সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আজ এক মাস পূর্তি - যাত্রীদের হতাশ করেছে সোনার বাংলা

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নূরুল ইসলাম : আজ এক মাস পূর্ণ করল সোনার বাংলা এক্সপ্রেস। বিরতিহীন এই ট্রেন নিয়ে যাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ। উদ্বোধনী যাত্রায় খাবারের মান নিয়ে সেই যে অভিযোগের শুরু, আজও তার নিষ্পত্তি হয়নি। বরং খাবারই পাননি অর্ধশতাধিক যাত্রী এমন নতুন অভিযোগ যুক্ত হয়েছে। বাথরুমে পানি নেই, সাবান নেই, টিসু নেইÑএমন অভিযোগও আছে শুরু থেকেই। এসব কারণে কাক্সিক্ষত যাত্রীও পাচ্ছে না বিলাসবহুল ট্রেনটি। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, বাংলাদেশের সেরা ট্রেন সোনার বাংলা। অথচ এই ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছার সময় সুবর্ণ এক্সপ্রেসের চেয়ে ১০ মিনিট বেশি কেন রাখা হয়েছে, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। ট্রেনটির রানিং টাইম ঠিক করার সময় চিফ মেকানিক্যাাল ইঞ্জিনিয়ার, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবং চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজারের মতামতও নেয়া হয়নি। বিরতিহীন হওয়া সত্ত্বেও ট্রেনটি চলার পথে ৫৭টি স্টেশনের ক্রসিং সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। রেলওয়ের রানিং স্টাফরা যাকে ‘শুভঙ্করের ফাঁকি’ বলে থাকেন। সব মিলিয়ে যাত্রীদের হতাশ করেছে বিলাসবহুল ট্রেনটি।
গত ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা রেলস্টেশনে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেনের শুভ উদ্বোধন করেন। ইন্দোনেশিয়া থেকে বিলাসবহুল ইনকা কোচ দিয়ে ট্রেনটি যাত্রা শুরু করে পরদিন ২৬ জুন থেকে। প্রথম যাত্রায় মাত্র ১৮৭ জন যাত্রী ছিল। অথচ সেদিনও মানসম্পন্ন খাবার দেয়া হয়নি যত্রীদের। সেদিন খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন যাত্রীরা। অনেকে খাবারের ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে প্রশ্ন রাখেন, ‘এই খাবারের দাম কত হতে পারে?’ বেশিরভাগ মানুষই উত্তরে ওই খাবারের দাম ৬০ টাকার বেশি হতে পারে না বলে মন্তব্য করেন। এক মাস ধরে খাবারের পরিমাণ ও মান নিয়ে একই ধরনের অভিযোগ চলেই আসছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে খাবার না পাওয়ার অভিযোগ। কয়েকদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার আসার সময় সোনার বাংলার অর্ধশতাধিক যাত্রীকে কোনো খাবারই দেয়া হয়নি। এর জবাবে পর্যটন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কতগুলো টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেই হিসাব ঠিকমতো না পাওয়ায় তারা সব যাত্রীকে খাবার দিতে পারেননি। তবে যারা খাবার পাননি তাদের খাবার বাবদ কেটে রাখা টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। এতকিছুর পরেও খাবার নিয়ে অভিযোগ কিন্তু থেমে নেই। কয়েকদিন আগেও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন নাজমুল হক নামে এক যাত্রী। তিনি জানান, বিকাল ৫টায় চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ার পর রাত পৌনে ৮টায় যাত্রীদের খাবার দেয়া হয়। মেনু ছিল একটি কাটলেট, দুই পিস ছোট চিকেন ফ্রাই, ২৫০ এমএল পানি ও ২৫০ এমএল কোক। ওই যাত্রী বলেন, চিকেনটা ছিল একদিন আগের। গন্ধে খাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, যেগুলো দেয়া হয় সেগুলোর দাম ৭০ টাকার ওপরে হবে না। এ বিষয়ে বেশ কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইদানীং আবার এসি ও প্রথম শ্রেণির যাত্রীদের যে খাবার দেয়া হচ্ছে, শোভন শ্রেণিতে দেয়া হচ্ছে তার চেয়ে কম দামি খাবার। একই পরিবারের কয়েকজন ছিলেন এসিতে, বাকি দু’জন ছিলেন শোভন শ্রেণিতে। তারা সবাই মিলে একসাথে যখন খেতে বসেন তখনই ধরা পড়ে বিষয়টি। এ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়ে একজন যাত্রী বলেন, এরকম অনিয়ম করলে সহসা ধরা পড়বে না। এক কোচের যাত্রী কীভাবে আরেক কোচের যাত্রীদের খবর রাখবে?
প্রথম যাত্রায় ভ্রমণ করেছেন এমন কয়েকজন যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেদিনও টয়লেটে সাবান ও টিসু ছিল না। এরপর যারাই ট্রেনটিতে ভ্রমণ করেছেন তারাই কোনো না কোনো অভিযোগ করেছেন। একজন যাত্রীর হাফ টিকিটের শিশুযাত্রীকে খাবার দেয়া হয়নি। এ নিয়ে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় ওঠে। অথচ তাতেও টনক নড়েনি রেল কর্তৃপক্ষের। হাফ টিকিটের যাত্রীর পর ফুল টিকিটের যাত্রীরা খাবার পাননি। সোনার বাংলা ট্রেনের প্রতি টিকিটের সাথে নির্ধারিত ১৯৫ টাকায় খাবারের মেন্যু হিসেবে ৫টি সেট রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলো, ভেজিটেবল স্যান্ডউইচ-১টি, মিনি চিকেন কাটলেট-১টি, মিনারেল ওয়াটার ১টি। একইভাবে অন্য চারটি মেন্যু রয়েছে। খাবারসহ এসি চেয়ারের ভাড়া ১১০০ টাকা, এসি সিটের ভাড়া ১০০০ টাকা ও শোভন চেয়ারের ভাড়া ৬০০ টাকা। এই খাবার সরবরাহ করছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন। ক্যাটারিংয়ের দায়িত্ব পালন করছে এসএ করপোরেশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধারণা, পর্যটনকে খাবার সরবরাহ করার দায়িত্ব দেয়ার নেপথ্যে কোনো দুর্নীতি আছে। তা না হলে এতকিছুর পরেও কেন কারো টনক নড়বে না।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সোনার বাংলাকে নির্ধারিত সময়ে চালাতে গিয়ে অন্যান্য ট্রেনগুলো মার খাচ্ছে। বিশেষ করে ঢাকা-সিলেট রুটের পারাবত এক্সপ্রেস শুরু থেকেই সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না। এটাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য পারাবতের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন পারাবতের চলার পথে ৪০ মিনিট বাড়তি সময় (লুজ টাইম) নির্ধারণ করা হয়েছে। এজন্য আধা ঘণ্টা ট্রেনটি পথিমধ্যে বসে থাকার পরেও নির্ধারিত সময়ে (রাইট টাইম) গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হচ্ছে না। এর ফলে যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
রেল কর্তৃপক্ষ সোনার বাংলা ট্রেনকে বাংলাদেশের সেরা ট্রেন দাবি করলেও এক মাস বয়সেও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেনটি কাক্সিক্ষত যাত্রী পাচ্ছে না। অথচ একই রুটে চলাচলকারী ১৮ বছর বয়সী সুবর্ণ এক্সপ্রেসের টিকিট নিয়ে এখনও কাড়াকাড়ি লাগে। নির্ধারিত দিনে একটু দেরি করে কাউন্টারে গেলে সুবর্ণর টিকিট পাওয়া যায় না। যদিও এর নেপথ্যেও কিছু কারসাজি আছে। আছে ‘কোটা’ পদ্ধতির ফাঁকফোকর। রেলওয়ের হিসাবমতে, ত্রিশ দিনেও ট্রেনটির গড়ে ৩০ শতাংশ আসন ফাঁকা থাকছে, যা সোনার বাংলার মতো একটি বিলাসবহুল ট্রেনের ক্ষেত্রে কল্পনাও করা যায় না। অপরদিকে একই রুটে সুবর্ণ এক্সপ্রেস গড়ে ৯১ থেকে ৯৫ শতাংশ যত্রী পরিবহন করে। এদিকে সোনার বাংলার রানিং টাইম কেন সুবর্ণর চেয়ে ১০ মিনিট বাড়ানো হয়েছে তা নিয়ে কোনো জবাব মেলেনি। এর আগে এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছিল রেল সচিবের দফতরে। এ ছাড়া ট্রেনটি চালু করার আগে এর গতিবেগ ও রানিং টাইম নির্ধারণ করার আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ও ম্যানেজারের মতামতও নেয়া হয়নি, যা রহস্যজনক বলে মনে করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারাই। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল রেলওয়ের পরিচালক (পরিবহন) সৈয়দ জহুরুল ইসলামের মোবাইলে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন