শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গি সন্দেহে আটক রুমাকে নিয়ে নরসিংদীর জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

প্রকাশের সময় : ২৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : গুলশান হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নরসিংদীর শিবপুর থেকে গ্রেফতারকৃত রুমা বেগমের জঙ্গি সম্পৃক্ততা ও তার মানসিক ভারসাম্যহীনতা নিয়ে স্থানীয় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ ঘটনা বিশ্বাস করছে আবার কেউ করছে না। এ ঘটনায় নরসিংদীর রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা।
রুমার পরিবারের লোকজন বলেছে সে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। কোনো কোনো সময় সে অর্ধ উন্মাদে পরিণত হয়। সে গুলশান হামলায় জড়িত থাকতে পারে না। তবে তারা এও বলেছে জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকলে রুমার বিচার হোক। পাশাপাশি তারা এও চায়, রুমা নিরপরাধ হলে তাকে যেন মুক্তি দেয়া হয়।
এলাকাবাসী জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি টিম বুধবার রাতে পলাশের চরসিন্দুর এলাকায় গিয়ে মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে একটি নম্বর খুঁজে পায়। নম্বরটি ছিল সেই এলাকার টাওয়ারের অধীন। পুলিশ স্থানীয় একটি রাজনৈতিক নেতার আত্মীয়ের সহযোগিতায় সেই মোবাইল নম্বরে ফোন করিয়ে জানতে পারে যে, নম্বরটি জনৈক সোহেল ব্যবহার করছে এবং সে বাজারেরই একজন চা দোকানদার। পুলিশ এ ঘটনা জেনে চা দোকানদার সোহেলকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করে এই নম্বরটি সে কোথায় পেয়েছে। উত্তরে সে জানায় যে, নম্বরটি তাকে তার এক খালা দিয়েছে। তখন পুলিশ সিসি টিভি থেকে সংগৃহীত একটি ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করে ছবির মহিলাটি তার খালা কিনা। ছবিটি অস্পষ্ট থাকায় সোহেল জানায় তার খালা এটা কিনা সে জানে না। তবে তার খালার চেহারাটা এ ধরনেরই।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ মহিলা টিম পাঠিয়ে শিবপুর উপজেলার চরখুপী গ্রাম থেকে রুমাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের সময় রুমা মহিলা পুলিশকে বলে তাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে কেন। তার কি অপরাধ? প্রত্যুত্তরে পুলিশ জানায় যে, তাকে নরসিংদী যেতে হবে। এরপর পুলিশ তাকে চরসিন্দুর বাজারে নিয়ে গেলে সেখানে গিয়ে পুলিশকে জিজ্ঞেস করে সে কোন গাড়িতে উঠবে। এসময় তার আত্মীয়-স্বজন কান্নাকাটি করতে থাকলে সে বলতে থাকে তোমরা কাঁদ কেন, আমি কি চোর না ডাকাত। এ কথা বলার পর পুলিশ তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।
পরে রুমার পরিবারের লোকজন জানায় যে, রুমা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। রুমার বোন সাবিনা বেগম জানায় যে, রুমার দুটি বিয়ে হয়েছিল। দ্বিতীয় স্বামীর মৃত্যুর পর সে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। কোনো কোনো সময় সে অর্ধ উন্মাদ হয়ে যায়। তখন সে তার পরনের কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে। নিজের চুলে আগুন লাগিয়ে দেয়।
প্রতিবেদকের প্রশ্নের জবাবে সাবিনা জানান, মানসিক ভারসাম্যহীনতার ব্যাপারে তাকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি। তার চিকিৎসা করেছে ঢাকার বিশিষ্ট মনরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মুহিত কামাল। তিনি রুমাকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেননি। ৩ মাস ৩ মাস করে দু’বার ওষুধ দিয়েছেন। রুমা ৬ মাস আগে চাকুরির জন্য দুবাই গিয়েছিল। কিন্তু ৩ মাস চাকুরি করেই সে বাড়ি ফিরে এসেছে। রুমার পূর্বের সংসারে ১৪ বছর বয়সের একটি ছেলে রয়েছে। সে লেখাপড়া জানে না, শুধু নিজের নাম লিখতে পারে। এসব ঘটনা নিয়ে নরসিংদীর জনমনে চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।
লোকজন বলছে, গুলশান হামলার ঘটনায় সিসিটিভিতে ছবি দেখে পুলিশ তাকে আটক করেছে। আটকের পর রুমার বোন সাবিনা সাংবাদিকদেরকে জানিয়েছে ঘটনার দিন রুমা আক্তার গুলশানের একটি দোকানে চা পান করছিল। তবে সে জঙ্গি হামলার সাথে জড়িত থাকতে পারে এটা তারা বিশ্বাস করে না। রুমা একজন মানসিক রোগী, জঙ্গি সম্পৃক্ততা থাকলে রুমার বিচার হোক এমন দাবি করেছেন তার বোন সাবিনা এবং পিতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মু. কাহবুদ্দিন বদুও।
পুলিশ ধারণা করছে হামলার সময় সিসিটিভিতে ট্রেস করা মহিলাটি রুমা আক্তার। তাকে আটকের পর তার বোন সাবিনা স্বীকার করেছেন যে, ঘটনার সময় রুমা গুলশান এলাকায় চা পান করছিল। তাহলে একটা মিল পাওয়া যায় যে পুলিশ সিসি-টিভিতে যে মহিলাকে ট্রেস করেছে এবং গ্রেফতার করেছে সে মহিলাই রুমা আক্তার।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সালাউদ্দিন ২৪ জুলাই, ২০১৬, ২:১৪ পিএম says : 0
কিছু বলার নাই
Total Reply(0)
সাব্বির ২৪ জুলাই, ২০১৬, ২:১৭ পিএম says : 0
রুমা নিরপরাধ হলে তাকে যেন দ্রুত মুক্তি দেয়া হয়।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন