শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু কাল ডিসিদের সতর্ক থাকার নির্দেশ

প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : আগামীকাল থেকে চার দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন শুরু হচ্ছে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সকাল ১০টায় সম্মেলনের উদ্বোধন করা হবে। সম্মেলনে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদী তৎপরতার বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের আরও সতর্ক থাকতে বলা হবে। গতকাল রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে এক ব্রিফিংয়ে সম্মেলনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবারের সম্মেলনে সন্ত্রাস ও উগ্রবাদী তৎপরতার বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গুলশান হত্যাকা- এবং শোলাকিয়ায় হামলার প্রচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে সতর্ক থাকার জন্য জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) বিশেষভাবে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
সচিব বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গুলশান হত্যাকা- এবং শোলাকিয়ায় হামলার প্রচেষ্টাÑএ দুটো বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসকদের বিশেষভাবে সতর্ক করেছি। আমরা তাদের একাধিক পত্র দিয়ে জানিয়েছি। জেলা প্রশাসক সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের আরও সতর্ক থাকতে বলা হবে। বিশেষ করে বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে থাকা আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটি আরও কার্যকর করতে পরামর্শ দেওয়া হবে। একই সঙ্গে মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী কমিটিগুলো যাতে আরও কার্যকর হয়, সেজন্য জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা নিতে বলা হবে। মহানগর, জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী আইন-শৃঙ্খলা সম্পর্কিত কমিটি এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে কোর কমিটি রয়েছে। কোর কমিটিতে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসকরা সভাপতিত্বে করেন। এগুলো (কমিটি) যেন আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করা হয়। তাদেরকে স্পেশাল ইনস্ট্রাকশন দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বিভাগ পর্যায়ে কোর কমিটিতে বিভাগীয় কমিশনারের সভাপতিত্বে ক্রাইসিস বা সময়ে সময়ে কোর কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে পুলিশের ডিআইজি, মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট সকলে উপস্থিত থাকেন। আর জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে পুলিশ সুপার, আনসারের প্রতিনিধি, বিজিবির প্রতিনিধিদের নিয়ে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। এটা খুব হাই পাওয়ার কমিটি, এ কোর কমিটিগুলো যেন অ্যাক্টিভেট করা হয়। দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এটা খুব কার্যকর মাধ্যম। আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক সম্মেলনে মন্ত্রীরাও কথা বলতে পারেন বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম।
এবারের সম্মেলনে মোট ২২টি অধিবেশন থাকবে। এসব অধিবেশনের জন্য জেলা প্রশাসকেরা মোট ৩৩৬টি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন। সর্বোচ্চ ২৭টি প্রস্তাব জমা পড়েছে ভূমি-সংক্রান্ত। জনপ্রশাসন-সংক্রান্ত প্রস্তাব জমা পড়েছে ২৫টি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবারের সম্মেলনে ভূমি-ব্যবস্থাপনার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে। দ্বিতীয় অগ্রাধিকারে থাকবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন। এ ছাড়া সম্মেলনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম, স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসৃজন ও দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং ই-গভর্নেন্স, শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ রোধ, ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন এবং মাঠপর্যায়ে উন্নয়ন কার্যক্রম মূল্যায়নসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনা করা হবে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, সম্মেলনে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন, তা নিয়ে আলোচনা হবে। সমাধানের উপায় খোঁজ করা হবে। সম্মেলনে বিশেষ গুরুত্ব পাবে নাগরিক সেবার মানোন্নয়নের বিষয়গুলো।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালের তিনটি জেলা প্রশাসন সম্মেলনের প্রায় সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৩ সালের সম্মেলনে মোট ৪৭৪টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয় ৪৩৬টি সিদ্ধান্ত। ২০১৪ সালে মোট সিদ্ধান্ত হয় ৪৬৪টি। বাস্তবায়ন হয় ৪৩২টি। গত বছরের সম্মেলনে মোট ৪৭৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাস্তবায়ন হয় ৪৪৭টি।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এবারের সম্মেলনে নতুন সংযোজন হচ্ছে ‘ইনোভেশন সামিট’ নামের একটি অধিবেশন। ২৮ জুলাই এই সামিট অনুষ্ঠিত হবে। এতে সচিবালয় বা মাঠপর্যায়ে যত ধরনের উদ্ভাবন আছে, সেগুলো তুলে ধরা হবে।
আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটিগুলো খুব বেশি সক্রিয় না থাকা এবং কাজের ক্ষেত্রে কোনো বাধা আছে কিনাÑএ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের যে ফ্রেমওয়ার্ক তাতে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা কোনো সমস্যার সম্মুখীন হইনি। জেলা পর্যায়ের কমিটিতে সুশীল সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ সব ধরনের প্রতিনিধি রয়েছেন। তারা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। আমরা কোনো বাধা বা ঘাটতি দেখিনি। এরকম কোনো রিপোর্ট আমাদের কাছে নেই। কোর কমিটিগুলো সব সময় সক্রিয় থাকে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তবে মাঠ পর্যায়ের কমিটিগুলোর বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, তারা মনে করেনি যে এই মুহূর্তে তাদের কোনো অ্যাক্টিভিটি আছে। ক্রাইসিস না হলে তো মানুষ সজাগ হয় না, ক্রাইসিসের প্রেক্ষাপটে নতুনভাবে তাদের অ্যাক্টিভেট করা হয়েছে। আর আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় হয়তো পুলিশ সুপাররা দু-একটি ক্ষেত্রে উপস্থিত থাকে না, প্রতিনিধি পাঠান। তখন আমরা উপিস্থিত থাকার জন্য রিমাইন্ড করি। তবে কোর কমিটিতে প্রতিনিধি পাঠানোর সুযোগ নেই।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয় উঠে আসায় প্রশাসনের এমন কিছু তথ্য আছে কিনাÑজানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই। এই মুহূর্তে আমরা বলতে পারছি না, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলে বলতে হবে তাদের কোনো অ্যাক্টিভিটি আছে কিনা? আমাদের জানামতে নেই।
সূত্র জানায়, ৩৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগসম্পর্কিত মোট ৩৩৬টি প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছেন বিভিন্ন জেলার ডিসিরা। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৭টি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন ভূমি মন্ত্রণালয়ে। গাইবান্ধা ও পঞ্চগড়ের ডিসিরা বলেছেন, ভূমিসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি সংরক্ষণকারী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নৈশ প্রহরী নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। জন-হয়রানি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সরকারি গুরুত্বপূর্ণ ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরা বসানোর প্রস্তাব করেছেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার। অধিকাংশ ভূমি অফিসে লোকবলের অভাবে ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দিনাজপুরের ডিসি। পাশাপাশি পাবনার ডিসি জানিয়েছেন, অনেক উপজেলায় সহকারী কমিশনারের (ভূমি) পদ শূন্য থাকায় সেবাবঞ্চিত হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ২৫টি প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। এগুলো মধ্যে রয়েছেÑকর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময়ে অফিস নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থা করা। রাজশাহীর ডিসি বলেছেন, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আদায়কৃত অর্থ জমাদানের জন্য একটি পৃথক অর্থনৈতিক কোড সৃজন করা যেতে পারে। এডিসিদের জন্য মোবাইল ভাতা বরাদ্দ দেয়ার সুপারিশ করে ফরিদপুরের ডিসি। শরীয়তপুরের ডিসি তাদের অনুকূলে দেয়া স্বেচ্ছাধীন তহবিলে টাকার পরিমাণ এক লাখ থেকে তিন লাখ করার সুপারিশ করেছেন।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্ত করাসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে ১৫টি প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। দিনাজপুরের ডিসি বলেছেন, মাদকদ্রব্য আইনে লঘু অপরাধে শাস্তি দেয়া যায় না। নাটোরের ডিসি বেওয়ারিশ লাশ দাফনের বর্তমান বরাদ্দ ৬৫০ টাকার বদলে ৩ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করেছেন। আইনে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ কম হওয়ায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলা বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, রংপুর, নীলফামারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডিসিরা। আইনটি সংশোধনের প্রস্তাব করেছেন তারা। পাবনার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেখানে পৃথক থানা স্থাপনের সুপারিশ করেছেন রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার। এছাড়া অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার প্রস্তাব করেছেন কক্সবাজারের ডিসি।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা বাড়ানোসহ আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত ৮টি প্রস্তাব দিয়েছে ডিসিরা। কক্সবাজার ও গাইবান্ধার ডিসি বলেছেন, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ‘হলফনামা’ সম্পাদনের ক্ষমতা দেয়া হলে সেবাপ্রত্যাশী জনগণ আরও দ্রুত ও সহজে সেবা পেতে পারেন। ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও দিনাজপুরের ডিসিরা বলেছেন, সরকারি সম্পদ রক্ষায় অ্যাটর্নি সার্ভিস চালু করা উচিত। কারণ হিসেবে তারা বলেন, ফৌজদারি ও দেওয়ানি মামলায় সরকারি স্বার্থ রক্ষার জন্য নিয়োজিত কোনো কোনো সরকারি কৌঁসুলি পেশাদার মনোভাব নিয়ে কাজ করেন না সেবাপ্রার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৯টি প্রস্তাবের মধ্যে ময়মনসিংহের ডিসি পাঠ্যপুস্তকে ভূমিসংক্রান্ত প্রবন্ধ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। কারণ দেশের ৮০ ভাগ মামলাই ভূমিসংক্রন্ত। পাশাপাশি তিনি ময়মনসিংহে শিক্ষা বোর্ড স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। বগুড়ার ডিসি পরীক্ষায় নকল সরবরাহকারীর শাস্তির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর শাস্তির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। চরাঞ্চলের শিক্ষক সংকট সমাধানে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে খ-কালীন শিক্ষক নিয়োগ দিতে ‘চর অ্যালাউন্স’ দেয়ার প্রস্তাব করেছেন সিরাজগঞ্জ ও গাইবান্ধার ডিসি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন