রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আইসিইউবিহীন ৪৭ জেলা

জেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসার বেহাল চিত্র

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জুন, ২০২০, ১২:০১ এএম

সারাদেশে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যের সংখ্যার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ছে সামাজিক ট্রান্সমিশন। লকডাউন, বিধিনিষেধ কোনো কিছুই যেন সংক্রমণ ঠেকাতে পারছে না। সংক্রমণ বাড়লেও চিকিৎসা সেবার উন্নতি তেমন হচ্ছে না। রাজধানীর বাইরে জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিপ‚র্ণ হয়ে উঠেছে করোনা রোগীদের জীবন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যেই জেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসার বেহাল চিত্র উঠে এসেছে।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) আমিনুল হাসান বলেন, আমরা জেলা হাসপাতালের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার উদ্যোগ নিয়েছি। জেলা পর্যায়ে করোনা চিকিৎসায় কিছু সমস্যা খুঁজে পেয়েছি এবং সেগুলো প‚রণ করতে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয় করছি।
চিকিৎসকদের নেতা প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. ইকবাল আর্সলান বলেন, জেলা পর্যায়ে আইসিইউ না থাকা আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মারাত্মক চিত্রায়ন। আমরা স্বাস্থ্য খাতে উন্নতির কথা শুনি, কিন্তু এই চিত্র এখন উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে ধরছে। আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সঙ্কট এড়াতে প্রতিটি হাসপাতালে কমপক্ষে পাঁচটি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রাখার পরামর্শ দিলেও সেটা পরামর্শ বৃথা গেছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য মোট ৩২৯টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। এর মধ্যে ১৪৮টি ঢাকা শহরে এবং বাকিগুলো ছয়টি বিভাগীয় সদর দপ্তরে। তবে করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য দেশে ৯ হাজার ৬৩৪টি আইসোলেশন শয্যা রয়েছে।

দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অনলাইন সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চিত্র তুলে ধরা হচ্ছে। কিন্তু চিকিৎসা সেবার উন্নতি হচ্ছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি পরিসংখ্যান বলছে, করোনা রোগীদের জন্য ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৭টিতে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) সুবিধা নেই। এ ছাড়াও, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সা¤প্রতিক এক গবেষণায় জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর ভেন্টিলেশন ও অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থার এক নির্মম চিত্র প্রকাশ পেয়েছে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আইসিইউ এবং অক্সিজেন সরবরাহ ব্যবস্থা উভয়ই প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গেছে বেশিরভাগ জেলা হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার থাকলেও অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের প্রচÐ অভাব। ৯০ শতাংশ হাসপাতালে আর্টেরিয়াল বøাড গ্যাস (এবিজি) এনালাইজার নেই। যা রোগীর রক্তের গুরুত্বপূর্ণ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে প্রয়োজন হয়। ৮৯ শতাংশ হাসপাতালে অক্সিজেনের কনসেনট্রেটর নেই, যা অক্সিজেনের মসৃণ ও উচ্চ প্রবাহ নিশ্চিত করে। এ ছাড়াও ৯৬ শতাংশ হাসপাতালের কোনো যান্ত্রিক ভেন্টিলেটর নেই। যা রোগী শ্বাস নিতে না পারলে শ্বাসযন্ত্রের কাজ করে।

সমীক্ষায় বলা হয়, দেশের জেলা পর্যায়ের ৯৫ শতাংশ জেলা হাসপাতালে বিপিএপি ও সিপিএপি নেই। এমনকি ৩০ শতাংশ হাসপাতালে অক্সিজেন মাস্ক নেই। অথচ করোনা রোগী যখন একা নিঃশ্বাস নিতে বা শ্বাস ছাড়তে পারেন না তখন এই যন্ত্রগুলোর মাধ্যমে মাস্ক দিয়ে রোগীর ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
দেশের প্রথম অঞ্চলভিক্তিক লক ডাউন বা রেড জোন ঘোষণা করা হয় কক্সবাজারের কিছু এলাকা। অথচ সেই জেলায় কোনো আইসিইউ নেই। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজার এবং বান্দরবানের করোনা রোগীদের নিতে হয় চট্টগ্রামে। যেখানে করোনাভাইরাস রোগীদের জন্য ২৪টি আইসিইউ বরাদ্দ রয়েছে। বিভাগে আরও ১০টি আইসিইউ শয্যা আছে কুমিল্লাতে।

বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে এবিজি মেশিন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটর, কান্নুলা এবং ফেস মাস্ক নেই। এজন্য সবই রোগীদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে বিভাগীয় সদর দপ্তর খুলনায় নিতে হয়। হবিগঞ্জের করোনা রোগীদেরও চিকিৎসা নিতে যেতে হবে সিলেটে। বিভাগীয় সদর দপ্তরেও পুরো বিভাগের করোনা রোগীদের জন্য মাত্র ১৬টি আইসিইউ শয্যা আছে। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন একেএম হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা স্থাপন করা শুরু করেছি এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে। এরপর আমরা অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনব।

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
মোঃ জুয়েল আহাম্মেদ রাজু ১২ জুন, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
ব্যাপার না পযাপ্ত আছে তবে আই সি ইউ না। খাটিয়া।
Total Reply(0)
Zaker Hossain ১২ জুন, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
মধ্যম আয়ের ডিজিটাল দেশ। সাংবাদিক ভাই দের অনুরোধ করব যারা অনিয়ম আর দুর্নীতি করে হাজার কুটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে আর যারা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কিনার নামে হাজার কুটি টাকা দুর্নীতি করেছে তাদের মুখুশ উম্মচন করোন।
Total Reply(0)
Gias Uddin Gias ১২ জুন, ২০২০, ১:৪২ এএম says : 0
মালেশিয়া সিংগাপুর থেকে ও আমরা এগিয়ে আছি তাই এসবের কি দরকার
Total Reply(0)
Mohammad Ali Delower Hussain ১২ জুন, ২০২০, ১:৪৩ এএম says : 0
টাকা থাকলে কি না পাওয়া যায় ? বলবেন সবকিছু পাওয়া যায়। বলবেন বাঘের চোখ পাওয়া যাবে ? অনেককে বলবে হা পাওয়া যাবে। যদি বলা হয় বাংলাদেশে হসপিটালে আই সি ইউ বিছানা পাওয়া যাবে ? আমার তো মনে হয়না কেহ বলবে পাওয়া যাবে । বর্তমানে বাংলাদেশ হসপিটালের আই সি ইউ বিছানা সোনার হরিণ বললে ভুল হবে। বলতে হবে হিরার হরিণ। সাধারণত একটি আই সি ইউ ভেন্টিলেটর দাম সাত থেকে দশ লাখ টাকার মত কিন্তু বত'মানে একটি আই সি ইউ বিছানা জন্য কোটি টাকার ওফারও মিলছে না এই বিছানা। ধনীব্যাক্তিরা চেষ্টা করে পাচ্ছে না আর গরিবের কথা থাক। যেখানে নেপালের মত দেশের প্রতিমিলিয়নেে ২.৭ টি আই সি ইউ ভেন্টিলেটর বিছানা আছে আর আমাদের দেশের মাত্র প্রতি মিলিয়নেে মাএ ০.৬৯ টি আই সি ইউ ভেন্টিলেটর বিছানা। রাজনৈতিক মাঠে যখন আমাদের নেতারা বক্তৃিতা দেয় মনে হয় আমাদের চাঁদের আলোর কাছে সাতসমুদ্র পারি দিয়ে চোখে ছানি বানিয়ে সবকিছু লুটপাট করে খাবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হলে একটা ব্যাপার সবাই কে বাংলাদেশের হসপিটালে চিকিৎসা নিতে হবে গুটি কয়েক লোক বাদে। এইবার হয়তো বোধ হবে কি করেছি?
Total Reply(0)
Nurul Islam Khokon ১২ জুন, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
বেসরকারী হাসপাতাল গুলো আগে দালাল রাখতো রোগী নিয়ে আসতে আর এখন দালাল রাখছে রোগী তাড়িয়ে দিতে।
Total Reply(0)
Rubel Ahmed ১২ জুন, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
না আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইউরোপের চেয়েও উন্নত যেখানে ডাক্তার রোগী রেখে পালায়।
Total Reply(0)
Juwel Prodhan ১২ জুন, ২০২০, ১:৪৪ এএম says : 0
আমাদের দেশে মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে জানিনা সামনে কি হবে হয়তো আরও ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন