করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশে ভয়াল পরিস্থিতি বিরাজ করলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিকিৎসকদের পাশে নেই বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা ও হেয়ালীপনার কারনে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। সরকার রোগটি প্রতিরোধের যথেষ্ট সময় পেলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো দিনমজুর-কর্মহীন অসহায় মানুষ খাদ্যের জন্য আর চিকিৎসক, নার্সরা চিকিৎসা সরঞ্জামের জন্য হাহাকার করছে। কিন্তু কই মন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন নেতাদেও তো জনগণের পাশে দাঁড়াতে দেখছি না। স্বাস্থমন্ত্রীকে তো কোন হাসপাতাল পরিদর্শনে যেতে দেখিনি। বরং ত্রাণের চাল চুরির মহৌৎসবে ক্ষমতাসীন নেতাকর্মীদের বাড়ীতে চালের খনির পর এখন তেলের খনির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, বিশ্বের ভয়াবহ সংক্রমিত দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু দ্বিগুণ হয়েছে ১৫-২০ দিনে। আর বাংলাদেশে তা হচ্ছে মাত্র ৪ দিনে। করোনা প্রতিরোধে মেডিক্যাল সরঞ্জামের বিষয়ে কেউ যেন কথা বলতে না পারে সেজন্য সরকার কঠোর পরিপত্র জারি করেছে। সরকার তাদের ব্যর্থতা ধামাচাপা দেয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র দিয়ে দমনের নীতিকেই কার্যকর করছে। বাংলাদেশের পরিস্থিতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা এখন পর্যন্ত কেউ অনুধাবন করতে পারছে না। সরকার নিয়ন্ত্রণ আর হুমকির মুখে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে স্বেচ্ছাচারিতা অব্যাহত রেখেছে।
সময়ের সাথে সাথে বিএনপির প্রস্তাবের গুরুত্ব বাড়ছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ক’দিন আগে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশে ‘চিকিৎসা জরুরী অবস্থা অর্থাৎ মেডিক্যাল ইমার্জেন্সী’ ঘোষণা, ডাক্তারসহ স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের কাজকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা এবং বিশেষ বোনাস প্রদান, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পর্যাপ্ত সংখ্যক সেফটি মেডিক্যাল কিট্স অর্থাৎ পিপিই সরবরাহ করে দেশের প্রতিটি উপজেলায় করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রবীণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকদের চিকিৎসা সেবায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, কৃষি শ্রমিক, গার্মেন্টস ও শিল্প কারখানার শ্রমিক এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে আর্থিক সহায়তার উদ্দেশে দ্রুততার সঙ্গে পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন। তখন সরকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দেয়া প্রতিটি প্রস্তাবনার গুরুত্ব ও বাস্তবতা ততই প্রতিভাত হয়ে উঠছে।
বিএনপির কোন প্রস্তাবনাটি অযৌক্তিক কিংবা অন্যায্য প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, বিএনপি শুধু প্রস্তাবনা দিয়েই বসে থাকেনি, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সারাদেশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী সমর্থক ছাড়াও জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এবং ড্যাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে আমাদের দলের নেতাকর্মী সমর্থকরা দুস্থ ও গরীব মানুষদের খাদ্য সহায়তা, মেডিকেলের ডাক্তার ও নার্সদের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহ করা হচ্ছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিনিয়ত মাঠে থেকে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে।
ত্রান নিয়ে ভয়ংকর দলীয়করণ ও লুটপাট চলছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সারাদেশে ত্রাণ কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহায়তা দিতে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ত্রাণ কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীনরা। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আওয়ামী লীগ ত্রাণের তালিকা করবে। এটি স্থানীয় প্রশাসনকে দেবে। স্থানীয় প্রশাসন তালিকাটি যাচাই-বাছাই করবে।’ তার মানে এই তালিকায় কেবল আওয়ামীলীগ করা লোকজনের ঠাঁই হবে। ত্রাণ পাবে তারাই। ত্রাণ কার্যক্রমে এই দলীয় কমিটির কারণে চাল চুরি আরো বৃদ্ধি পাবে। দলীয় তালিকা করে দলের লোকজন খাবে আর অন্যরা না খেয়ে মরবে। এটা হলে দুর্ভিক্ষ আরো তরান্বিত হবে।
সময় পেয়েও সরকার কিছু করতে পারেনি মন্তব্য করে রিজভী বলেন, দেশে করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার দেড় মাস পরেও রোগীদের চিকিৎসায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়নি। বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিবর্তে নির্বাচন করা হয়েছে আউটডোর ক্লিনিক। সেখানে অক্সিজেনের সুবিধা পর্যন্ত নেই, নেই অপারেশন থিয়েটার। করোনার রোগীদের চিকিৎসার জন্য আইসিইউতে ভেন্টিলেটর মেশিন ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইনের সুবিধাসহ পৃথক হাসপাতাল স্থাপন করতে পারেনি। চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ না করায় বাড়ছে রোগীদের দুর্ভোগ ও মৃত্যুহার। সারা বাংলাদেশে করোনার কোন চিকিৎসা হচ্ছে না, চারিদিকে মানুষের কেবলই আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন