এবার লকডাউন শিথিল করতে যাচ্ছে তুরস্ক। দেশটির মন্ত্রীসভার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান জানান, আগামি ১ জুন লকডাউন থেকে বেড়িয়ে আসছে তুরস্ক। এদিকে ৮ জুন থেকে নিউইয়র্ক শহরেরও লকডাউন তুলে নেয়া হচ্ছে।
তুরস্কে ইতিমধ্যেই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। দেশটিতে প্রায় দুই মাস ধরে মসজিদে নামাজ পড়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ ছিল। তবে গত শুক্রবার এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় এরদোগান সরকার। তবে মুসল্লিদের ওপর কড়াকড়ি ছিলো প্রচন্ড। মাস্ক পরিধান ছিলো বাধ্যতামূলক। মসজিদের পাশাপাশি এখন খুলে দেয়া হচ্ছে পার্ক, সমুদ্র বিচ, রেস্টুরেন্ট ও কেয়ার সেন্টারগুলো। তুরস্কের প্রদেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ চালু হতে যাচ্ছে ১ জুন থেকে। সিভিল সার্ভিসের কর্মকর্তারা এদিনই কাজে যোগ দেবেন। তবে লকডাউন তুলে নিলেও নিয়ম কানুন মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন এরদোগান। বৃদ্ধদের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলে জানান তিনি। তুরস্কে এখনো প্রতিদিন এক হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। গত ২৪ ঘন্টায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩৪ জন। এ নিয়ে কোভিড নাইন্টিন মহামারিতে আক্রান্ত হলেন ১ লাখ ৬৪ হাজার তুর্কি নাগরিক। প্রাণ হারিয়েছেন সাড়ে ৪ হাজারেরও বেশি। তবে, ইউরোপের অনেক দেশের চেয়ে তুরস্কে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কম।
তুরস্কে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অস্তিত্ব জানা গিয়েছিল ১১ মার্চ। এর পর থেকে বেশ দ্রুত দেশের প্রতিটি জায়গায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এক মাসের মধ্যেই তুরস্কের সব প্রদেশ আক্রান্ত হয়। চীন ও ব্রিটেনের তুলনায় বেশ দ্রুতগতিতে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে তুরস্কে। অনেকে আশঙ্কা করেছিল, দেশটিতে মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়বে। কিন্তু প্রায় তিন মাসের মাথায় এসেও সেটি ঘটেনি। এমনকি তুরস্কে পুরোপুরি লকডাউনও দেয়া হয়নি। কিন্তু এর পরও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ংকর দিনগুলোতে তুরস্কে মৃতের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, তুরস্কের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি সম্পর্কে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। কারণ বহু দেশে এখনো প্রচুর মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
তবে ব্রিটেনের কেন্ট ইউনিভার্সিটির ভাইরোলজির শিক্ষক জেরেমি রসম্যান বলেন, তুরস্ক বেশ পরিষ্কারভাবেই একটি বড় ধরনের দুর্যোগ পাশ কাটিয়ে গেছে। রসম্যান বলেন, ‘যে কয়েকটি দেশ মোটামুটি দ্রুততার সঙ্গে টেস্ট করেছে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা মানুষকে শনাক্ত করার মাধ্যমে তাদের আলাদা করেছে, তদের মধ্যে তুরস্ক অন্যতম।’ তিনি বলেন, যে কয়েকটি দেশ সংক্রমণের বিস্তার কমাতে সক্ষম হয়েছে তুরস্ক তাদের মধ্যে অন্যতম।
এদিকে, করোনাভাইরাস মহামারী চলাকালীন নিউইয়র্ক রাজ্যের সর্বশেষ বন্ধ অঞ্চল নিউ ইয়র্ক সিটি প্রথম ধাপে ৮ জুন থেকে খোলার তারিখ ঘোষণা করেছে শহরটির গভর্নর অ্যান্ড্রু কুওমো । তিনি সবাইকে মাস্ক ও সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে সতর্কভাবে চলাফেরা করার আহ্বানও জানিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে আরও ৫টি শহর খোলার আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। তিনি জানান, ‘ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন এবং কুইনস জুড়ে করোনার হটস্পটগুলোয় সংক্রমণ আরও কমাতে সমন্বিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে রাজ্য ও শহরগুলোর সরকার কাজ করবে। একই সঙ্গে তারা অনলাইনে কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং পর্যবেক্ষণ করবেন এবং আরও পিপিই ও মাস্ক বিতরণের কাজ করবেন।’
নিউইয়র্কে ৪ লাখ কর্মীকে ফিরিয়ে আনার ঘোষনা দেন কুওমো। শহরটির বন্ধ থাকা সেলুনের মত প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করা হবে। জন হপকিন্স বিশ্ব বিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নিউইয়র্কে করোনা ভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি এবং মারা গেছেন ২৩ হাজার ২৮২ জন। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, সিবিএস, বিবিসি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন