পাঠ্যসূচি পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রীর দ্রুত পদক্ষেপ জরুরি -ওলামা লীগ
স্টাফ রিপোর্টার : সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান আর জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থার চলমান পাঠ্যসূচি থেকে ইসলামের সকল বিষয় উঠিয়ে দিয়ে তা পাঠদানে বাধ্য করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত বর্তমান পাঠ্যসূচি সাংঘর্ষিক। এ পাঠ্যসূচি দিয়ে ছাত্রদের জঙ্গিবিরোধী শিক্ষাদান অসম্ভব। নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানকে অভিনন্দন জানিয়ে হিন্দু তত্ত্ববাদের চলমান পাঠ্যসূচি ও প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন বাতিলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগের কার্যকরী সভাপতি আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুস সাত্তার, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব কাজী মাওলানা আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, হাফেজ মোস্তফা চৌধুরী, হাফেজ মাওলানা আব্দুল জলিল ও মাওলানা শওকত আলী সেলিমপুরী গতকাল এক বিবৃতিতে এ দাবি করেন। নেতৃবৃন্দ বলেন, চলমান সিলেবাসের পূর্বের পাঠ্যসূচিতে বেশ কিছু ইসলামী বিষয়ে প্রবন্ধ কবিতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠ্যসূচি থেকে সেসব ইসলামী বিষয় বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদের বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে তা পাঠদানে ছাত্রদের বাধ্য করছে। এই পাঠ্যসূচি অনুসরণ করলে ছাত্রছাত্রীরা আল্লাহ তায়ালার মনোনীত ধর্ম ইসলামকে একটি ধর্ম হিসেবে জানতেও ভুলে যাবে। সুতরাং এই পাঠ্যসূচি বহাল থাকলে প্রধানমন্ত্রী কর্র্তৃক সন্তানদের ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়ার আহ্বান কেবল আহ্বানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এই পাঠ্যসূচি দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে উদ্বুদ্ধ হবে না। বরং জঙ্গিবাদে প্রবেশের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা বাস্তব রূপ নেবে।
নেতৃবৃন্দ চলমান পাঠ্যসূচির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, এ পাঠ্যসূচিতে দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তকগুলোতে ইসলামী বিষয়সমূহ বাদ দিয়ে তদস্থলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদমূলক বিষয় প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। বাদ দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্ত করা বিষয়সমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলোÑ১. দ্বিতীয় শ্রেণি : ‘সবাই মিলে করি কাজ’Ñশিরোনামে মুসলমানদের শেষ নবীর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত। ২. তৃতীয় শ্রেণি : ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত। ৩. চতুর্থ শ্রেণি : খলিফা হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত। ৪. পঞ্চম শ্রেণি : বিদায় হজ নামক শেষনবীর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত, ৫. পঞ্চম শ্রেণি : কাজী কাদের নেওয়াজের লিখিত শিক্ষাগুরুর মর্যাদা নামক একটি কবিতা, যাতে বাদশাহ আলমগীরের মহত্ত্বের চিত্র উঠে এসেছে এবং শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের ভক্তি ও আদব কেমন হওয়া উচিত তা বর্ণনা করা হয়েছিল। ৬. পঞ্চম শ্রেণি : শহীদ তিতুমীর নামক একটি জীবনচরিত। এ প্রবন্ধটিতে শহীদ তিতুমীরের ব্রিটিশবিরোধী যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ ছিলো। ৭. ষষ্ঠ শ্রেণি : ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ লিখিত ‘সততার পুরস্কার’ নামক একটি ধর্মীয় শিক্ষণীয় ঘটনা। ৮. ষষ্ঠ শ্রেণি : মুসলিম দেশ ভ্রমণকাহিনীÑ‘নীলনদ আর পিরামিডের দেশ’। ৯. ষষ্ঠ শ্রেণি : মুসলিম সাহিত্যিক কায়কোবাদের লেখা ‘প্রার্থনা’ নামক কবিতাটি। ১০. সপ্তম শ্রেণি: মরু ভাস্কর নামক শেষনবীর সংক্ষিপ্ত জীবনচরিত। ১১. অষ্টম শ্রেণি : ‘বাবরের মহত্ত্ব’ নামক কবিতাটি। ১২. নবম-দশম শ্রেণি : মধ্যযুগের বাংলা কবি শাহ মুহম্মদ সগীরের লেখা ‘বন্দনা’ নামক ধর্মভিত্তিক কবিতাটি। ১৩. নবম-দশম শ্রেণি : মুসলিম কবি ‘আলাওল’-এর ধর্মভিত্তিক ‘হামদ’ নামক কবিতাটি। ১৪. নবম-দশম শ্রেণি : মধ্যযুগের মুসলিম কবি আব্দুল হাকিমের লেখা বঙ্গবাণী কবিতাটি। ১৫. নবম-দশম শ্রেণি : গোলাম মোস্তফার লেখা জীবন বিনিময় কবিতাটি। কবিতাটিতে মোঘল বাদশাহ বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুনকে নিয়ে লেখা। ১৬. নবম-দশম শ্রেণি : কাজী নজরুল ইসলামের লেখা বিখ্যাত ‘উমর ফারুক’ কবিতা। নতুন সংযোজিত কুফরী ও শিরকী বিষয়সমূহÑ১. পঞ্চম শ্রেণি : স্বঘোষিত নাস্তিক হুমায়ুন আজাদ লিখিত ‘বই’ নামক একটি কবিতা, যা মূলত মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কোরআনবিরোধী কবিতা। ২. ষষ্ঠ শ্রেণি : ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ নামক একটি কবিতা, যেখানে রয়েছে হিন্দুদের দেবী দুর্গার প্রশংসা। ৩. ষষ্ঠ শ্রেণি : ‘লাল গরুটা’ নামক একটি ছোটগল্প, যা দিয়ে মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে গরু হলো মায়ের মতো অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। ৪. ষষ্ঠ শ্রেণি : অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের হিন্দুদের তীর্থস্থান রাঁচি’র ভ্রমণকাহিনী। ৫. সপ্তম শ্রেণি : ‘লালু’ নামক গল্পে বাচ্চাদের শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে পাঁঠাবলির নিয়মকানুন। ৬. অষ্টম শ্রেণি : পড়ানো হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ‘রামায়ণ’-এর সংক্ষিপ্তরূপ। ৭. নবম-দশম শ্রেণি : ‘আমার সন্তান’ নামক একটি কবিতা। কবিতাটি হিন্দুদের ধর্ম সম্পর্কিত ‘মঙ্গলকাব্যের অন্তর্ভুক্ত, যা দেবী অন্নপূর্ণার প্রশংসা ও তার কাছে প্রার্থনাসূচক কবিতা। ৮. নবম-দশম শ্রেণি : অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ভারতের পর্যটন স্পট ‘পালামৌ’-এর ভ্রমণকাহিনী। ৯. নবম-দশম শ্রেণি : ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ শিরোনামে বাউলদের বিকৃত যৌনাচার। ১০. নবম-দশম শ্রেণি : ‘সাকোটা দুলছে’ শিরোনামের কবিতা দিয়ে ’৪৭-এর দেশভাগকে হেয় করা হচ্ছে, যা দিয়ে কৌশলে ‘দুই বাংলা এক করে দেওয়া’ অর্থাৎ বাংলাদেশকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত হতে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। ১১. প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে দেওয়া হয়েছে (নিজেকে জানুন) নামক যৌন শিক্ষার বই। ১২. নবম-দশম শ্রেণি : ‘সুখের লাগিয়া’ নামক একটি কবিতা, যা হিন্দুদের রাধা-কৃষ্ণের লীলাকীর্তন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, পাঠ্যসূচিতে যেসব হিন্দুত্ববাদ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেগুলো বাদ দিয়ে পূর্বের ইসলামী বিষয়সমূহসহ জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা এ মুহূর্তে জরুরি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন