কেরানীগঞ্জ উপজেলা সংবাদদাতা : অপহরণের ৪ দিন নাটকের পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পশ্চিম মুগারচর এলাকার তাদের নিজ বাড়ির পাশেই মোতাহারের তিনতলা ভবনের একটি কক্ষের ভিতর থেকে ড্রাম থেকে স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনা ছড়িয়ে পরলে শত শত লোকজন মুগারচর চৌরাস্তায় ভিড় করে।
এসময় শত শত লোকজন উত্তেজিত হয়ে মোতাহারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করে। এসময় মোতাহার বাড়ি রেখে পালিয়ে যায়। পুলিশ এসময় মুগারচর এলকায় অভিযান চালিয়ে মোতাহারের ছেলে মেহেদী হাসান, মোতাহারের সহযোগী মো. খোরশেদ আলম, আল-আমীন ও মোতাহারের স্ত্রী সালমা বেগমকে কে আটক করেছে পুলিশ। এই ঘটনা নিয়ে মুগারচর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা সার্কেল এএসপি রামানন্দ সরকার, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা ওসি ফেরদাউছ হোসেন ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মনিরুল ইসলাম।
নিহত আব্দুল্লাহর বাবা মো. বাদল হোসেন বলেন, আমার ছেলে অপহরণের খবর পেয়ে কুয়েত থেকে দেশে ফিরে আসি। আমার ছেলেকে জীবত পাওয়ার জন্য দুই বারে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে দেয়া হয়েছে অপহরণকারীদের। আমার চাচাতো ভাই মোতাহার অপহরণের নাটক সাঁজিয়েছে। সেই আমার ছেলে পাওয়ার জন্য ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মোতাহারের ছেলে মেহেদী হাসান আমার ছেলেকে বাসা থেকে খেলার কথা বলে ডেকে নেয়। তারা প্রথমে আমার স্ত্রী রিনা আক্তারের কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করছিল। অপহরণকারী মোতাহার তার সহযোগী মো. খোরশেদ আলম ও মেহেদী হাসান স্থানীয় কিছু লোকজনের মোবাইলে অপহরণের টাকা পেতে ম্যাসেজ দিয়ে ছিল। অপহরণকারীরাই ঘটনার পরের দিন শনিবার সকাল ১১টায় আমার ছেলেকে পাওয়ার জন্য মুগারচর চৌরাস্তায় স্কুল ছাত্র ও স্থানীয়দের দিয়ে মানববন্ধন করে। তাদের মানববন্ধন ছিল একটি কৌশল। অপহরণকারীদের মধ্যে মো খোরশেদ সোমবার দুপুরে কোনাখোলা এলাকায় মামলার তদন্তকারী অফিসার সফিকুল ইসলামের সঙ্গে দয়াল হোটেলে খাবার খায়। এসময় ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মাসুদ রানা পুলিশের সঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছিল। সোমবার গভীর রাতে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ মুগারচর এলাকায় অভিযান করতে গেলে অপহরণকারী মো. খোরশেদ তাদের বাড়িতে যায়। গভীর রাতে খোরশেদ আলম স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহর বাড়িতে গেলে পুলিশের সন্দেহে হয়। এসময় পুলিশ খোরশেদ আলমকে আটক করে। তাকে থানায় নিয়ে এসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে অপহরণের কথা শিকার করে। তার স্বীকরোক্তিতে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মোতাহারের তৃতীয় তলার কক্ষের ভিতর একটি ড্রাম থেকে তার ছেলের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের মা রিনা আক্তার বলেন, তার ছেলে পশ্চিম মুগারচর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র। সে অনেক মেধাবী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল পুলিশ হবার। আমি তাকে পুলিশ বানানোর জন্য ভালো ভাবে গড়ে তুলছি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ না হয়ে আজ লাশ হয়ে ফিরলো। আমার ছেলে পুলিশ না হতে পারলেও তার ছেলের লাশ পুলিশ উদ্ধার করেছে। তার ছেলে অপহরণ হওয়ার পর থেকেই আব্দুল্লাহর চাচাতো দাদা মোতাহার ও খোরশেদ আলম আমাকে সাহস দিতো। অপহরণকারীদের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে বলে তাকে জানায়। প্রথম দফায় অপহরণকারীদের সঙ্গে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা রফাদফা হয়েছিল। অপহরণকারীদের চাহিদা মতো দুই দিনে তাদেরকে টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু টাকা দেয়া হলেও তার ছেলেকে হত্যা করে ড্রামের ভিতর এসিড দিয়ে রেখে দেয়। অপহরণকারীরা তার ছেলের লাশ গুম করার জন্য টার্গেট নিয়ে ছিল। অপহরণকারীররা আমাদের নিকটতম আত্মীয়স্বজন। তারা টাকার জন্য আমার ছেলেকে অপহরণের পর নির্মামভাবে হত্যা করে।
রোহিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হাজি আব্দুল আলী বলেন, অপহরণের ঘটনাটি ৪ দিন ধরে নাটক চলছিল। অপহরণের ৩ দিনেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। শনিবার রাতে অপহরণকারীদের বিকাশ করা ৪টি মোবাইলে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়েছে আব্দুল্লাহর পরিবার। অপহরণকারীদের সঙ্গে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দরকষা হয়েছিল। এই অপহরণের সঙ্গে কোন আত্মীয় স্বজন জড়িত থাকতে পারে বলে স্থানীয়দের মধ্যে গুঞ্জন চলছিল। মুগারচর এলাকার মোতালেব হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান স্কুল ছাত্র আব্দুল্লাহকে ডেকে নিয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন দেখেছেন। তবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছে পুলিশ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন