বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

লকডাউন ছাড়াই যে ভাবে চলছে সুইডেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ৪:২৯ পিএম

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ইউরোপের অধিকাংশ দেশেই কোনো না কোনো মাত্রার লকডাউন আরোপ করা হলেও সুইডেনে অধিকাংশ নাগরিকই অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারছেন। সুইডেনের এই কৌশল অবলম্বন করার পেছনে দেশটির নাগরিকদের সমর্থন ছিল।

দেশটির বিজ্ঞানীরা এই কৌশলের প্রবর্তক এবং সরকার এটিকে সমর্থন করেছে। কিন্তু সুইডেনের সব ভাইরোলজিস্ট এখনও এই কৌশল নিয়ে পুরোপুরি আশ্বস্ত নন। এখানে কোনো লকডাউন নেই। সুইডেনের বিভিন্ন পানশালায় মানুষের ছবি থেকে শুরু করে আইসক্রিমের দোকানের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইনের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার হয়েছে।

তবে সেসব ছবির ভিত্তিতে এখানে জীবন ‘স্বাভাবিকভাবে’ চলছে মনে করলে কিন্তু ভুল ধারণা করা হবে। সুইডেনে হয়তো লকডাউনের পরিধি খুব সামান্য, কিন্তু সেখানকার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে জনসংখ্যার সিংহভাগই স্বেচ্ছায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলছেন, যেটিকে মনে করা হচ্ছে সুইডেনের ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের প্রধান অনুষঙ্গ।

গণপরিবহন ব্যবহারের হার যথেষ্ট পরিমাণে কমেছে, জনসংখ্যার একটা বড় অংশ ঘরে থেকে কাজ করছেন এবং অধিকাংশই ইস্টারের ছুটিতে কোথাও ভ্রমণ করেননি। সুইডেনের সরকার ৫০ জনের বেশি মানুষ একসাথে জমায়েত হওয়া এবং বৃদ্ধনিবাসে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। নোভাস নামের একটি জরিপ পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক এক জরিপে উঠে এসেছে যে প্রতি ১০ জন সুইডিশের ৯ জনই দিনের অন্তত কিছু সময় অন্য ব্যক্তির চেয়ে অন্তত এক মিটার দূরত্ব বজায় রাখেন।

সুইডেনের সরকারি স্বাস্থ্য সংস্থার দৃষ্টিভঙ্গিতে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সুইডেনের মানুষ যেরকম মনোভাব দেখিয়েছে তা উদযাপনযোগ্য। সুইডেনের বিজ্ঞানীদের নেয়া কৌশল নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিতর্ক হয়েছে। সুইডেনের নেয়া কৌশল বিচক্ষণ ও টেকসই নাকি এর ফলে তারা অদূরদর্শীভাবে দেশের মানুষকে গবেষণার বস্তুতে পরিণত করছে - যার ফলে অপ্রয়োজনীয় ভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে এবং কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতেও ব্যর্থ হতে পারে তারা - তা ছিল বিতর্কের বিষয়বস্তু।

সুইডেনের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্র স্টকহোমে সংক্রমণের হার এরই মধ্যে চূড়ায় পৌঁছে স্থিতিশীল রূপ নিয়েছে - যদিও গত সপ্তাহের শেষে নতুন সংক্রমণের সংখ্যা কিছুটা বেড়েছিল। তবে এখনো সুইডেনের আইসিইউগুলোতে জায়গা রয়েছে এবং নতুন একটি ফিল্ড হাসপাতাল এখনো ব্যবহার শুরু হয়নি।

রাষ্ট্রীয় মহামারি বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেস টেগনেল বলেন, আমরা যা অর্জন করতে চেয়েছিলাম তার অনেকটাই পেরেছি। সুইডেনের স্বাস্থ্য বিভাগ যদিও যথেষ্ট চাপের মধ্যে তাদের কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের এখনো কোনো রোগীকে ফিরিয়ে দিতে হয়নি। অন্য অনেক দেশেই রাজনৈতিক নেতাদের করোনাভাইরাস সম্পর্কিত তথ্য দেশবাসীর সামনে পেশ করতে দেখা গেলেও সুইডেনে এ সংক্রান্ত অধিকাংশ সংবাদ সম্মেলনে ডা. টেগনেলই নেতৃত্ব দিয়েছেন।

মোট আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে ১ কোটি মানুষের দেশ সুইডেন পৃথিবীর শীর্ষ ২০টি দেশের মধ্যে পড়ে - যদিও সুইডেনে তীব্র মাত্রায় উপসর্গ দেখা দেয়ার আগে কাউকে পরীক্ষা করা হয়নি। সম্প্রতি তারা গুরুত্বপূর্ণ খাতে কাজ করা কর্মীদের পরীক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ার যে কোনো দেশের তুলনায় জনসংখ্যার অনুপাতে সুইডেনে মৃত্যুর হার বেশি। তবে সুইডেন তাদের করোনাভাইরাস পরিসংখ্যানে বৃদ্ধ নিবাসে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের তথ্যও সংযোজন করে, যা অন্য অনেক দেশেই করা হয়না। প্রায় ৫০% মৃত্যু নথিবদ্ধ হয় ঐ বৃদ্ধ নিবাসগুলোতে।

সুইডেনের বৃহত্তম মেডিকেল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন মহামারি বিশেষজ্ঞ ও সরকারের নেয়া কৌশলের সমালোচক ক্লডিয়া হ্যানসন মনে করেন করোনাভাইরাসের কারণে অতিরিক্ত মানুষ মারা যাচ্ছে যা প্রতিরোধে আরো কঠোর মাত্রায় লকডাউন আরোপ করা উচিত ছিল। সূত্র: বিবিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন