শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সোনালী আঁশের ফলনে খুশী চাষিরা পদক্ষেপ নেই স্বপ্ন পুরণে

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : আর ক’দিন পরই মাঠ থেকে সোনালী আঁশ কাটা শুরু হবে। পাট পচানোর পানির অভাব নেই। এবার পর্যাপ্ত রোদ ও বৃষ্টি হওয়ার কারণে পাটের ফলন খুবই ভালো হয়েছে। খরচও হয়েছে তুলনামূলক কম। এতে তারা খুশী। কিন্তু পাটের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তির দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ছে না। তাদের কথা ‘আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পাট উৎপাদন করি। প্রতিবারই এক বুক আশা নিয়ে বাজারে তুলি পাট। কিন্তু সরকারি বাজার তদারকির অভাবে কষ্টের ফল ভোগ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা’। এবার যেন তা না হয়-এই দাবি করেছেন পাট চাষিরা সরকারের কাছে।
সোমবার যশোরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা প্রশাসনের কাছে জাতীয় কৃষক সংগ্রাম সমিতি স্মারকলিপি দিয়ে পাটের সর্বনি¤œ মূল্য ৩ হাজার টাকা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, দেশের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকারী ফসল পাট চাষে কৃষকের উৎপাদন খরচ উঠে না। একইসঙ্গে বন্যা-জলাবদ্ধ এলাকায় ফসলের বীজ সরবরাহ, কৃষি ঋণ মওকুফ, নতুন করে সুদমুক্ত কৃষি ঋণ ও কৃষককে ভর্তুকি প্রদান এবং খাস জমি ভূমিহীন-গরিবদের মাঝে বন্টনের দাবি জানানো হয়েছে। বিশেষ করে চলতি পাট মৌসুমে সরকারকে দৃষ্টি দিতে হবে যাতে চাষিরা উপযুক্ত মূল্য পান, কোনরুপ ফড়িয়া দালালদের খপ্পরে পড়ে চাষিদের নাস্তানাবুদ হতে না হয়।
পাটচাষিদের কথা, জমি চাষ, বীজ, পরিচর্যা, কাটা, পচানো, আঁশ ছড়ানো, শুকানো ও বিক্রির জন্য পরিবহনসহ যেসব খরচ হয় তা সাধারণত ওঠে না। কোনবার লাভ হয় আবার কোনবার লোকশানের পাল্লা হয় ভারি। তবে সংশ্লিষ্টরা আশ্বস্ত করেছেন এবার লোকশান হবে না, তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষক মহল থেকে, জরুরি ভিত্তিতে বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ৮ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ হয়েছে। কয়েকবছরের মধ্যে এবার গ্রোথ অত্যন্ত ভালো হওয়ার কারণ পাটের জন্য উপযোগী রোদ ও বৃষ্টি হয়েছে।
মাঠপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, চাষিরা পাট আবাদ ও উৎপাদনে যেভাবে ঝুঁকেছে তাতে সোনালী আঁশের স্বর্ণযুগ ফেরার হাতছানি দিচ্ছে। চাষিরা জানান, গতবার আশাতীত ফলনে তাদের মুখে হাসি ফোটে কিন্তু বাজারে পাট উঠালেই হাসি ম্লান হয়ে যায়। উৎপাদন খরচ উঠাতে পারেননি অনেক চাষি। এবার যাতে তেমনটি না হয় সেই প্রত্যাশা চাষিদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাটের বাজার তোলার সময়ে তদারকির অভাবে মুনাফালোভী ফড়িয়া, দালাল ও আড়তদারদের দাপট অপ্রতিরোধ্য গতিতে বেড়ে যায়। এসব ব্যাপারে নজরদারি না বাড়ানোর কারণেই আশাতীত ফলন হওয়ার পরও চাষীদের লোকসান গুনতে হয়। কৃষি বিশেষজ্ঞ, অর্থনীতিবিদগণ ও চাষিসহ সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, বিরাট সম্ভাবনাময় ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম কৃষির এই খাতটির দিকে সামগ্রিকভাবে নজর দেয়া জরুরি। বাজার বিশৃঙ্খলা মোটেও দূর হয়নি। অতীতের মতো নানা অজুহাতে সহজ সরল নিরীহ চাষিকে রীতিমতো প্রতারিত করা হয়। কথা দেওয়া হয় বাজার বিশৃঙ্খলা দূর করা হবে। কিন্তু হয় না। কোথায় এর গলদ তা খুঁজে বের করাও জরুরি। সুষ্ঠু বাজার ব্যবস্থাপনার অভাব ও নানামুখী বিশৃঙ্খলার কারণেই পাটের বাজারে মুনাফালোভীদের বরাবরই দাপট চলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ও প্রাইভেট মিলে বর্তমানে ১শ’ ৮২টি জুট মিল চালু রয়েছে। জুট মিলের উৎপাদিত চট, সুতা, কার্পেট ও বস্তা রফতানী করে আয় হয় বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা। সংশ্লিষ্টদের কথা, সরকার সোনালী আঁশের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে এটি ঠিক কিন্তু পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণেই চাষিদেও সোনালী স্বপ্ন পুরণ হচ্ছে না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন