শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সউদী অনুমোদনের অপেক্ষায় বাংলাদেশি ওমরা ভিসা

১৪ ফেব্রুয়ারি জেদ্দায় দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শামসুল ইসলাম : সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশি ওমরা ভিসা। ওমরার নামে সউদী আরবে মানব পাচারের দরুণ দীর্ঘ ১০ মাস যাবত ওমরা ভিসা বন্ধ রয়েছে। সউদী সরকার বাংলাদেশি ওমরাযাত্রীর উপর পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। মানব পাচারের অভিযোগে সউদী সরকার গত মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশি ওমরা ভিসা বন্ধ করে রেখেছে। ফলে বিগত মাহে রমজানেও হাজার হাজার প্রকৃত ওমরাযাত্রী ওমরা পালনের জন্য মক্কা-মদিনায় যাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এতে দেশের প্রকৃত ওমরাযাত্রীরা ওমরা পালন করতে সউদী যেতে না পেরে চরম হতাশায় ভুগছেন। প্রকৃত ওমরাযাত্রীরা প্রতি দিন ওমরা এজেন্সিগুলোতে ধরর্ণা দিয়ে ওমরা খোলার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান বাংলাদেশের ওমরা ভিসা চালুর জন্য গতকাল মঙ্গলবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সউদী কর্তৃপক্ষের কাছে ডিও লেটার পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি জেদ্দায় দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি সম্পাদন কালেও বাংলাদেশের ওমরা ভিসা চালুর বিষয়টি প্রাধান্য পাবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। ২০১৫ সালের হজ মৌসুমের কার্যক্রম শেষ হবার সাথে সাথেই গোটা বিশ্বের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ওমরা পালনে সউদী আরবে যাচ্ছেন। এক মাত্র বাংলাদেশের ওমরাযাত্রীদের কান্ট্রি লগ আজো খুলেনি। এতে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্নসহ সাধারণ ওমরা এজেন্সিগুলো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০১৪ সালে ১০৪টি ওমরা এজেন্সি’র মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে ওমরা করতে ১১ হাজার ৪৮৫ জন সউদী আরব গিয়ে আর দেশে ফেরত আসেনি। ওমরার নামে সউদীতে মানব পাচারের সাথে জড়িত ওমরা এজেন্সিগুলোকে কোনো ছাড় দেয়া হবে না বলে ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সউদী আরবে ওমরার নামে মানব পাচারের অভিযোগের প্রমাণ মেলায় ৯৫টি হজ এজেন্সিকে গত ১৮ নভেম্বর শাস্তি দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে যে সব ওমরা এজেন্সি’র ২/১ জন যাত্রী ওমরা করতে গিয়ে দেশে ফিরেনি তাদের লাইসেন্সও বাতিল, জরিমানা ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সউদী সরকারের ওমরা নীতিমালা অনুযায়ী ওমরাযাত্রী ১% ওমকুফ করার বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত ওমরা এজেন্সিগুলো ধর্ম মন্ত্রণালয়ে তাদের শাস্তি লাঘবের জন্য আপীল করেছে। এদের অনেকের শুনানীও নেয়া হয়েছে। ৬৯টি হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল ছাড়াও সেগুলোর জামানত বাজেয়াপ্ত ও জরিমানা করা হয়। শুধু জরিমানা করা হয়েছে ২৬টি এজেন্সিকে। এদিকে, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি জেদ্দায় সউদী আরব-বাংলাদেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তি (১৪৩৭ হিজরি) স্বাক্ষরিত হবে। বাংলাদেশের পক্ষে হজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। আর সউদীর পক্ষে হজ চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন সউদী হজমন্ত্রী ড. বন্দর বিন মোহাম্মদ বিন হামজা হাজ্জার। দ্বি-পাক্ষিক হজ চুক্তির জন্য আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সউদী’র উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে আরো রয়েছেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আব্দুল জলিল, অতিরিক্ত সচিব শহীদুজ্জামান, ধর্মমন্ত্রী এপিএস শফিকুল ইসলাম শফিক ও ধর্মমন্ত্রী পিও মোঃ আবু সাঈদ।
উল্লেখ্য, গত ১৪ ডিসেম্বর ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এক চিঠিতে ওমরা ভিসা খুলে দেয়ার বিষয়টি অবহিত করেছিল। ধর্ম মন্ত্রণালয় ১৪৩৭ হিযরী সনের ওমরা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দু’দফায় ১১৭টি ওমরা এজেন্সির তালিকা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সউদী রাষ্ট্রদূতের কাছে প্রেরণ করেছে। রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছে উল্লেখিত ১১৭টি ওমরা এজেন্সি’র তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে। সউদী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও হজ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশী ওমরাযাত্রী প্রেরণে অনুমতি দিয়েছে। কিন্ত সউদী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো বাংলাদেশি ওমরাযাত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। ফলে ওমরা চালুর বিষয়টি মাঝ পথে ঝুলে রয়েছে। হাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল গতকাল বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে সউদী দূতাবাস কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশি ওমরা চালু হয়ে গেছে বলে চিঠির মাধ্যমে সরকারকে অবহিত করেছে। কিন্ত অদ্যাবধি ওমরা চালু না হওয়ায় ওমরাযাত্রীরা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বহু ওমরা এজেন্সি মক্কায় সউদী ওমরা কোম্পানিগুলোর সাথে চুক্তি করে হোটেল ভাড়া করে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণের ওমরার মোফা চালুর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ধর্মমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওমরা এজেন্সি’র মালিক বলেন, শতকরা ১% এর নীচে যেসব ওমরাযাত্রী দেশে ফিরেনি সউদী ওজারাতুল হজ ও সউদী চেম্বার অব কমার্স এর নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। সউদী কর্তৃপক্ষের মতে এসব ওমরা এজেন্সিগুলোর ওমরার কার্যক্রম পরিচালনায় কোনো বাধা নেই। উল্লেখিত ওমরা এজেন্সিগুলোকে ক্যাশ গ্যারান্টি ও ব্যাংক গ্যারান্টিও ফেরত দিয়েছে সউদী কর্তৃপক্ষ। সউদী কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ১% এর নীচে থেকে যাওয়া ওমরা এজেন্সিগুলোকে দায়মোচনপত্র ও ছাড়পত্র (মোখালাছা) দিয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় গত ৯ ডিসেম্বর এক সার্কুলারে পুরাতন হজ ও ওমরা লাইসেন্সের মালিকদের জামানতের (যাদের ১০ লাখ টাকা জামানত ছিল) অংক ১০ লাখ টাকার স্থলে ২০ লাখ টাকা বৃদ্ধি করেছে। সউদী সরকারও বাংলাদেশি ওমরা এজেন্সিগুলোর প্রতি কড়াকড়ির অংশ হিসেবে ১ লাখ সউদী রিয়ালের ক্যাশ গ্যারান্টি’র স্থলে দু’লাখ সউদী রিয়াল এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ সউদী রিয়ালের ব্যাংক গ্যারান্টি’র স্থলে দু’লাখ সউদী রিয়াল বর্ধিত করেছে। ওমরা ভিসা চালু না হওয়ায় বাংলাদেশি বেশ কিছু ওমরা এজেন্সি দু’লাখ করে ৪ লাখ সউদী রিয়াল ক্যাশ ও ব্যাংক গ্যারান্টি জমা দিয়ে বিপাকে পড়েছে। সউদী বাংলা এয়ার সার্ভিস লিমিটেডের (১২১৯) ম্যানেজিং ডিরেক্টর আলহাজ আহসান উল্লাহ অবিলম্বে ওমরার মোফা চালুর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন