সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাজে ধর্মীয় জমায়েতে যোগ দেওয়া তাবলিগ জামাত সদস্যদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর 'মুসলমানরাই করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে'- এমন গুজব ছড়িয়েছে পুরো ভারতজুড়ে। অনেকে তো ভারতে করোনা ছড়ানোর জন্য সরাসরি তাবলিগ জামাতকে দায়ি করছেন। ঘটছে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা। এমন পরিস্থিতিতে প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় রক্ত নিয়ে এগিয়ে এসেছে সেই তাবলিগ জামাতের সদস্যরাই। তাবলিগ সদস্যদের রক্তেই হবে তামিলনাড়ুতে করোনা রোগীদের চিকিৎসা।
তাবলিগ জামায়াতের অংশগ্রহণকারী যেসব সদস্যরা করোনা থেকে সফলভাবে সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং এখন নভেল করোনাভাইরাস পরীক্ষায় নেতিবাচক হয়েছেন তারা এগিয়ে এসেছেন কভিড-১৯ রোগীদের প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসায়। নিজেদের শরীরের রক্ত দিয়ে তারা এবার করোনা রোগীদের প্রাণ বাঁচাবেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তাবলিগের সদস্যদের রক্ত নিয়ে এগিয়ে আসার মূল কারণ তারা গুরুতর অসুস্থ অবস্থা থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন। আবার তাদের বিরুদ্ধে করোনা ছড়ানোর যে অভিযোগ রয়েছে সেটা থেকে মুক্তি পাওয়া।
তিরপুরের আটত্রিশ বছরের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আব্বাসকে রবিবার কোয়েম্বাতুরের ইএসআই হাসপাতাল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল। আব্বাস বলেন, 'আমার অব্যাহতি পাওয়ার সাথে সাথে আমি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে হাসপাতালের ডিনের সাথে দেখা করেছিলাম এবং তাদের বলেছিলাম যে আমার প্লাজমা দানের প্রয়োজন হলে তারা যে কোনো সময় আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।'
তিনি আরো বলেন, 'আমাকে ছাড়ার পর একদিনই হয়েছে তবে আমি এরই মধ্যে অন্যদের (জামায়াত থেকে) সাথে কথা বলেছি যারা সুস্থ হয়ে উঠেছে এবং তারা সবাই রক্ত দানের জন্য প্রস্তুত আছে।
তাবলিগ প্রধান মাওলানা সাদ এক বিবৃতির মাধ্যমে 'প্লাজমা থেরাপি' এর জন্য রক্ত দিতে অনুসারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মাওলানা সাদ বলেছেন, তাবলিগের যাদের মধ্যে কোভিড পজিটিভ পাওয়া গেছে তাদের অনেকেই চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সুতরাং তারা যদি এখন রক্তের প্লাজমা দান করেন তা হলে অনেক করোনা আক্রান্ত রোগীর নিরাময়ে সুবিধা হবে।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মহামারিতে গোটা বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, তখন ভারতের রাজধানী দিল্লির একটি হাসপাতাল 'প্লাজমা থেরাপি' চিকিৎসায় কাক্সিক্ষত সাফল্য পেয়েছে। দক্ষিণ দিল্লির ম্যাক্স সাকেত হাসপাতালে এক করোনা রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যায়। তখন তার দেহে 'প্লাজমা থেরাপি' প্রয়োগ করা হয়। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, প্লাজমা থেরাপির পরপরই রোগীর অবস্থার উন্নতি হয় এবং চিকিৎসার চতুর্থ দিন তার ভেন্টিলেটর সরিয়ে নেয়া হয়।
করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় আশা জাগাচ্ছে প্লাজমা থেরাপি। প্লাজমা থেরাপি হচ্ছে একটি প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। যেখানে করোনা থেকে সেরে ওঠা মানুষের রক্ত থেকে প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত রোগীর শরীরে প্রয়োগ করা হবে। এরপর তার শরীরে এন্টিবডি কাজ করলে তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। সূত্র- ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন