শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

দেশে প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে চুক্তি

প্রকাশের সময় : ১৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ভূমিতে আরও চারটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার -নসরুল হামিদ
বিশেষ সংবাদদাতা : তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের প্রথম টার্মিনাল স্থাপনের চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এই চুক্তি ১৫ বছর বলবৎ থাকবে। এ ধরনের একটি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার প্রায় ৭ বছর পর বাংলাদেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করল সরকার।
গতকাল (সোমবার) পেট্রোসেন্টারের অডিটরিয়ামে পেট্রোবাংলা ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি লিমিটেডের মধ্যে এই চুক্তি সই হয়।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী, প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, জ্বালানি সচিব নাজিম উদ্দিন চৌধুরী, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ, মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকেট উপস্থিত ছিলেন।
পেট্রোবাংলার পক্ষে সংস্থাটির সচিব সৈয়দ আশফাকুজ্জামান এবং এক্সিলারেটের চিফ ডেভেলপমেন্ট অফিসার ডেনিয়াল বুসটস নিজ নিজ কোম্পানির পক্ষে চুক্তিতে সাক্ষর করেন। শর্ত অনুযায়ী, চুক্তি সইয়ের পরবর্তী ১৮ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা ও টার্মিনালের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ শুরু করতে হবে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর ফেব্রুয়ারিতে সই করা টার্মশিট অনুযায়ী ৯ মাসের মধ্যে সমীক্ষা ও টার্মিনালের নকশা প্রণয়ন করা হবে। মূল টার্মিনাল নির্মাণে আরো ১৬ মাস লাগবে। আর ২০১৭ সালের মধ্যে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হবে।
কাতার থেকে আমদানি করা এলএনজি এই টার্মিনালের মাধ্যমে পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর করে পাইপ লাইনের মাধ্যমে বিতরণের জন্য পেট্রোবাংলার অঙ্গ প্রতিষ্ঠান গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) মহেশখালী থেকে চট্রগ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৮৬ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করছে। আগস্ট মাসের মধ্যে এই কাজ শেষ হবে বলে জিটিসিএল সূত্র জানায়।
প্রতিদিন ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ (বছরে প্রায় ৪০ লাখ মেট্রিক টন) এলএনজি আমদানির জন্য ২০১১ সালের জানুয়ারিতে কাতার সরকারের সঙ্গে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম কমে যাওয়ায় এলএনজি রপ্তানির ব্যাপারে কাতারসহ অনেক দেশই আগ্রহী। ২০১০ সালে যখন এলএনজি আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয় তখন বিশ্ববাজারে প্রতি ইউনিট (এক হাজার ঘনফুট) গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজির দাম ছিল প্রায় ১৪ মার্কিন ডলার। এখন তা কমে সাত-আট ডলারে দাঁড়িয়েছে।
প্রসঙ্গত, এই এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্রসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া এগুলেও কাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। পরবর্তীকালে বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ বিশেষ আইনে দরপত্রের সর্বনিম্ন দরদাতা এক্সিলারেট এনার্জি পার্টনারশিপকে কাজটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। দরপত্রে প্রতি ইউনিট এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য দশমিক ৩৬ ডলার দাম দর প্রস্তাব করা হয়। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় এর দর বাড়িয়ে করা হয়েছে দশমিক ৪৭ ডলার।
এই টার্মিনালটির ধারণক্ষমতা হবে দুই লাখ ৩৮ হাজার ঘনমিটার। দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সমপরিমাণ এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর বা রি-গ্যাসিফিকেশনের জন্য দুই লাখ ৩৮ হাজার ডলার খরচ পড়বে। এর মধ্যে স্থায়ী ব্যয় দৈনিক ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৯ হাজার ১৮৬ ডলার, পরিচালনা ব্যয় ৪৫ হাজার ৮১৪ ডলার এবং অন্যান্য ব্যয় ৩২ হাজার ডলার।
পেট্রোবাংলার হিসাবে বাংলাদেশে দৈনিক প্রায় ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। তবে উৎপাদনের তুলনায় দেশে গ্যাসের চাহিদা অনেক বেশি।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, শিল্প ও বিদ্যুৎ উন্নয়নে আমাদের যে লক্ষ্য তাতে আরও ৩৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট নতুন গ্যাস লাগবে। এ লক্ষ্য পূরণ করতে গ্যাস অনুসন্ধান চলছে, পাশাপাশি আমদানি করারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ভাসমান এই টার্মিনাল ছাড়াও ভূমিতে আরও চারটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এছাড়া একাধিক ভাসমান টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব সরকারের কাছে রয়েছে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণে এক্সিলারেট এনার্জি প্রায় ৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে, যা বাংলাদেশে শেভরনের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন