স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সরকার গঠিত তদন্ত কমিটি কয়েক দিনের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে এর আগে আমি বক্তব্য দিয়েছি- এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন হাতে পেলে প্রকাশ করা হবে। চলতি অধিবেশনেই এ ব্যাপারে আমি বক্তব্য দেবো।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির এমপি ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারি দলীয় এমপি গোলাম রাব্বানীর এক প্রশ্নের উত্তরে অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের জাল-জালিয়াতি রোধে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে জাল-জালিয়াতি/অনিয়ম শনাক্তকরণ এবং তা প্রতিরোধের প্রাথমিক দায়িত্ব মূলত ব্যাংকগুলোর উপর বর্তায়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংকের জাল-জালিয়াতি রোধে এবং আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক তার পরিদর্শন কার্যক্রমকে আধুনিক করার পাশাপাশি আরও শক্তিশালী করেছে।
প্রচলিত পরিদর্শন কার্যক্রমের পরিবর্তে ঝুঁকি ভিত্তিক পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। এতে করে ব্যাংকগুলোর যেকোনো ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রমকে আগেভাগেই শনাক্ত করে প্রতিকারের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেওয়া যাবে।
ব্যাংকগুলোর অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা জারি করেছে।
সরকার দলীয় এমপি নুরুন্নবী চৌধুরীর অপর প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, বহুজাতিক কোম্পানিসমূহের মধ্যে কর ফাঁকির প্রবণতা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিদ্যমান চুক্তিসমূহ পরিমার্জনের লক্ষ্যে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুরাতন দ্বৈতকর পরিহার চুক্তিসমূহ পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাছাড়া এ সংক্রান্ত আইন ও বিধি-বিধান হালনাগাদের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ২০১২ সালে ট্রান্সফার প্রাইসিং আয়কর আইনে সংযোজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রান্সফার প্রাইসিংয়ের অপব্যবহার বন্ধ ও আন্ত:সীমান্ত কর ফাঁকি রোধের বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে একটি স্বতন্ত্র ট্রান্সফার প্রাইসিং ইউনিট গঠনের প্রস্তাবনা করা হয়েছে।
সরকারি দলের বিএইচ হারুনের এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর গত পাঁচ বছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে অবৈধভাবে আসা প্রায় ১০ কোটি টাকার মোবাইল ফোন জব্দ করেছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১টি চালানে ৩ কোটি টাকার ২৬৯টি মোবাইল ফোন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬টি চালানে ২ কোটি ৪ লাখ টাকার ১ হাজার ২০৯টি মোবাইল ফোন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪টি চালানে ৪ কোটি ১ লাখ টাকার ৪ হাজার ৩৭৫টি মোবাইল ফোন, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩টি চালানে ৭১ লাখ টাকার ৯৫১টি মোবাইল ফোন ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ২টি চালানে ৮ লাখ টাকার ১ হাজার ৬২৪টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।
তিন ব্যাংকের মুনাফা দেড়শ’ কোটি টাকা
২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তিনি বলেন, এই তিনটি ব্যাংক লাভজনক প্রতিষ্ঠান। সোনালী ব্যাংক ৫৮ কোটি ৬৫ লাখ, রূপালী ব্যাংক ২৩ কোটি ৫০ লাখ ও অগ্রণী ব্যাংক ৬৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা মুনাফা করেছে।
মুহিত বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে লাভজনকভাবে পরিচালনা করার জন্য ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অপারেশনাল ইফিসিয়েন্সি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রত্যেক ব্যাংকের সঙ্গে (বিডিবিএল ব্যতীত) সমোঝতা স্মরাক অনুযায়ী, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তদারকি করা হচ্ছে। আর্থিক সূচকসমূহের উন্নতি ও ব্যাংক ব্যবস্থাপনার জবাবদিহিতা বাড়াতে ইতোমধ্যে অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স কন্ট্রাক্ট করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা গাইডলাইন যথাযথভাবে পরিপালনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যোগ করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনাল কন্ট্রোল অ্যান্ড কমপায়েন্স বিভাগ শক্তিশালী করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে।
খেলাপি ঋণ ২৮ হাজার কোটি টাকা
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ৮টি ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ২৮ হাজার ৫৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
তিনি জানান, চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে বিতরণ করা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকার মধ্যে ঋণের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৬ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে সোনালী ব্যাংকের- ৭ হাজার ৯৭৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। খেলাপি ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে কম বিডিবিএলএ’র- ৬৩০ কোটি ১২ লাখ টাকা। বাকি ৬ টি ব্যাংকের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের ৪ হাজার ৫৮৮ কোটি ১৩ লাখ, বেসিক ব্যাংকের ৬ হাজার ৩শ’ কোটি ৮২ লাখ, জনতা ব্যাংকের ২ হাজার ৮৩০ কোটি ৬৮ লাখ, রূপালী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৪৭ কোটি ৭৬ লাখ এবং বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংকে ৩ হাজার ৮৬১ কোটি এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
খেলাপি ঋণ আদায়ে সরকার তথা বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের জন্য ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। খেলাপি/শ্রেণীকৃত ঋণ আদায়ের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তদারকির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি পৃথক টাস্কফোর্স সেল গঠন করা হয়েছে। ওই সেলের মাধ্যমে অর্থ ঋণ আদালতসহ অন্যান্য আদালতে দায়েরকৃত মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন