অর্থনৈতিক রিপোর্টার : মাতারবাড়ীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করে সারাদেশে বিদ্যুৎ সুবিধা ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিডের সক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিডের সক্ষমতা বৃদ্ধি শীর্ষক একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটিসহ মোট ৮ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় একনেক চেয়ারপাসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অনুমোদিত এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ২৬ কোটি ৭২ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৫৩৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪ হাজার ৩০১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান (২০২০) অনুসারে জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়িতে কয়লাভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নাধীন।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পের মাধ্যমে মাতারবাড়ি থেকে ঢাকায় বিদ্যুৎ আনতে নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাট থেকে চট্টগ্রামের মদুনাঘাট পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে লাইনটি ২৩০ কেভিতে চার্জ করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। পরবর্তীতে মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ঢাকায় সরবরাহ করা হবে। অন্যদিকে মাতারবাড়ি থেকে চট্টগ্রামের মাদুনাঘাট পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে পৃথক একটি প্রকল্পের মাধ্যমে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জাইকার নিয়োগ দেওয়া পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার কোম্পানি এবং টোকিও ইলেকট্রিক পাওয়ার সার্ভিস কোম্পানি ইতোমধ্যেই সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম সমাপ্ত করেছে।
মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়েছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্লান-২০২০ অনুসারে জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নাধীন। মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ঢাকা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণে জাইকার অর্থায়নে সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার মধ্যে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑএটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ারড পাওয়ার (২) পিজিসিবি অংশ, মাতারবাড়ি-মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৯০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। ঠাকুরগাঁও চিনিকলের পুরনো যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন এবং সুগার বিট থেকে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১১ কোটি ১০ লাখ টাকা। শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন কম্পোনেন্ট-২ দেশের ৭টি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডায়াগনেস্টিক ইমেজিং ব্যবস্থার আধুনিকরণ প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন (২য় পর্যায়) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫২ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। তারাইল-পাঁচুরিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ (২য় পর্যায়) প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩২২ কোটি ১ লাখ টাকা। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রাজশাহী মহানগরীর অন্তর্ভুক্ত সোনাইকান্দি-বুলনপুর পর্যন্ত এলাকা রক্ষা প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ ফেজ-৩ প্রকল্পের ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় ঢাকা মহনগরীর লো ইনকাম কমিউনিটি (এলআইসি) এলাকার ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ সেবার মান উন্নয়ন এবং ঢাকা ওয়াসার ফাইন্যান্সিয়াল মডেলিং ও কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০ কোটি টাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন