রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

কাশ্মীরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ দাবি

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারত-শাসিত কাশ্মীরে গত দশদিন ধরে টানা অস্থিরতা ও সহিংসতার মধ্যে কাশ্মীর বিতর্কে একটা নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রবীণ স্বাধীনতাকামী নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে খোলা চিঠি লিখে তিনি কাশ্মীরে তাদের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন এবং বলেছেন কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার নিশ্চিত করতেই এটা দরকার।
হুরিয়তের এই নেতা একই ধরনের চিঠি লিখেছেন ইইউ, সার্ক, আসিয়ানের মতো জোটকে এবং বেইজিং ও তেহরানকেও।
তবে ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কাশ্মীর ইস্যুর আন্তর্জাতিকরণের এই চেষ্টা এখন সফল হওয়া কঠিন এবং কাশ্মীরে গণভোটের দাবিও ভারত কোনও মতেই মানবে না। কাশ্মীরে চলমান অস্থিরতায় প্রতিবারের মতো এবারেও আজাদী বা স্বাধীনতার সেøাগান উঠছে অহরহ, সঙ্গে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি।
তবে বিগত প্রায় সত্তর বছর ধরে ভারতের বক্তব্য কাশ্মীর বিতর্কের সমাধান করতে হবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক স্তরে তৃতীয় কোনও পক্ষ, এমন কি কাশ্মীরের মানুষের কোনও ভূমিকাও দিল্লি সেখানে মানতে প্রস্তুত নয়। আজও সেই বক্তব্য থেকে দিল্লি এক চুলও নড়তে রাজি নয়, কিন্তু সৈয়দ আলি শাহ গিলানির মতো হুরিয়ত নেতারা এখন সরাসরি বলছেন কাশ্মীরের এই লড়াই তাদের স্বাধীনতা অর্জনের লড়াই।
নিহত জঙ্গি বুরহান ওয়ানিকে নির্ভীক ও সাহসী যোদ্ধা বলে উল্লেখ করে জনাব গিলানি বলেছেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী যাই বলুন- বুরহান কিছুতেই দেশদ্রোহী নয়, বরং কাশ্মীরের অধিকার অর্জনে এক নিবেদিত সেনা- যে আরও প্রায় ছয়শ’ কাশ্মীরি শহীদের মতো দেশের আজাদীর জন্য প্রাণ দিয়েছে।”
আর কাশ্মীর যাতে সেই আজাদী পায়, সে জন্যই জনাব গিলানি এখন সরাসরি সাহায্য চেয়েছেন জাতিসংঘ ও বিশ্বের প্রায় সব প্রভাবশালী শক্তির কাছে।
অনুরোধ জানিয়েছেন, কাশ্মীর থেকে ভারতীয় সেনাকে সরাতে আর কাশ্মীরীদের নিজেদের ভবিষ্যৎ স্থির করার অধিকার দিতে জাতিসংঘ আর এই সব শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে।
তবে কাশ্মীর-বিশেষজ্ঞ ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক অধ্যাপক অশ্বিনী রায় মনে করছেন এই আবেদনে এখন সাড়া মেলাটা মুশকিল।
তিনি বলছেন, “আন্তর্জাতিক বিশ্ব এখন ইসলামিক স্টেটের বিপদ নিয়ে এতটাই ভাবিত যে তাদের কাশ্মীর নিয়ে খুব একটা এখন উৎসাহ দেখা যাবে বলে মনে হয় না। কাশ্মীরের জঙ্গিবাদ যত বেশি ইসলামি চেহারা নেবে ততই কিন্তু পাকিস্তানের পশ্চিমী মিত্ররা কাশ্মীর প্রশ্নে বেশি সাবধান হয়ে পড়বে।”
তবে কাশ্মীরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের কথা বলে সৈয়দ আলি শাহ গিলানি নতুন করে জিইয়ে তুলেছেন কাশ্মীরে গণভোটের পুরনো দাবিকেও ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাব যাকে সমর্থন করেছিল।
ভারত কিন্তু পরে সেই গণভোটের অঙ্গীকার থেকে সরে আসে এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে দিল্লি কিছুতেই কাশ্মীরে গণভোট মানবে না বলেই ড. রায়ের ধারণা।
তিনি বলছেন, “১৯৯১ অবধি যখন শীতল যুদ্ধ চলেছে, তখন সোভিয়েতের সমর্থন নিয়ে ভারত সেই গণভোটের দাবিকে ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছে। তারপরেও বিশ্ব পরিস্থিতি ভারতের অনুকূলে ছিল, ফলে সেই দাবি না-মেনেও ভারত পার পেয়ে গেছে।”
‘এখন কাশ্মীরে গণভোট যদি সত্যিই হয়, তার ফলাফল কী হবে এটা মোটামুটি সবারই জানা, তাই আমি নিশ্চিত ভারত কিছুতেই কাশ্মীরে গণভোটে রাজি হবে না। আর শুধু একা চীনের সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানও এ ব্যাপারে খুব বেশি চাপ দিতে পারবে বলে মনে হয় না,” বলেছেন অধ্যাপক রায়।
ভারত সরকার বিশ্বাস করে আন্তর্জাতিক রাডার থেকে কাশ্মীর এখন অনেকটাই হারিয়ে গেছে এবং তারা অন্তত কাশ্মীরে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে পারবে। কিন্তু উপত্যকায় এখন যেভাবে ভারত-বিরোধী বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠেছে, তাতে হুরিয়ত নেতারা এখন একটা মরিয়া চেষ্টা করতে চাইছেন, যাতে আবার কাশ্মীরের দিকে আন্তর্জাতিক বিশ্বের মনোযোগ ফেরানো যায়। সূত্র : বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন