শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

পবিত্র রমজানে ঘটে যাওয়া ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ৫:২২ পিএম

পবিত্র রমজান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো এর একটি রাত- শবেকদর, যে রাতে মানবতার মুক্তির সনদ কোরআনে কারিম সর্বপ্রথম নাজিল হয়েছে। কোরআনে কারিমের একাধিক জায়গায় তা উল্লেখ রয়েছে। কোনো কোনো বর্ণনা মতে, রাসুল (সা.)-এর ঐতিহাসিক মেরাজের ঘটনাও রমজান মাসে সংঘটিত হয়েছিল। এ ছাড়া ইসলাম ও মুসলিমদের ইতিহাসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বুকে ধারণ করে আছে এ রমজান মাস। সেগুলো বিশেষভাবে মুসলমানদের ত্যাগ ও ত্যাগের বিনিময়ে বিজয় ও সফলতার ইতিহাসসমৃদ্ধ।
পবিত্র রমজান মুসলমানদের নিকট অন্যান্য মাসের তুলনায় অধিক গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামের বহু নিদর্শনের সাক্ষী হিজরি ক্যালেন্ডারের নবম এই মাস। তাছাড়া, ইসলামের পূর্ব যুগেও রমজানের সঙ্গে সম্পর্কীয় একাধিক ঐশী ঘটনার জন্ম হয়েছে।


ঐতিহাসিক বদরযুদ্ধ
মক্কার অদূরে বদর নামক স্থানে ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে তথা দ্বিতীয় হিজরির ১৭ রমজান সংঘটিত হয়েছিল ঈমান ও কুফরের মধ্যে প্রথম যুদ্ধ। এ যুদ্ধে মাত্র ৩১৩ জন প্রায় নিরস্ত্র মুসলমানের মোকাবেলায় শোচনীয় পরাজয় বরণ করতে হয় কাফির বাহিনীর সহস্রাধিক সশস্ত্র সৈন্যকে। আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সরাসরি তিন থেকে পাঁচ হাজার ফেরেশতা দিয়ে মুসলমানদের সাহায্য করা হয়। এ যুদ্ধের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে মহাবিপ্লব সাধিত হয়েছে। তাই পবিত্র কোরআনে এ যুদ্ধকে ‘ইয়াওমুল ফোরকান’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বদর যুদ্ধে আবু জাহেল, উতবা, শায়বাসহ মোট ৭০ জন কাফির নিহত হয়। আরো ৭০ জন কাফির মুজাহিদদের হাতে বন্দি হয়। অন্যদিকে ১৪ জন মুসলিম মুজাহিদ বীরবিক্রমে লড়াই করে শাহাদাতের গৌরব অর্জন করেন।

মক্কা বিজয়
অষ্টম হিজরির ২০ বা ২১ রমজান জুমাবার রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম মক্কা বিজয় করেন। একসময় কাবাগৃহ ছিল বিশুদ্ধ একত্ববাদের কেন্দ্রস্থল। একমাত্র আল্লাহর বন্দেগির জন্য আল্লাহর নির্দেশে এটি পুনর্নির্মাণ করেছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। এটি মুশরিকদের দখলে থাকায় শিরকের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছিল। রাসুল (সা.) তাওহিদের এ পবিত্র স্থানকে শিরকের নাপাকি থেকে মুক্ত করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় প্রবেশ করে কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের কথা বলেননি। তিনি এ মর্মে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন- এক. যারা আপন ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকবে তারা নিরাপদ। দুই. যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে থাকবে তারাও নিরাপদ। তিন. যারা কাবাগৃহে আশ্রয় নেবে তারাও নিরাপদ।

নাখলা নামক জায়গার মূর্তি অপসারণ
রাসুল (সা.) অষ্টম হিজরির ২৫ রমজান হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে একদল সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন নাখলা নামক জায়গার একটি বৃহদাকার মূর্তি অপসারণের জন্য, কাফিররা এর পূজা করত, যার নাম ছিল উজ্জা। হজরত খালেদ ইবনে ওয়ালিদ (রা.) নিজ হাতে ওই মূর্তি অপসারণ করেন। এরপর তিনি বলেন, আর কখনো এখানে উজ্জার উপাসনা হবে না। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৪/৩১৬)

তায়েফে লাত নামক মূর্তি অপসারণ
নবম হিজরির রমজান মাসে তায়েফের সাকিফ গোত্র স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এবং তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজেদের উপাস্য ‘লাত’ নামক মূর্তি অপসারণ করে। (আলবিদায়াহ ওয়াননিহায়াহ : ৫/৩১৬)

ঐতিহাসিক তাবুক যুদ্ধ
নবম হিজরির রজব মাসে তাবুক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের কিছু ঘটনা সংঘটিত হয় নবম হিজরির রমজান মাসে। এ যুদ্ধ ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে আরবের কাফির ও মুনাফিকদের শেষ চেষ্টা। মুসলমানদের বিরুদ্ধে তৎকালীন বিশ্বের অন্যতম সাম্রাজ্যবাদী শক্তি রোমান ও আরবের কাফিরদের সমন্বয়ে ঘটিত যৌথ বাহিনীর রণপ্রস্তুতিই এ যুদ্ধের মূল কারণ। নবী করিম (সা.) মক্কা বিজয় ও হুনায়েনের যুদ্ধ শেষে যখন মদিনায় ফিরে এলেন, এর কিছুদিন পর সিরিয়া থেকে ফিরে আসা কিছু বণিকদলের কাছ থেকে খবর পেলেন, রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মদিনা আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে সিরিয়া ও আরব সীমান্তে তারা এক বিশাল বাহিনী মোতায়েন করছে। রোম ছিল তৎকালীন দুনিয়ার বৃহৎ শক্তি। মহানবী (সা.) ফয়সালা করেন, হিরাক্লিয়াসের আক্রমণের অপেক্ষা না করে মুসলমানরা নিজেরাই আগে তাদের ওপর আক্রমণ চালাবে। তিনি মদিনার সব মুসলিমকে এ যুদ্ধে শরিক হওয়ার নির্দেশ দিলেন। পরে রোমানরা মুসলমানদের ভয়ে যুদ্ধ না করেই পলায়ন করেছে।

কাদেসিয়া যুদ্ধ
এক বর্ণনা অনুযায়ী কাদেসিয়া যুদ্ধ ১৫ হিজরি সনের রমজান মাসে সংঘটিত হয়। সাদ বিন আবি ওয়াক্কাছ (রা.)-এর নেতৃত্বে মুসলমান ও রস্তুম ফাররাখজাদের নেতৃত্বে পারসিকদের মধ্যে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তবে ইবনে কাছির (রহ.) তারিখ উল্লেখ ছাড়াই বলেছেন, এ যুদ্ধে মুসলিম সৈন্য ছিল সর্বসাকল্যে ৩৬ হাজার বা তার চেয়ে কিছু বেশি। আর কাফিরদের সৈন্য ছিল দুই লাখ। চার দিন ও তিন রাত প্রচণ্ড যুদ্ধ চলার পর কাদেসিয়া যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। মাত্র ৩৬ হাজার মুসলিম সৈন্য দুই লাখ সুসজ্জিত পারসিক বাহিনীকে পরাজিত করে। এ যুদ্ধের ফলে ওই অঞ্চল ইরাকের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায় এবং সেখানে ইসলামের প্রচার-প্রসারের সব বাধা দূরীভূত হয়। যুদ্ধের পর চার হাজার পারসিক সৈন্য সরাসরি ইসলাম গ্রহণ করে। এ ছাড়া বিভিন্ন গোত্র ও ইরাকে বসবাসরত ধর্মযাজক দলে দলে সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাছ (রা.)-এর কাছে এসে ইসলাম গ্রহণের ঘোষণা দেয়।

স্পেন বিজয়
সিপাহসালার তারেক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী ৯২ হিজরি সনের ২৮ রমজান সর্বপ্রথম রডারিকের সৈন্যকে পরাজিত করে স্পেন জয় করেন।

ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
সুলতান সালাহউদ্দিন আইউবি (রহ.) ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ যুদ্ধ শুরু করেন ১৩৯৩ সালের ১০ রমজান।

আইনে জালুতের যুদ্ধে বিজয়
৬৫৮ হিজরির ১৫ রমজান জুমাবার আইনে জালুত যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী তাতারিদের চিরতরে পরাজিত করে তাদের বলয় থেকে মুসলিম দেশগুলো মুক্ত করে।

ইহুদিদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিন রক্ষার যুদ্ধ
ফিলিস্তিনকে ইহুদিদের হাত থেকে পবিত্র করার জন্য সর্বশেষ যুদ্ধ হয় ১৩৯৩ হিজরির ১০ রমজান। ফিলিস্তিনি বীর যোদ্ধারা অস্ত্র ও জনবলের দৈন্য সত্ত্বেও ইহুদিদের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এ ছাড়া আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা এ রমজানে সংঘটিত হয়েছে।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক আল্লামা ইবনে কাসির (১৩০১-১৩৭৩) তার অমর গ্রন্থ আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে লিখেছেন, প্রসিদ্ধ চার আসমানী কিতাব পবিত্র রমজানে অবতীর্ণ হয়েছে।
পবিত্র তাওরাত গ্রন্থ নাজিল হয়েছে হজরত মুসা আলাইহিস সালামের ওপর। এর ৪৮২ বছর পরে হজরত দাউদ আলাইহিস সালামের ওপর নাজিল হয়েছে পবিত্র গ্রন্থ জাবুর। রমজানেই মহান আল্লাহ তার প্রিয় বান্দা ও নবী হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের ওপর নাজিল করেছেন পবিত্র ইনজিল গ্রন্থ। এবং সবশেষ আসমানী কিতাব মহাগ্রন্থ আল কুরআনও আখেরি নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ওপর অবতীর্ণ হওয়া শুরু হয়েছে এই রমজানে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
Md.Ruyed Hossain ২৬ এপ্রিল, ২০২০, ৭:৪১ পিএম says : 0
Really very good history.
Total Reply(0)
Monjur Rashed ২৮ এপ্রিল, ২০২০, ৩:২৬ পিএম says : 0
Please carry on publishing this sort of historical information.
Total Reply(0)
Mohammad Sirajullah, M.D. ২৯ এপ্রিল, ২০২০, ৪:৫০ এএম says : 0
Very good information.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন