মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী বিশ্ব

অভ্যুত্থানের খবর শুনেই আমরা মারমারিস থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই : এরদোগান

প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বেকি অ্যান্ডারসন : মি. প্রেসিডেন্ট, আমাদেরকে প্রথম সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। অভ্যুত্থান চেষ্টার পরিণতি নিয়ে কথা বলার আগে ওই রাতে কী ঘটেছিল, সেই আলোচনায় ফিরে যেতে চাই। আপনি কোথায় ছিলেন? আপনি কী করছিলেন? আপনি কিভাবে বুঝতে পারলেন অভ্যুত্থানের বিষয়টি?
এরদোগান : আপনাকে অত্যন্ত ধন্যবাদ। ১৫ তারিখে আমি পরিবারের সাথে ছিলাম। আমরা পাঁচ দিনের ছুটিতে মারমারিসে ছিলাম। ওই দিন রাত ১০টার দিকে কিছু খবর পাই। আমাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়। ইস্তাম্বুল, আঙ্কারা এবং আরো কয়েকটি জায়গায় কিছু কিছু মুভমেন্ট চলছে। আমরা তখনই মারমারিস থেকে সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। আমার সাথে স্ত্রী, আমার মেয়ের জামাই, আমার নাতি-নাতনীরা ছিল। ফলে বিষয়টা আরো গুরুতর ছিল বলে মনে করতে পারেন। তবে সেখান থেকে চলে যাওয়ার আগে আমি স্রেফ ক্যামেরা আর মিডিয়াকে ডাকতে চাইলাম। আমি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে পুরো তুর্কি জনগণের কাছে পৌঁছাতে চাইলাম। এ কারণে মিডিয়া ও সম্প্রচারের জন্য আমাকে ‘প্লান বি’-এর সাহায্য নিতে হলো। আমাদের কাছে ছিল সেলফোন, স্মার্টফোন। আমরা কয়েকটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে স্মার্টফোনের সাহায্যে লাইভ টিভির পথ বেছে নিলাম। এসব সম্প্রচারের মাধ্যমে আমি জনগণকে রাজপথের দখল নিতে এবং নগরীর চত্বরগুলোতে জমায়েত হতে বললাম।
এই আহ্বান জানানোর সাথে সাথে প্রথম যে সাড়া পেলাম, তাতে আমাকে জানানো হলো, জনগণ সত্যিই ব্যাপক হারে রাস্তায় নেমে এসেছে। এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূণ। কারণ ক্ষমতা দখলে ইচ্ছুক অভ্যুত্থান চেষ্টাকারীদের মোকাবেলার এই একটা পথই ছিল, আর তা হচ্ছে জনগণের মাধ্যমে পাল্টা অভ্যুত্থান করা। আমাদের জনগণ সেটাই করেছে।
বেকি অ্যান্ডারসন : আপনি ফেসটাইম ব্যবহার করে আমাদের সহযোগী চ্যানেল সিএনএন টার্কের এয়ারওয়েভ বেছে নিয়েছিলেন। আপনি আপনার সমর্থকদের রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এটা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এই প্রথম আপনাকে কেউ দেখতে পেলেন। আপনি কি একমত হবেন, বেসরকারি মালিকানাধীন, নিরপেক্ষ একটি চ্যানেলের মাধ্যমে আপনার আহ্বান এতোটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হবে? আপনার অভিজ্ঞতায়, স্বাধীন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রশংসা একটা মাত্রা পর্যন্ত আপনাকে করতেই হবে।
এরদোগান : অবশ্যই। আমরা সবসময়ই স্বাধীন গণমাধ্যম, বেসরকারি মালিকানাধীন মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের প্রসারের পক্ষে রয়েছি। আমাদের সরকারের ১৪ বছরের শাসনামলে আমরা সবসময় এসবের ব্যবস্থা করেছি। আমরা অনেক প্রতিবন্ধকতা দূর করেছি, আমরা এ ধরনের উদ্যোক্তাদের সমর্থন করেছি। আর সিএনএন ওই রাতে আমাদের বক্তব্য সম্প্রচার করার ইচ্ছা প্রকাশ করলে আমরা রাজি হলাম। বক্তব্য প্রচার করা প্রথম চারটি চ্যানেল ছিল সিএনএন, হ্যাবেশ, এনটিভি এবং এনটিজিআরটি। বেকি অ্যান্ডারসন : ওই রাতে মত প্রকাশে আপনার নিজের স্বাধীনতা লাভের সুযোগটি বিবেচনা করে আপনি কি এখানে থেকে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে স্বাধীন মিডিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবেন? আমরা পরবর্তী কোনো বিষয়ে যাওয়ার আগে স্রেফ এটা জানতে চাইছি।
এরদোগান : বেকি, শুনুন। মুক্ত সংবাদমাধ্যমের সাথে আমার কোনোকালেই সমস্যা ছিল না। কেউ যদি বলে, তুরস্কে এখনো সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই, তবে যা বলবো তা হলো তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়েছে। অনেকে অভ্যুত্থানকারীদের সাথে ছিল। আবার অভ্যুত্থান চেষ্টার বিরুদ্ধেও অনেক মিডিয়া অবস্থান নিয়েছিল। তাই আমার প্রশ্ন হলো, অভ্যুত্থান সমর্থকারী মিডিয়ার বিরুদ্ধে কি তুর্কি বিচার ব্যবস্থা কোনো পদক্ষেপ নেবে না? অবশ্যই নেবে। কেন? কারণ অভ্যুত্থান চেষ্টাকে দমন করতে চাইলে যারা এর সাথে রয়েছে তাদেরও তাদের উপযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে তাই না? তাদের সাথে উপযুক্ত আচরণ করতে হবে, তা না হলে নাগরিকেরা, অর্থাৎ জনগণ ভুল তথ্যে প্রতারিত হবে। অন্যদিকে, আমরা এমন এক পরিস্থিতির কথা বলছি, যেখানে ২৮০ জন তাদের জীবন হারিয়েছে, তাদের বেশির ভাগই বেসামরিক নাগরিক। ১,৫০০ লোক আহত হয়েছে। ১৫০ জনের অবস্থা গুরুতর। জনগণই আমাকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। আমি যদি কিছু না করি, তারা সময় এলে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে। সেটা ঠিকই হবে। আর মারমারিসেও আমার বিরুদ্ধে অভিযান চলেছে। আমার দুই ঘনিষ্ঠ দেহরক্ষী শহীদ হয়েছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমি সেখানে আর ১০ থেকে ১৫ মিনিট থাকলে আমি নিহত হতাম বা আমাকে আটক করা হতো। অবশ্য নিজেদের মধ্যে, আমাদের বন্ধুদের সাথে আমরা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করেছি। তারপর আমরা স্থান পরিবর্তনের আয়োজন করি। এতেই আমাদের আটক করার ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা ভ-ুল হয়ে যায়। এখন আমাদের সব শহীদের স্মৃতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং যারা আহত, তাদের আরোগ্য লাভের জন্য কিছু করতে হবে। (চলবে)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
আরফান ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০২ পিএম says : 0
নেতা তোমায় স্যালুট
Total Reply(0)
মোঃ আব্দুল গাফফার ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১:০৩ পিএম says : 0
এরদোগান! অন্য অনেক নেতা হতে তুমি উঁচু অসমান ঈমান একটি গুণ সহ্স্র গুণের মাঝে তোমাকেকরেছে এক্সেপশনাল, সালাম তোমাকে।পিছন ফিরে তাকিও না, এগিয়ে যাওবিশ্ব নেতার মুকুটটি এবার ছিনিয়ে নাও
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন