মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনায় সবকিছু আটকে দিলেও জীবনের তাগিদে লকডাউন শিথিল করতে হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন বলেছেন, এজন্য হয়তো সংক্রমণ একটু বেড়ে গেছে। তবে আশা করি, এটাও আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কতদিন আর মানুষকে এভাবে আটকে রাখা যায়? এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেছেন, মানুষের জীবনের প্রয়োজনটা অনেক বেশি। মানুষের ক্ষতি হবে, মৃত্যু হবে ভেবে যতই আমরা আটকে রাখি না কেন, ক্ষুধার জ্বালাটা তার থেকে অনেক বেশি। মানুষের অন্ন জোগাতে হবে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, জীবন চলমান রাখতে হবে, ছোট ছোট শিশুরা কতদিন ঘরে আটকে থাকবে? তাদের শিক্ষার পরিবেশটা তৈরি করতে হবে।তবে এক্ষেত্রে হয়তো সংক্রমণ একটু বেড়ে গেছে। আশা করি, এটাও আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব। উন্নত দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমাদের স্বাস্থ্যসেবা যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা এটা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। তবুও দেশের জনগণকে বলব নিজেরা একটু সুরক্ষিত থাকুন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে করোনাভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া দেশের নিম্ন আয়ের ৫০ লাখ পরিবারের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণের কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন তিনি। একই অনুষ্ঠান থেকে তিনি স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও ডিজিটাল উপায়ে বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা বলব না সারাক্ষণ মাস্ক পরে থাকেন। কেননা আপনাদের কিন্তু অক্সিজেন নিতে হবে, নিঃশ্বাস নিতে হবে। কারও সঙ্গে কথা বলার সময় বা যখন জনসমাগমে যাবেন বা বাজার-ঘাটে যাবেন তখন পরবেন। যখন অফিসে কাজকর্ম করছেন, যখন নিজে কাজ কর্ম করছেন, তখন মাস্ক পরে থাকতে হবে তা কিন্তু নয়। এটা কিন্তু অনেক সময় ভালোর চেয়ে ক্ষতিও করে।
তিনি বলেন, এমন মাস্ক পরতে হবে যাতে সহজে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায়। এন-৯৫ মাস্ক কিন্তু সাধারণ মানুষের পরার জন্য না। এটা যারা ডাক্তার, নার্স বা কোভিড রোগীর সেবা দেবে তাদের জন্য। এটা সাধারণ মানুষের পরার দরকার নেই বা যৌক্তিকতাও নেই। এমন কি ঘরে তৈরি মাস্কও পরা যায়।
তিন ব্যাংক ও পিকেএসএফের মাধ্যমে ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা : গতকাল কর্মসৃজন কার্যক্রম নামে আরো দুই হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এ নিয়ে দেশে ১৮টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হলো। ১৮তম প্যাকেজে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, কর্মসংস্থান ব্যাংক ও পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনকে ৫০০ কোটি করে সর্বমোট ২০০০ কোটি টাকা প্রণোদনা দেয়া হবে। এখন পর্যন্ত ঘোষিত এসব প্যাকেজে টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।
কর্মসংস্থান ব্যাংকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিনা জামানতে একজন যুবক- তিনি শিক্ষিতই হোন, আর অশিক্ষিত হোন; বেকার হলেই জামানত ছাড়াই স্বল্পসুদে ২ লাখ টাকা ঋণ নিতে পারবেন। এই ঋণ নিয়ে নিজেরা ব্যবসা করতে পারেন। এই ব্যাংকের ঋণ আরো বৃদ্ধি করার জন্য সরকার বিশেষ আমানত দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে বলেন, আমাদের যুবক শ্রেণি বেকার হয়ে যাতে ঘুরে না বেড়াতে হয়। তারা যেন ঋণ নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারে। এসময় প্রবাসীদের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের যারা প্রবাসী রয়েছেন, তারাই কিন্তু আমাদের রেমিট্যান্স পাঠান। তারা যেন জমিজমা ও ঘরবাড়ি বিক্রি না করে ঋণ নিয়ে বাইরে যেতে পারেন সেজন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক নামে আরেকটি ব্যাংক আমি প্রতিষ্ঠা করি। সেই ব্যাংকেও আমরা আরও টাকা দিবো। এর আগে ৪০০ কোটি টাকা দিয়েছিলাম, আরও অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকা দিবো।
এর কারণ ব্যাখ্যায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জানি যে এখন প্রবাসে কাজের পরিধিটা সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। সেখানে বহু মানুষ কাজ হারাচ্ছেন। অনেকেই দেশে ফিরে আসছেন। তারা আমার দেশের নাগরিক। তারা কোথাও কষ্ট করুক তা আমরা চাই না। তারা ফিরে আসতে চাইলে ফিরে আসুক। কিন্তু এখানে এসে তারা যেন কিছু কাজ করে খেতে পারেন, তাদের কর্মসংস্থান ব্যাংকের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা করেছি।
পরিচয় নিশ্চিত হয়ে অর্থ দেয়ার নির্দেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের : সরকারের তালিকা অনুযায়ী সুবিধাভোগীর পরিচয় যাচাই করে এই অর্থ প্রদান করতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ জন্য যাদের মোবাইল অ্যাকাউন্ট নেই তাদের নতুন হিসাব খোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। এ কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্ন সেবার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেম্স ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে। নির্দেশনার চিঠি এমএফএস সেবা প্রদানকারী সব ব্যাংক ও তাদের প্রোভাইডার এবং ডাক অধিদফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে সরকার ৫০ লাখ দুস্থ পরিবারের জন্য নগদ সহায়তা সরাসরি সুবিধাভোগীর মোবাইল হিসাবে প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ লক্ষ্যে নিরবচ্ছিন্ন সেবা নিশ্চিতকরণে এমএফএস সেবা প্রদানকারী সব ব্যাংক বা তাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলো থেকে নিরবচ্ছিন্ন লেনদেন নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া নগদ সহায়তা প্রদানের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তক প্রদত্ত সুবিধাভোগীর তালিকা মোতাবেক জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) যাচাইপূর্বক এমএফএস একাউন্ট খোলার নিমিত্তে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নগদ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য এজেন্ট পয়েন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণ নগদ অর্থের সরবরাহ নিশ্চিত করতে এমএফএস প্রোভাইডারকে নির্দেশনা দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে মে এবং জুন এই দুই মাস ৫০ লাখ পরিবার আড়াই হাজার টাকা করে পাঁচ হাজার করে টাকা পাবেন। এ কাজে সহযোগিতা করছে মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সেবাদানকারী চার প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো- বাংলাদেশ ডাক বিভাগের আর্থিক লেনদেন সেবা ‘নগদ’, ব্রাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং ‘বিকাশ’, ডাচ বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ এবং রাষ্ট্রায়ত্ব রূপালী ব্যাংকের ‘শিওরক্যাশ’। ইতোমধ্যে এক হাজার ২৫৭ কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সহায়তার এ অর্থ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিনা খরচে প্রত্যেক পরিবারের হাতে ঈদের আগে পৌঁছে দেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন