শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ সত্ত্বেও চলছে অর্থনৈতিক মন্দা ঠেকানোর লড়াই

খুলছে বিশ্বব্যাপী লকডাউন শেষ পর্ব

এএফপি | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২০, ১২:০১ এএম

শুক্রবার অস্ট্রিয়া তার রেস্তোঁরা ও আইকনিক ভিয়েনেস ক্যাফে পুনরায় চালু করে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীকী পদক্ষেপ নিয়েছে। অস্ট্রিয়ান রাজধানীর একটি ক্যাফেতে প্রাতঃরাশের অপেক্ষায় থাকা ১৯ বছর বয়সী শিক্ষার্থী ফ্যানি এবং সোফি বলছিলেন, ‘আমরা এটি মিস করেছি এবং আমরা যথাসম্ভব ফিরে আসব।’

ইতোমধ্যে আয়ারল্যান্ড জাতির মধ্যে আগত লোকদের জন্য ১৪ দিনের পৃথকীকরণের একটি সময়কালে বেঁধে দিয়ে লকডাউন তুলে নিতে যাচ্ছে।

বিশ্বের অন্যদিকে, এক সপ্তাহব্যাপী লকডাউনটি শিথীল হওয়ায় শুক্রবার সিডনির বার ও রেস্তোঁরা গ্রাহকদের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহরের খাবারের দোকান দ্য সসেজ ফ্যাক্টরির মালিক ক্রিসি ফ্লানাগান বলেছেন, ‘আপনার সাথীদের সাথে আপনার বাড়ি নয় এমন জায়গায় বসে মাতাল করার আকাক্সক্ষা সত্যিই অপ্রতিরোধ্য।’

স্পেন লকডাউন শিথিলের পদক্ষেপ হিসেব জানিয়েছে, মাদ্রিদ ও বার্সেলোনায় এখন থেকে সর্বোচ্চ ১০ জন লোক দলবদ্ধ হয়ে সাক্ষাৎ করতে পারবেন। ইউরোপের অন্যান্য দেশের মধ্যে বেলজিয়াম সোমবার থেকে কঠোর শর্তে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল খোলার অনুমতি দিয়েছে। পাশাপাশি পতুর্গাল, গ্রিস, ডেনমার্ক ও আয়ারল্যান্ডসহ আরো কয়েকটি দেশ লকডাউন শিথিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে। এদিকে, লকডাউন তুলে নেয়ার দাবিতে জার্মানি, ব্রিটেন ও পোল্যান্ডে বিক্ষোভ করেছে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী।

গত রোববার লন্ডনের হাইড পার্ক, সাউদাম্পটন, কারডিফ, গ্রাসগো ও নটিংহামে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ অমান্য করে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ হয়। গেল শনিবার জার্মানির স্টুটগার্টে ৫ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারী জড়ো হন। ফ্রাঙ্কফুর্টে জড়ো হন প্রায় ১ হাজার ৫ শ’ ও মিউনিখে ১ হাজার বিক্ষোভকারী। তারা ‘করোনা ভুয়া’, ‘আইসোলেশন, মাস্ক, ট্রেসিং, ভ্যাকসিন চলবে না’ সহ লকডাউনবিরোধী নানা ব্যানার ও পোস্টার নিয়ে বিক্ষোভ করেন।

মার্কিন অর্থনৈতিক দুর্দশা: ভাইরাসটির বিপর্যয়ম‚লক অর্থনৈতিক প্রভাব স্পষ্ট হওয়ার সাথে সাথে লকডাউনগুলি সহজ করে দেয়ার চাপ আরো বেড়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮৫ হাজারেরো বেশি মৃত্যুর পাশাপাশি গত এপ্রিলে শিল্প উৎপাদন ১১.২ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে, যা বিগত ১০১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন। করোনাভাইরাস সংকটে ৩৬.৫ মিলিয়ন আমেরিকান বেকার হওয়ায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার ১০ শতাংশেরো বেশি, ট্রাম্প নভেম্বরে পুনরায় নির্বাচিত হতে লকডাউন ব্যবস্থা সহজ করতে আগ্রহী।

তবে প্রেসিডেন্ট করোনাভাইরাসকে ‘চীন থেকে আসা প্লেগ’ বলে অভিহিত করেন এবং দায়বদ্ধতার জন্য বেইজিংকে অভিযুক্ত করে মৌখিক যুদ্ধ শরু করেছেন এবং দু›দেশের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকি দিয়ে তিনি মহামারী পরিস্থিতির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন। গত বছরের শেষ দিকে এই ভাইরাসটি বিমান ভ্রমণ এবং বিশ্বায়িত অর্থনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আগে চীনা শহর ওহানে প্রথম আবির্ভ‚ত হয়েছিল। ইউরোপের শীর্ষ অর্থনীতি জার্মানি ২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের পর এবার সবচেয়ে খারাপ ত্রৈমাসিক সংকোচনের মধ্যে পড়ে মন্দা ডেকে এনেছে।

দুঃস্বপ্নের দৃশ্য: মহামারীটি রাজনৈতিক ক্ষোভের কারণ ঘটিয়েছে। একজন ব্রাজিলের কর্মকর্তা যখন মন্তব্য করেন যে, দেশের ঘনিভূত করোনভাইরাস সঙ্কটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ডানপন্থী রাষ্ট্রপতি জায়ের বলসোনারোর দৃষ্টিভঙ্গিতে অসঙ্গতি ছিল, নেলসন টিইক গত শুক্রবার পদত্যাগ করেন এবং এক মাসের মধ্যে দেশটি তার দ্বিতীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে হারায়। বলসোনারো ঘরে অবস্থান করার ব্যবস্থা গ্রহণের তীব্র সমালোচক ছিলেন।

ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে ভাইরাসের পদযাত্রা অব্যাহত রয়েছে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন বলেছে যে, আফ্রিকাতে ৪ কোটি ৪০ লাখ মানুষ সংক্রমিত হতে পারে এবং ১ লাখ ৯০ হাজার অবধি মারা যেতে পারে। বাংলাদেশে বিশে^র বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরের সংক্রমণগুলি আবিষ্কারের ‘দুঃস্বপ্নের দৃশ্য’ নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে, যেখানে প্রতিবেশী মায়ানমারে বিক্ষোভের মধ্য থেকে আসা ১০ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বসবাস করছেন। ফিলিপাইনে একটি শক্তিশালী ঝড় বিতাড়িত কয়েক হাজার মানুষকে আবদ্ধ আশ্রয়কেন্দ্রগুলিতে অবস্থান করতে বাধ্য করার ফলে সামাজিক দ‚রত্ব প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

সংক্রমণের শিকারের পরিধিও বাড়ছে। ডাবøুএইচও বলেছে যে, তারা কোভিড-১৯ এবং একটি বিরল প্রদাহজনিত অসুস্থতা, যা ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিশুদেরকে অসুস্থ এবং হত্যা করেছিল, দু’টির মধ্যে একটি সম্ভাব্য যোগস‚ত্র নিয়ে গবেষণা করছে। (সমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Md Moktar Hossen ১৯ মে, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে অন্তত আরেকটি মাস লকডাউন কঠিন ভাবে পালন করা উচিত বেঁচে থাকলে অনেক টাকা পয়সা ইনকাম করা যাবে
Total Reply(0)
Ahsan Zahid ১৯ মে, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
২০৫০ সালের ইতিহাস বইতে শিক্ষার্থীরা পড়বে"এই পৃথিবীতে একটি জাতি ছিলো যারা কেবল শপিং আর ঈদের বাজার করার কারণে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে"
Total Reply(0)
Udoy Desperate ১৯ মে, ২০২০, ১:১৩ এএম says : 0
সরকারের কঠোর হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। সব মরে সাফ হয়ে যাক, তাতে অন্তত দেশ থেকে কিছু মূর্খ্য কমবে। সরকারের কাছে অনুরোধ যারা বাঁচতে চায় তারা যেন সেই সুযোগটুকু পায়। গরু পিটিয়ে মানুষ বানানো যায় না।
Total Reply(0)
Md Akram Hossen ১৯ মে, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
যা হওয়ার তা হয়েই গেছে শহরের ৭০% লোক গ্রামে চলে এসেছে বাকি ৩০% মাটির নিচ দিয়ে সুরঙ্গ কেটে উড়ে হেটে নদী সাতরিয়ে হলেও বাড়ি আসবেই
Total Reply(0)
Rubel Ahmed Shishir ১৯ মে, ২০২০, ১:১৪ এএম says : 0
সরকার কঠোর হওয়ার কি আছে, যারা দুই মাসের উপরে সরকারে কথা ধরে শহরে বসে ছিলো তারা কি ভাবে চলছে? গ্রামে তো শাক সবজি দিও জীবন বাচাতে পারতো। বরং শহরে রেখে এদেরকে ঝুঁকিতে পড়তে হলো। এখন ত্রানের জন্য লম্বা লাইনে দাড়িয়ে করোনা নিয়ে বাসায় ফিরে। তারও দলের কার্ড ছাড়া সরকারী ত্রান পায় না।
Total Reply(0)
Md Bipul Nazir ১৯ মে, ২০২০, ১:১৫ এএম says : 0
Government should focus to establish a sustainable chain of management & proper co-ordination/ communication system to channel the right information/ instruction.
Total Reply(0)
Noor Ul Islam Islam ১৯ মে, ২০২০, ১:১৬ এএম says : 0
শুরু থেকেই দুনিয়া শুদ্ধ মানুষ ভুল পথে হাঁটছে। যে ভাইরাস কিংবা জীবাণুর অস্তিত্ব এবং গমনাগমনের স্থানই নির্ধারণ করা যায়না,সেই ভাইরাস কিংবা জীবাণু ঠেকাতে কত চেষ্টা তদবির! কোথাও লকডাউন তো কোথাও কারফিউ,যা কোনোই কাজে আসেনি আর আসবেও না। কারণ,দীর্ঘমেয়াদী মহাদুর্যোগ বা মহামারীর জন্যে এগুলো কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নয়। যার সফলতা দেখিয়েছে ভিয়েতনাম। তারা লকডাউনের মত অকার্যকর পদক্ষেপ না নিয়েই সফলতা অর্জন করেছে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন