সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সাজা ন্যায় বিচার পরিপন্থী -বিএনপি

প্রকাশের সময় : ২৩ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫০ পিএম, ২২ জুলাই, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : মুদ্রা পাঁচার মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া সাজা ‘ন্যায় বিচারের পরিপন্থি’ দাবি করে বিএনপি বলেছে, তারেক রহমান ন্যায় বিচার পাননি, তার পক্ষের আইনজীবীরা বক্তব্য রাখতে পারেনাই। তিনি (তারেক) দেশে ফিরলে এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপীল করা হবে।
গতকাল শুক্রবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের অবস্থানের কথা জানান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।
তিনি বলেন, হাইকোর্টের এই সাজা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। হাইকোর্ট একতরফাভাবে এই বিচার করেছেন। সেখানে তারেক রহমানের পক্ষে কোনো আইনজীবী বক্তব্য রাখতে পারেন নাই। ইনশাল্লাহ যখন সময় আসবে, তারেক রহমান এই মাটিতে আসতে পারবেন। আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করবো। আপীল করে আমরা দেখাতে পারবো, এই মামলাটি সম্পূর্ণভাবে বেআইনি হয়েছিলো। আমি বিশ্বাস করি, এই মামলায় একদিন সুবিচার হবে, দেশের মানুষ জানতে পারবে যে তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য সরকার সাজা দিয়েছিলো।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপীলের বিষয়ে জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, যেহেতু আমাদের অনুপস্থিতিতে এই মামলায় বিচার হয়েছে, অনুপস্থিতিতে সাজা দিয়েছে। সেক্ষেত্রে আইনের বিধান অনুযায়ী যে পর্যন্ত তারেক রহমান সাহেব বাংলাদেশে না আসেন এবং এখানে হাজির না হন, সেই পর্যন্ত তার পক্ষে আপীল করা সম্ভব না।
আইনমন্ত্রী বলেছেন, নিম্ন আদালতকে প্রভাবিত করা হয়েছিলো- এই প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, এই কথা আমিও বলি, যেহেতু তারা যখন বলতে চান যে বিচারিক আদালতকে প্রভাবিত করেছে। বিএনপির পক্ষে যদি প্রভাবিত করা যায়, তাহলে সরকার পক্ষ কতটা প্রভাবিত করতে পারেন, কোন পর্যন্ত যেতে পারেন, সেটা আপনারা বিবেচনা করবেন।
ঘুষ হিসেবে আদায়ের পর ২০ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগে করা এ মামলায় জজ আদালত ২০১৩ সালে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেককে খালাস এবং তার বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদ- দিয়েছিল।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের রায়ে হাইকোর্ট গত বৃহস্পতিবার মামুনের সাজা বহাল রেখে তারেকের খালাসের রায় বাতিল করেছে। খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারককে সাত বছরের কারাদ-ের সঙ্গে করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা জরিমানা। মামুনের আপিল খারিজ এবং দুদকের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত বৃহস্পতিবারে হাইকোর্টে তারেক রহমানকে সাজার দেয়ার বিষয়ে দলের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া ও করণীয় জানাতেই এই সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে গুলশানের কার্যালয়ে খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে সিনিয়র নেতাদের এক জরুরি বৈঠকে এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করা হয়।
তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাটি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, বাংলাদেশ থেকে একটি পয়সাও বিদেশে যায়নি। খাদিজা ইসলামের বক্তব্য সরাসরি সরকার গ্রহণ করেছে এবং আদালতও সেটা গ্রহণ করেছে। সেখানে তারেক রহমানের নাম গন্ধ নাই। তারেক রহমানের অপরাধ তিনি রাজনৈতিক নেতা। তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের পুত্র, আমাদের দলের আগামী দিনের সেনাপতি। তাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করার জন্য, পর্যদস্ত করার জন্য, জনসমুক্ষে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সরকার সেই ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের ঘটনা, সেই ঘটনার ওপরে ২০০৬ সালে মামলা করে তার অনুপস্থিতিতে সাজা দেয়া হয়েছে।
হাইকোর্টের মামলার শুনানি সময়ে কথা উল্লেখ করে তিনি অভিযোগ করেন, একতরফাভাবে বিচার হয়েছে। তারেক রহমানের পক্ষে কাউকে বক্তব্য রাখতে দেয়া হয়নি। আকার-ইংগিতে আমাদের সাবেক এটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ মামলা করতে ছিলেন। আমাদের এটর্নি জেনারেল বললেন, যদি এজে মোহাম্মদ আলীর বক্তব্যে তারেক রহমানের স্বপক্ষে কোনো বক্তব্য এসে থাকে মাননীয় আদালত আইনের বিধানমতে তার বক্তব্য আপনার রায়ের উল্লেখ করতে পারবেন না। কারণ সেটি ফিউজিটিভ।
এক্ষেত্রে একজন লোককে হাত-পা বেঁধে তাকে দুর্নীতিবাজ বলে অর্থ পাঁচার করেছে বলে এই যদি অবস্থা হয় দেশে। সেখানে আমাদের বিচার ব্যবস্থা কোথায় যাবে, তাহলে আমরা সাধারণ মানুষও বা কোথায় যাবে?
সরকারের প্রতি ইংগিত করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এখনো সময় আছে, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য আদালতের স্মরণাপন্ন না হয়ে রাজপথে আসুন, রাজপথে ফয়সালা করুন। আর যদি আসতেই হয়, সঠিকভাবে সঠিক ব্যক্তি দিয়ে তদন্ত না করে মামলার সাক্ষী প্রমাণ নিজেরই তৈরি করে পেছনের দরজা দিয়ে যদি সাজা দেয়ার চেষ্টা করেন, তার পরিণতি দেশের আইনের শাসন ধবংস হয়ে যাবে, বিচার ব্যবস্থার ওপরে মানুষের আস্থা হারিয়ে যাবে।
গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ করে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তারেক রহমান ঘুষ নিয়েছেন কিনা, দিয়েছে- এরকম কোনো অভিযোগ আছে কিনা। তারেক রহমানের বিদেশে কোনো ব্যাংক একাউন্ট আছে কিনা-এসব তুলে ধরুন। অর্থ পাঁচারের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তারেক রহমানকে এই মামলায় কোনো অবস্থাতে সাজা দেয়া সম্ভবপর নয়। আমরা বলব, এই সাজা ন্যায় বিচারের পরিপন্থি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, নির্মাণ ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান চাইনিজ কোম্পানির লোকাল এজেন্ট খাদিজা ইসলাম তিনি নিজে আদালতের কাছে জবানবন্দিতে বলেছেন, আমি কোনো ঘুষ দেই নাই। তিনি কোথাও বলেননি তারেক রহমানের নাম।
সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আসম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস-চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ শাহজাহান, যুগ্ম-মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, খায়রুল কবীর খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিন জাহান শিরিন, বিএনপি নেতা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, নুরী আরা সাফা, আনোয়ার হোসেইন, শাহ আবু জাফর, আব্দুস সালাম আজাদ, শামীমুর রহমান শামীম, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন