শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাজনীতি

করোনায় মৃত্যুর দায় সরকারের-রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ মে, ২০২০, ৩:২৯ পিএম

সরকার করোনা মোকাবেলায় চার দিক থেকে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, সরকারের এই ব্যর্থতায় সাংবাদিক মারা যাচ্ছে; চিকিৎসক মারা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষ মারা যাচ্ছে এবং প্রতিদিন লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। করোনায় মৃত্যুর সকল দায় সরকারের; এই দায় তাদেরকে নিতে হবে। কারণ যখন চীনে মহামারি শুরু হলো; তখন সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। যদি প্রথম থেকে তারা পদক্ষেপ নিতো তাহলে আজ লাশের সারি দীর্ঘ হতো না; এতো মানুষ মারা যেত না।
সোমবার (১১ মে) গাজীপুর মহানগর বিএনপির টঙ্গী পূর্ব থানা শাখার টঙ্গী বাজার এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচীতে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, অতিরিক্ত সচিবের মত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তি চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। তার জন্য সরকার হাসপাতালে একটি সিটের ব্যবস্থা করতে পারেনি; একটি ভেন্টিলেটর যোগাড় করতে পারেনি। তাহলে আজ সাধারণ মানুষের কী অবস্থা? এই যে পরিস্থিতি এরপরও কি আপনাদেরকে ধন্যবাদ দিতে হবে, আপনাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ফুলের মালা দিতে হবে ?
সরকারের সমালোচনা করে রিজভী আরো বলেন, যে সময় বাংলাদেশে করোনা সামাল দেওয়ার যথেষ্ট সময় ছিল, তখন আপনারা করেননি। চীনে যখন গণসংক্রমণ শুরু হলো তখন আপনারা লকডাউন, শাটডাউন ইত্যাদি পদক্ষেপ নিলে আজকে বাংলাদেশে গণসংক্রমণ শুরু হতো না। আজকে এই মৃত্যুর দায় সরকারের। কারণ সেদিন তারা সচেতনতামূলক কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরং এই সুযোগে আজকে নিজেদের লোকদেরকে পকেট ভারি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। চাউল চুরি হচ্ছে, চাউল আত্মসাৎ হচ্ছে, চাউল লুট করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আজকে যদি সত্যিকারের নির্বাচিত সরকার হতো, জনগণের সুষ্ঠু ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার হতো; তাহলে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হতো। আর জবাবদিহি করতে গেলে জনগণের জন্য কী করার দরকার, জনগণের পক্ষে কি কাজ করার দরকার; তারা এই কাজগুলো করতেন। কিন্তু তাদের তো কোন জাবাবদিহি করার দরকার নেই। রাতের অন্ধকারে তাদের ভোট হয়ে যায়। তাদের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের জন্যও কোনো ভোট লাগে না। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রে চতুষ্পদ প্রাণী ঘুরাফেরা করে। সুতরাং তাদের কেন জনগণের প্রতি এতো মহব্বত থাববে। কারা বাঁচলো, কে মরলো, কারা অসুস্থ হলো বা কে কি অবস্থায় থাকলো এটাতে তো সরকারের কিছু যায় আসে না। আর তাদের কিছু যায় আসে না বলেই আজকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। আজকে লাশের সারি বৃদ্ধি হচ্ছে। আজকে হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ভয়ঙ্কর অবস্থা বিরাজ করছে। এই রকম একটা ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে, একটা ভয়াল পরিস্থিতির মধ্যে মৃত্যু ও আক্রান্তের মধ্য দিয়ে মানুষের জীবন যাপন করতে হচ্ছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা আজকে যারা এখানে উপস্থিত আছি, আগামীকাল আমরা কে মরি কে বাঁচি এর কোনো নিশ্চিয়তা নাই। অথচ এই সরকার অত্যন্ত ভাল আছে। এই সরকারের মন্ত্রীরা ভাল আছেন। তারা অনেক নিরাপত্তার মধ্যে আছেন। সুতরাং তাদের জনগণ নিয়ে; মানুষ নিয়ে এতো ভাবনার তো দরকার নেই। এই কারণেই আজকে যারা কথা বলছেন, যারা তাদের সমালোচনা করছেন তারা এই সরকারের রোষানলের শিকার হচ্ছেন। এই ক্রান্তিলগ্নেও এই সরকারের ফেশিজম, এই সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা বিন্দু পরিমাণ কমেনি।
তিনি বলেন, আজকে সাংবাদিক সত্য কথা বলার জন্য পিঠমোড়া করে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ বেশ কয়েকজন সাংবাদিক করোনায় মারা গেছেন। প্রায় ৮৫ জন সাংবাদিক ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই যে বিষয়গুলো এগুলো লেখা যাবে না। সামাজিক মাধ্যমে এগুলো বলা যাবে না, আর বললে পরিণতি হবে কাজলের মতো। পরিণতি হবে আরো অনেকের মতো।
রিজভী বলেন, খোকন ছেলেটি আমাদের অত্যন্ত প্রিয়। সেই ছেলেটি আজকে হারিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে। একজন দক্ষ প্রসিদ্ধ সাংবাদিক ছিল সে। কিন্তু চিকিৎসার অভাবে সে মারা গেল। তার পরিবার তার টেস্ট করাতে পারেনি। এটি পজেটিভ না নেগিটিভ খোকন জানতে পারেনি। এই যদি পরিস্থিতি হয়; তাহলে সরকারের সমালোচনা কেন করবে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিএনপি জাতীয়তাবাদের দল; আমরা জনগণের পাশে আছি। এই যে ত্রাণ দিচ্ছেন; তারা যুবদল, ছাত্রদল, বিএনপির নেতাকর্মী। নিজের পকেটের টাকা তিয়ে এই দরিদ্র, নিরন্ন , কর্মহীন, দিন-আনে দিন খায় তাদেরকে এই ত্রাণ দিচ্ছেন। সাধ্যমতো সারা বাংলাদেশে কোথাও না কোথাও আমাদের লোকজন ত্রাণ দিচ্ছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে নির্দেশ দিয়েছেন জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। আর চব্বিশ ঘণ্টাই দেশ নায়ক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ত্রাণ কার্যক্রম মনিটরিং করছেন, তত্ত্ববধান করছেন। সুতরাং এই জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও আমরা বসে নেই। জনগণের পক্ষে; সাধারণ মানুষের পক্ষ্যে আমাদের সাধ্যে যা আছে সেটা নিয়েই আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াবো।
রিজভী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি বাঁচবেন না মরবেন, তার পরিবার কোথায় আছে, এই নিশ্চিয়তা তিনি খোঁজেননি, এতই তার দেশপ্রেম। তিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আবার তিনি জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে এ দেশের ক্ষমতার হাল ধরেছিলেন। কাজেই গণতন্ত্র, কথা বলা, খবরের কাগজ পড়া এগুলো সব যখন বন্ধ, তখন সেটাকে অর্গলমুক্ত করে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন সেই ব্যক্তি। আমরা তার দল করি বিএনপি
রিজভী অরো বলেন, আমরা দুইটি বিষয়কে সামনে নিয়ে রাজনীতি করি একটা হচ্ছে গণতন্ত্র। যেটা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আর বার বার যিনি পুনরুদ্ধার করেছেন তার সহধর্মীনি বেগম খালেদা জিয়া। সুতরাং গণতন্ত্রের প্রশ্নে, কথা বলার প্রশ্নে, মানুষের নাগরিক অধিকারের প্রশ্নে আমাদের আন্দোলন, এখানে কোনো আপোষ নাই। আরেকটা হচ্ছে দুর্যোগ দুর্বিপাকে কে কোথায় আছে আমরা জানি না, আমরা মানুষের পক্ষে আছি, মানুষের পাশে আছি। আজকে এই যে ত্রাণ বিতরণ এটা আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের পরিশ্রমের ফসল, এটা কোনো সহজ কাজ না। আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছে, গ্রেফতার করছে। আমাদেরকে যেভাবে একটি প্রাকৃতিক মহামারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে এবং এর জন্য যে দুর্ভীক্ষের অবস্থা আসন্ন সেখানে মানুষের পাশে দাঁড়ানো সেক্ষেত্রেও আমরা কোনো আপোষ করি নাই। এবং সে কারণেই সরকারের প্রতিটি মন্ত্রী নেতাদের বক্তব্যে ও ভাষার মাধ্যমে বিএনপির নিন্দা, বিএনপির বিরুদ্ধে কটুক্তি করছেন। বিএনপির নেতৃবৃন্দ নাকি এই মুহুর্তে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে কথা বলা অপরাধ। চাউল চুরি করলে আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ, সেটার বিরুদ্ধে কথা বলা কি অপরাধ ? খাটের তল থেকে তেল পাওয়া যাওয়া যাবে, তার বিরুদ্ধে কথা বলা কি অপরাধ ? খড়ের গাঁদা থেকে চাউলের বস্তা পাওয়া যাবে, সেটার বিরুদ্ধে কথা বলা কি অপরাধ ? অর্থ্যাৎ ওনারা চুরি করবেন; কথা বলা যাবে না, সমালোচনা করা যাবে না। তারা এসব করতে চান বলেই আওয়ামীলীগের মহাসচিব বলছেন এসব বিষয়ে কথা বলা অপরাধ।
বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় হাসান উদ্দিন সরকার বলেন, সত্যকে লালন করুন। সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। আগামীতে জাতীয়তাবাদী শক্তির বিজয় অবশ্যম্ভাবী।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন। এছাড়া টঙ্গী পশ্চিম থানা বিএনপির সভাপতি মাহবুবুল আলম শুক্কুর, পূর্ব থানা বিএনপির সভাপতি রাশেদুল ইসলাম কিরণ, গাজীপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রভাষক বসির উদ্দিন আহমেদ সহ দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম মোফাজ্জল শিশিরের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
saadman ১১ মে, ২০২০, ৬:৩২ পিএম says : 0
Now immediately start the mass people movement, otherwise the country will be collapsed within a very short time.
Total Reply(0)
Mohammad. Hossain ১১ মে, ২০২০, ৮:৩৪ পিএম says : 0
Mr, Resve should take some allergy medication, he may have some allergic problems , what he saying not make any sense.I hope he will be ok. Thanks
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন