রোববার, ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

‘এতক্ষণে অরিন্দম কহিলা বিষাদে’

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : প্রতিবেশী দেশে ভারতের টেলিভিশন সিরিয়াল দেখে দেখে আমাদের তরুণ-তরুণীদের মানসিক অবক্ষয় হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি বলেন, যে সন্তান তার মাকে নিজের ঘরে নির্যাতিত হতে দেখে, সেই সন্তান কী মূল্যবোধ শিখবে? কিংবা যে সন্তান দেখেছে তার বাবার আয় ৪০ হাজার টাকা অথচ খরচ করছে এক লাখ টাকা, তাদের মনে কী প্রশ্ন জাগে না যে বাড়তি টাকা কোথা থেকে আসে? তারা কী মূল্যবোধ শিখবে? গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করে ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) এবং জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট (এনএফটিই)। এ সময় আরও বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আজিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হক, আইএইচডি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নজরুল ইসলাম খান প্রমুখ।
শিক্ষাবিদ রাদেশা কে চৌধুরী গণসাক্ষরতা অভিযান নামক এনজিওর নির্বাহী সম্পাদক। নারীর শিক্ষা এবং নারীর অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন। প্রগতিশীলতা, আধুনিকতার নামে শিক্ষার্থীদের মডার্ন হওয়ার উপদেশ দেন সব সময়। শিক্ষার্থীদের সভ্যতা, ভব্যতা, পর্দা, আদব-কায়দা, শালীনতা, পর্দা ইত্যাদির ঘোরবিরোধী তিনি। এ ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতি আগ্রাসনের ব্যাপারে সব সময় ছিলেন নিশ্চুপ। বরং আকাশ সংস্কৃতির নামে ভারতীয় হিন্দুয়ানি
কালচার বাংলাদেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। নারীদের পর্দা-হেজাব ইত্যাদির বিরুদ্ধে সব সময় ছিলেন সোচ্ছার। গত বছর হলিক্রস স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় সৃজনশীল প্রশ্নপত্রে মেয়েদের পর্দা, রুচিশীল পোশাক পরিধানে উৎসাহিত করতে একটি প্রশ্ন করা হয়। ওই প্রশ্নের পর কলেজ কর্তৃপক্ষকে ক্ষমা চাইতে হয়। রাশেদা কে চৌধুরীসহ কয়েকজন শিক্ষাবিদ ছাত্রীদের রুচিশীল পরিধান-সংক্রান্ত প্রশ্নের প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, মেয়েদের আঁটোসাঁটো পোশাক পড়তে নিরুৎসাহিত করলে তাদের কচি মন কষ্ট পায়। সব সময় হিন্দুয়ানি কালচার প্রচার করা কোলকাতার টিভিগুলোর সম্প্রচারের পক্ষ্যে সাফাই গেছেন রাশেদা কে চৌধুরীসহ কিছু বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মী। ইনকিলাবসহ যেসব মিডিয়া কোলকাতা থেকে প্রচারিত স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি বাংলার সিরিয়ালে বাংলাদেশের দর্শকদের চরিত্র নষ্ট করছে অভিযোগ তুলেছে তখন তারা মোল্লাবাদ, মৌলভিদের এসব অপপ্রচার ইত্যাদি অপবাদ দিয়েছেন। জঙ্গি হামলার দায় সব সময় মাদ্রাসা শিক্ষার ওপর চাপিয়ে দিয়ে তথাকথিত প্রগতিশীল শিক্ষার পক্ষে ঢোল বাজিয়েছেন। এখন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জঙ্গি হওয়ার ঘটনায় তিনি স্বীকার করছেন নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং ভারতীয় চ্যানেলগুলো অপসংস্কৃতির কারণে আমাদের তরুণ-তরুণীদের মনোজগৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি অনুধাবন করে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী সম্পাদক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গিবাদ নামক অসুর। তিনি প্রশ্ন রাখেন, ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল ও রাজনৈতিক কাদা ছোড়াছুড়ি দেখে দেখে তরুণরা যে বিপথগামী হচ্ছে না সেটা কে বলবে? এমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে তরুণরা কী মূল্যবোধ শিখবে? তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশের টেলিভিশন ও সিরিয়াল দেখে দেখে আমাদের তরুণ-তরুণীদের মানসিক অবক্ষয় হচ্ছে। তার মতে, আমাদের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিতে দিতে পরীক্ষার্থীতে পরিণত হয়েছে। তাদের পেছনে একটার পর একটা পরীক্ষা লেগেই থাকে। শিক্ষার্থীরা মুক্তচিন্তা ও বিনোদনের কোনো সুযোগ পায় না। অথচ ব্রিটেনে ১৬ বছর বয়সের আগে শিক্ষার্থীদের কোনো পাবলিক পরীক্ষা দিতে হয় না।
রাশেদা কে. চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসবাদ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। উন্নত দেশগুলোতে সন্ত্রাসীদের ধরে বিচারের আওতায় আনা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে সন্ত্রাসীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর এক ধরনের ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়। এখন পর্যন্ত একজন সন্ত্রাসীর বিচার হয়েছে কি? সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পর ধূ¤্রজাল সৃষ্টি না করে তাদের বিচার করুন। তাহলে জনগণের মধ্যে স্বস্তি আসবে, ভরসা করতে শিখবে। বাংলাদেশে কখনো জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, আশার কথা হলো বিপথগামী তরুণের সংখ্যা খুবই কম। আরেকটি আশার কথা হচ্ছে, আমাদের এই বিশাল জনগোষ্ঠী ধর্মভীরু কিন্তু ধর্মান্ধ নয়। এরাই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন