বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার রুমা মানসিক রোগী

প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৩ পিএম, ২৫ জুলাই, ২০১৬

স্টাফ রিপোর্টার : গুলশান হামলায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত রুমা আক্তার (২৮) মানসিক রোগী বলে দাবি করছেন তার বোন সাবিহা আক্তার সাথী। রুমার বোন সাবিহা জানান, সে নিজের শরীরে নিজেই আগুন ধরিয়ে দিত। কখনো কখনো গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিত। জামাকাপড় খুলে ফেলত। সে বাড়িতে বেশি থাকত না। তিনি জানান, ঢাকায় বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় মাঝে মধ্যে থাকত। সেখানে তার দুই বন্ধু তাকে দেখাশুনা করত। রুমার ওই বন্ধুদের একজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করার কাজ করে। অন্যজন কাঠমিস্ত্রি। সে মাঝে মাঝে রাস্তা-ঘাটেও
ঘুমিয়ে থাকত। সাবিহা আরো বলেন, আমার বোন অভাবের তাড়নায় অনৈতিক কাজ করতে পারে, কিন্তু কোনো জঙ্গি সংগঠন বা আইএসের সাথে জড়িত নয়। তিনি আরো জানান, গুলশান হামলার দিন রুমা ওই এলাকায় ছিল। ঘটনার পর টেলিভিশনে দেখার পর তাকে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞেস করলে রুমা জানায়, সে ওই হোটেলের পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে। সাবিহা বলেন, কোনো পাগল ছাড়া একজন সুস্থ মানুষ এ ধরনের ভয়ঙ্কর ও রক্তক্ষয়ী একটি হামলার সময় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। রুমার বোন আরো জানান, তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তির প্রস্তুতি চলছিল। কয়েকবার মানসিক ডাক্তার দেখানো হয়েছে। কিন্তু তাকে ওষুধপত্র খাওয়ানো যেত না। মহিত কামাল নামের একজন মানসিক ডাক্তার তার চিকিৎসা করতেন।
গতকাল কাঁদতে কাঁদতে রুমার বোন সাবিহা আক্তার সাথী ইনকিলাবকে এসব কথা বলেন।
এদিকে তদন্তের সাথে জড়িত একটি সূত্র জানায়, রুমা গুলশান হামলার সময় ওই হোটেলের পাশে ছিল এটা দিবালোকের মতো সত্য। সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও তাকে স্পষ্ট দেখা যায়। এছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে রুমা নিজেও স্বীকার করেছে। তাকে নরসিংদী থেকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই তার কাছ থেকে পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
একটি সুত্র জানায়, দুবাই থেকে প্রায় তিন মাস আগে দেশে ফেরার পর বেশির ভাগ সময়ই ঢাকার বাড্ডা, নতুন বাজার ও রামপুরা এলাকায় থাকত রুমা। কয়েক মাস আগ থেকে অভাবের তাড়নায় রুমা অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। কিছু দালাল তার মাধ্যমে সুন্দরী ও অভাবগ্রস্ত তরুণীদের সংগ্রহ করে গুলশানসহ ওই এলাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে এসব তরুণীদের সরবরাহ করত। বিনিময়ে রুমাকে থাকা-খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দেয়া হতো।
রুমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুদ্দীন বদুও দাবি করেছেন তার মেয়ে জঙ্গি হামলায় জড়িত হতে পারে না। সে মানসিকভাবে অসুস্থ। এক সন্তানের জননী হলেও সে তার সন্তানকে রেখে ঘুরে বেড়াত। রুমার প্রথম স্বামীর ঘরের ১৪ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।
রুমার বড় বোন জানান, রুমা মাঝে মধ্যে ভিক্ষা করত, বিভিন্ন বাসায় কাজ করত। সে মানসিক রোগী ছিল, ইতিপূর্বে মুহিত কামাল নামে এক ডাক্তারকে দেখানো হয়েছিল। সে ৩-৪ মাসের ওষুধ একসাথে খেয়ে ফেলত এবং ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করত।
রুমার পিতা মুক্তিযোদ্ধা শাহাবুদ্দিন বদু জানান, দেশে ফিরে আসার পর সে বিভিন্ন লোকের সাথে মোবাইল ফোনে কথাবার্তা বলত এবং পাগলের মতো চলাফেরা করত। ভিক্ষাবৃত্তিসহ মানুষের কাছ থেকে একশ’ থেকে ২-৩শ’ টাকা চেয়ে নিত।
রুমা আক্তারের পিতার নাম সাহাবুদ্দীন আহমেদ ওরফে বদু । তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। পলাশ উপজেলার চরসিন্দুরের সুলতানপুরে তার বাড়ি। তার ৩ মেয়ে, ১ ছেলের মধ্যে রুমা সবার ছোট। তার বিয়ে হয়েছে ২টি। প্রথম বিয়ে হয় শিবপুরের সিএন্ডবি গ্রামের রাসেল মিয়ার সাথে। ওই সংসারে শ্রাবণ (১৪) নামে এক পুত্রসস্তান রয়েছে। পরে প্রেম করে বিয়ে হয় নোয়াখালীর এক ছেলের সাথে। ওই ছেলের বাড়িতে বউ ও সন্তান থাকায় এলাকাবাসীর চাপে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। পরে গত ৬ মাস পূর্বে চাকরির সুবাদে সে দুবাই চলে যায়। সেখান থেকে ৩ মাস পরই বাংলাদেশে চলে আসে এবং ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করতে থাকে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখুপি গ্রামের চা বিক্রেতা তারা মিয়ার বাড়ি থেকে তাকে আটক করে। চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি তদন্ত করছেন কাউন্টার টেরোরিজম (সিটি) ইউনিট।
গুলশান ঘটনার ২ দিন পর সে শিবপুর উপজেলার সাধারচর ইউনিয়নের চরখুপি গ্রামে তার ভগ্নিপতি চা বিক্রেতা তারা মিয়ার বাড়িতে আশ্রয় নেয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে গোয়েন্দা পুলিশ তাকে আটক করে ঢাকায় নিয়ে যায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সাইফ ২৬ জুলাই, ২০১৬, ১:৫৫ পিএম says : 0
আমাদের প্রশাসনের কথা আর কি বলবো ?
Total Reply(0)
জীবন ২৬ জুলাই, ২০১৬, ২:৫৪ পিএম says : 0
সন্দেহ করার আর মানুষ পেলেন না ?
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন