত্বাধিকারী এ অভিযোগ তোলেন। হজ এজেন্সির স্বত্বাধিকারীরা সউদী নিদের্শনা অনুযায়ী আইবিএএন-এর মাধ্যমে বাড়ি ভাড়ার ৩০ শতাংশ টাকা সউদী আরবে পাঠাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে গেলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে কোনো সার্কুলার অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। মক্কায় অবস্থানরত দু’শতাধিক হজ এজেন্সির মুনাজ্জেমরা সউদী বাড়ীর মালিকদের সাথে ভাড়ার চুক্তি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন। এতে আগামী ৪ আগস্ট বিমানের প্রথম হজ ফ্লাইট ও ৫ আগস্ট সউদিয়া এয়ারলাইন্সের হজ ফ্লাইট এক সপ্তাহ পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। হাবের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন