ইনকিলাব ডেস্ক : তুরস্কে সামরিক বাহিনীর একাংশের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর প্রেসিডেন্ট
রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান প্রথম যে সাক্ষাৎকারটি দেন সেটি ধারণ করে আমেরিকান স্যাটেলাইট টেলিভিশন সিএনএন। অভ্যুত্থান চলার সময় কিভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হয়েছে, অভ্যুত্থানের
সাথে জড়িতদের কী ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা করা হতে পারে, গণমাধ্যমের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গি, ব্যর্থ
অভ্যুত্থানের মূল হোতা হিসেবে চিহ্নিত ফতেহউল্লাহ গুলেনের প্রত্যর্পণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের
সাথে আলাপ-আলোচনার অগ্রগতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছেন।
সিএনএন ইন্টারন্যাশনাল’স ‘কানেক্ট দি ওয়ার্ল্ড’-এর উপস্থাপক বেকি
অ্যান্ডারসন এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন।
(পূর্ব প্রকাশের পর)
বেকি অ্যান্ডারসন : ওই রাতে কী ঘটেছিল, তাতে ফিরে যাই। আপনি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে পৌঁছালেন। সিএনএন টার্কের ফেসটাইম সম্প্রচারের মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ওই ফ্লাইটে কী ঘটছিল? কারণ খবর পাওয়া যাচ্ছিল, জঙ্গিবিমানগুলো আপনার বিমানের জন্য ঝামেলা সৃষ্টি করছিল। সত্যি সত্যি তাদের রাডার আপনার বিমানকে লক্ষ করেছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। আপনি কি তখন তা জানতেন?
এরদোগান : তখন কী ঘটছিল আমাকে সাথে সাথেই সব কিছু সঠিকভাবে জানানো হচ্ছিল। তারা ইস্তাম্বুল আতাতুর্ক বিমানবন্দরের ফ্লাইট টাওয়ার নিয়ন্ত্রণ করছিল। আমার ফোনের মাধ্যমে ইস্তাম্বুলের নিরাপত্তা প্রধান এবং পুলিশ প্রধানকে নির্দেশনা দিচ্ছিলাম। আর আমি তাদের ফ্লাইট কমান্ড সেন্টার বা ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরের টাওয়ার নিয়ন্ত্রণকারী অভ্যুত্থানকারীদের হটিয়ে দিতে নির্দেশ দেই। আর তারাই অভিযানটি সফল করে এবং সেখান থেকে তাদের উপস্থিতির অবসান ঘটায়। আমরা ছিলাম আকাশে। ফলে যোগাযোগে কিছু সমস্যা হচ্ছিল। ফ্লাইটের সময় আমার পাইলটদের সাথে কথা বলছিলাম। আমি তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, কতক্ষণ আকাশে থাকতে হবে? তারা বলল, আমাদের লাগবে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আর আমাদের যাত্রা শুরু থেকে আতাতুর্ক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে পর্যন্ত এফ-১৬এস জঙ্গিবিমান আমাদের ওপর দিয়ে, মাটির খুব কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল। সেগুলো সম্ভবত শব্দের চেয়েও দ্রুতগতিতে ছুটছিল। আপনি জানেন শব্দের চেয়ে বেশি গতিতে ছুটলে, যেটাকে বলা হয় সনিক বুম, যে শব্দ হয় সেটা বোমা ফেলার শব্দ বলে ভুল হতে পারে। দুই ধরনের শব্দই একই রকম। আবার আমরা শুনলাম, বিমানবন্দরে ১০ হাজারের বেশি লোক উপস্থিত রয়েছে। আমরা এভাবেই সেখানে পৌঁছি। বিমান থেকে বের হয়ে লোকজনের সাথে আমার প্রথম যোগাযোগ হয়।
বেকি অ্যান্ডারসন : ইস্তাম্বুল অবতরণের কোনো পর্যায়ে কি আপনার মনে এমন কোনো চিন্তার সৃষ্টি হয়েছিল যে আপনি আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট নন?
এরদোগান : এমন কথা একবারও আমার মাথায় আসেনি। কারণ আমার সহকর্মীরা আমার সাথে ছিল। তা নিয়ে একবারও চিন্তা করিনি, সে ধরনের সমস্যার কথা ভাবিনি। আর আমার প্রথম ঘোষণা, প্রথম বক্তব্যের পর থেকে তুরস্ক রাষ্ট্র অটুট ছিল, সরকার কাজ করছিল, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় ছিলেন। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কোনো কারণ ছিল না। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এসব হানাদার থেকে মুক্তি পেতে হবে। আর তাতে লেগেছিল ১২ ঘণ্টা। ১২ ঘণ্টাতেই হয়ে গিয়েছিল। আমরা যা চেয়েছিলাম, তা হাসিল করতে পেরেছি।
বেকি অ্যান্ডারসন : আর প্রথম দিকে যারা বলছিল, আপনি নিজেই এসব ঘটাচ্ছেন, তাদের ব্যাপারে কী বলবেন?
এরদোগান : দেখুন, আমি বলব, এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমি বলতে চাচ্ছি, আমি কিভাবে এসব ঘটাবো? কিভাবে আমি এতো লোকের প্রাণহানির কারণ সৃষ্টি করবো? ২০৮ জন বেসামরিক লোক প্রাণ হারাল, ১,৫০০ লোক আহত হলো, ট্যাংক আটকানোর জন্য লোকজন মাটিতে শুয়ে পড়ল। এটা কিভাবে করা সম্ভব? মানুষের বিবেক কিভাবে সেটা করতে দিতে পারে? না, সেটা কোনোভাবেই করা সম্ভব নয়। আর তাইয়েপ এরদোগান, তার বন্ধু ও সহকর্মীরাই প্রথম এ মধরনের কাজ প্রত্যাখ্যান করবে সবার আগে। এর সম্পূর্ণ বিপরীতে আমরাই সবসময় জনগণের জন্য নিজেদের জীবন বাজি রেখেছি। আমরা এভাবেই রাজনীতি করি। যারা এসব কাজ করেছে, যারা এই অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে, তারাই এমন মানুষ, যারা সবসময় এ ধরনের কাজ করে থাকে। অর্থাৎ এটা আসলে একটা খারাপ কাজের পরিণতিতে ভালো কিছু হয়ে যাওয়া। এর ফলে ফতেহউল্লাহ গুলেনের সন্ত্রাসী সংগঠনটি এই দেশে এ যাবৎকালের সবচেয়ে বড় আঘাত লাভ করছে। কারণ তাদের স্বরূপ উন্মোচিত হয়ে গেছে। এই গ্রুপটি অস্ত্র হাতে নিয়ে সেগুলো ব্যবহারের আগে পর্যন্ত নিরস্ত্র ছিল। এখন সবাই আসল বিষয়টি জানল। তারা এই জাতি, এই রাষ্ট্র, এই জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করেছে। (চলবে)
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন