নরসিংদী জেলা সংবাদদাতা : অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করায় ভয়াবহ নৌকাডুবির শিকার হয়েছে শতাধিক যাত্রীবাহী একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা। নদের অথৈ পানিতে ডুবে নারী ও শিশুসহ ১০ জন যাত্রীর প্রাণহানি ঘটেছে। অসুস্থ হয়েছে ২০ জন যাত্রী, নিখোঁজ রয়েছে কম-বেশি ১০ জন। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বারৈচা এলাকার আড়িয়ালখাঁ নদে এই নৌ-দুর্ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেÑবিবি মালদার নেছা (৮০), ইয়াছিন মিয়া (৭), সুমাইয়া (৫), ফুলেছা (৫০), রাকিব (১৫), মার্জিয়া (৩), জেরিন (৮), সম্রাট (৫), মালা বেগম (৩০) ও আমেনা বেগম (৭০)।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসী জানিয়েছে, রায়পুরা উপজেলার জংগা শিবপুর বাজার ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দী গ্রামের গনিশাহ্’র মাজারের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। নৌকাটি ব্রিজের নিকট পৌঁছলে হঠাৎ আড়িয়ালখাঁর অথৈ পানিতে ডুবে যায়। এসময় যাত্রীদের আর্তচিৎকারে আশেপাশের লোকজন নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে কিছুসংখ্যক যাত্রীদের উদ্ধার করে পাড়ে তুলতে সক্ষম হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে নারী ও শিশুসহ ১০ জন যাত্রী মারা যায়। পরে লোকজন প্রথমে ৪ জন যাত্রীর লাশ উদ্ধার করে। পরে উদ্ধার হয় আরো ৬ জন। খবর পেয়ে বেলা ৩টায় ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযানে শরীক হয়।
অসুস্থ্য অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ২০ জন যাত্রী। নিখোঁজ থেকে যায় আরো কমবেশী ১০ জন যাত্রী। খবর পেয়ে যাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনরা ঘটনাস্থলে ভিড় জমায়। এসময় স্বজনদের বুক চাপড়ানো আহাজারীতে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। এ অবস্থায় শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার অভিযানে শরীক হয় এবং উদ্ধারের ঘটনা প্রত্যক্ষ করে।
মৃত যাত্রীদের প্রাপ্ত পরিচয় অনুযায়ী মৃত বিবি মালদারের নেছা বেলাব উপজেলার দেওয়ানের চর গ্রামের ফজর আলীর স্ত্রী, ইয়াছিন মিয়া একই গ্রামের কুদ্দুছ মিয়ার ছেলে, সুমাইয়া বারৈচা গ্রামের রবিউল্লাহর কন্যা, ফুলেছা চরমর্জাল গ্রামের মৃত মিয়া বক্সের কন্যা, রাকিব বারৈচা গ্রামের রফিকুল ইসলামের পুত্র, মার্জিয়া বারৈচা গ্রামের মিলন মিয়ার কন্যা, জেরিন একই গ্রামের সুন্দর আলীর কন্যা, সম্রাট একই গ্রামের আকবর মিয়ার পুত্র, মালা বেগম একই গ্রামের রবিউল্লাহর স্ত্রী। এছাড়া আমেনা বেগম নামে আরেকজন ৭০ বছর বয়স্কা বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তার ঠিকানা জানা যায়নি।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, ইঞ্জিনচালিত নৌকাটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ জন। কিন্তু যাত্রী বোঝাই করা হয় একশ’রও বেশি। এর ওপর গাদাগাদি অবস্থায় কিছুসংখ্যক অতি উৎসাহী যাত্রী সাউন্ড বক্সের গানের তালে তালে নৃত্য করার কারণে হঠাৎ নৌকাটি এক দিকে হেলে পড়ায় কমবেশী ২০ ফুট দূরে গভীর পানিতে তলিয়ে যায়।
নরসিংদীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) খন্দকার নূরুল হক, রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, রায়পুরা থানার ওসি মোঃ আজহারুল ইসলাম সরকার ও ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু হেনা মোরশেদ জামান ঘটনাটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক এবং দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, একসাথে এত মানুষের মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না। ঘটনার পরপরই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্ধার কর্মকা-ের সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়। একই সাথে মৃতদের লাশ দাফনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ১০ পরিবারের প্রত্যেকে ৫ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল বরাদ্দ দেয়া হয় এবং প্রশাসনের উদ্যোগে মানবিক কারণে বিনা ময়নাতদন্তে মৃতদের লাশ পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন