শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

সংখ্যা তত্ত্বের ঘূর্ণিপাকে বিএনপি

প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আফজাল বারী : সংখ্যা তত্ত্বের চক্করে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। এই ঘুর্নিপাকে জাতীয় ও দলীয় ইস্যু পর্দার আড়ালে চলে গেছে। রাজপথের বিরোধী দলটির প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা চিড়ে চেপ্টা হচ্ছে। খোদ দলের নেতাকর্মীসহ বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরাও এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
তাদের মতে, সরকারের বিরোধী মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিএনপিকে এখন যেসব কথা বলা বা কাজ করা উচিৎ তা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। এতেকরে সরকারের পাহাড়সম ব্যর্থতা ঢেকে যাচ্ছে ‘সংখ্যা নির্ধারনের মতো ছোট্ট ইস্যুতে।
‘আগুনে পুড়ে লোহা টকটকে লাল হলেই তাতে হাতুড়ি দিয়ে পিটুনী দিবেন-বিএনপির নীতি নির্ধারকদের কাছে এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নুরুল আমিন বেপারী। রাষ্ট্র বিজ্ঞানী দিলারা বেগম বলেন, পাঁচ বছর পরপর মানুষ ঘুরে ফিরে দুই দলকেই ভোট দেবে। ‘আওয়ামী লীগ-বিএনপি’ এক দলের পর আরেকটি দলই ক্ষমতায় বসবে রাজনৈতিক দলগুলোর মান্দাত্তা আমলের চিন্তা বাদ দিতে হবে। মানুষকে ভবিষ্যৎ স্বপ্ন দেখাতে হবে। তাহলেই নতুন প্রজন্ম সেই দলের দিকে যাবে তাদের সমর্থন করবে।
আলাপকালে বিএনপি নেতাকর্মী এবং দলটির শুভাকাক্সিক্ষরা ইনকিলাবকে বলেন, আট বছর ধরে বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতার বাইরে। রীতিমতো রাষ্ট্রযন্ত্রের সাথে লড়াই সংগ্রাম করছে। সারা দেশের নেতাকর্মীরা সরকারের নির্যাতন নিপীড়নে বিপর্যস্ত। দলীয় প্রধানকে সেনানিবাসের বাড়ি থেকে সরানোসহ জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত চলছে পরিকল্পিতভাবে। সাংগঠনিকভাবে অতীতের অন্য সময়ের চেয়ে ভীত নড়বড়ে হয়ে পড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য, তেল-গ্যাসের উচ্চমূল্য, ব্যবসাবাণিজ্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ধর্মীয়মূল্যবোধ, বাক-স্বাধীনতাসহ মানুষ তাদেও মৌলিক অধিকার খুঁজছে। এরই মধ্যে মুষ্টিমেয় মানুষ ভালো থাকলেও অধিকাংশ মানুষের জীব দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। গত আট বছর ধরেই বিএনপি এসব বিষয় নিয়ে রাজপথ এবং মিডিয়ায় সোচ্চার ছিলো। একই সাথে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে আসছিলো। গত দেড় মাস আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা সম্পর্কিত বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া বলেন, ‘তিনি তো বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি, তিনি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ‘আজকে বলা হয়, এতো শহীদ হয়েছে, এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে। শহীদদের একটি সঠিক সংখ্যা নিরুপন করা দরকার’
বিএনপি চেয়ারপার্সনের এই দাবিকে ঘষেমেঝে মুক্তিযুদ্ধে বিপরীতে দাঁড় করানো হয়েছে। এই স্রোতে সরকারের কোটে বল ঠেলে দিয়েছে বিএনপিরই কিছু নেতা। এখন প্রতিদিনই বিএনপি নেতারা দাবি করে আসছেন শহীদদের সংখ্যা নিরুপন করার। এই ইস্যুতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা, সমনজানি, বাসার গেটে নোটিশসহ তিলকে তাল করে তাই নিয়ে তুলকালাম করছে বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
বিএনপির কূটনীতির কোরের সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ইনকিলাবকে বলেন, দেশের পুলিশ, ক্যাডার, পোলিং-প্রিজাইডিং অফিসার ভোট দিতে পারছে কিন্তু মানুষ আট বছর ধরে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। প্রত্যেকটি সাংবিধানিক ও সায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান আজ দলীয় করণ হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে মানুষ তাদের মৌলিক অধিকার পাচ্ছে না।
তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নেই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, সারা দেশেই শাসক দলেল লোটপাট চলছে। সরকারের ব্যর্থতার কথা কে বলবে? অবশ্যই বিএনপিকেই বলতে হবে। মানুষ এই দলটির কাছে প্রত্যাশা করে। গত আট বছর ধরে বিএনপি চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মানুষের ভোটের অধিকার আদায়ের আন্দোলন করছে। বিএনপি নেতাদের বাচনে মনে হয় দেশে কোন সমস্যা নেই। শুধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিরুপন করতে পারলেই হলো।
সাবেক ছাত্রদল নেতা গোলাম রব্বানী বলেন, সারা দেশের সংসদীয় ৩শ আসনেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট প্রতিনিধিত্ব করছে। ফলে দেশে কোন বিরোধী দল নেই। তারা যে গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে উপস্থাপন করছে সে দলটির কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের
বলেছেন, ‘মানুষ আমাদের বিরোধী দল মনে করে না। তারা জাতীয় পার্টিকে সরকারের অংশ বলে মনে করে। এ কারণে পৌরসভা নির্বাচনে মানুষ লাঙল মার্কায় ভোট দেয়নি। ভোট দিয়েছে নৌকা মার্কায়। বিএনপিকেই বিরোধী দলেল ভূমিকা পালন করতে হবে। এখন সময় জাতিকে আগামীর স্বপ্ন দেখানো।
যুবদল নেতা মাহবুবুল হাসান পিংকু ইনকিলাবকে বলেন, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপি এখনো সঠিক পথে আসেনি। সরকারের ব্যর্থতার চিত্র নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হওয়ার এখনই সময়। একই সাথে সংগঠন শুদ্ধ করতে হবে। যা হচ্ছে তা সরকারের পাতানো ফাঁদে পা দেবার মতো ঘটনা।
ছাত্রদল নেতা জুলফিকার বলেন, বিএনপি মনে হয় আসল কাজ রেখে সরকারের পাতানো পথে হাটছে। দুই মাস পরেই কাউন্সিল এখনো তেমন কোন প্রস্তুতি নেই। শহীদদের সংখ্যা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সাংগঠনিক কাজ থমকে আছে। দিনে দিনে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপির কর্মকা- নিয়ে বিরুপ ধারণা পোষন হচ্ছে বলে এই নেতার মন্তব্য।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন