শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটে কল্যাণপুরের বাসিন্দাদের

প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : মুহুর্মুহু গুলির শব্দ। ঘর থেকে বের না হতে পুলিশের মাইকিং। রাস্তায় সাঁজোয়া যান, গাড়ির হর্ন, সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বুটের শব্দ। এক অজানা আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কেটেছে কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের বাসিন্দাদের। আতঙ্ক-ভয়ে কান্না থামছিল না শিশুদের। লাইট বন্ধ করে ফ্লোরে বালিশ এপাশ-ওপাশ করে রাত কাটিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আবার গতকাল বিকালে নিহত জঙ্গিদের লাশ ঘটনাস্থল থেকে বের করার আগ পর্যন্ত ওই এলাকার রাস্তাঘাট বন্ধ থাকায় এলাকাবাসী শঙ্কিত হয়ে পড়েন।
কল্যাণপুরের ৫ নম্বর রোডের জাহাজ ভবনে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় পুলিশ। কিন্তু অভিযানের প্রস্তুতির কারণে কল্যাণপুর মেইন রোড থেকে ৫ নম্বর রোডের চার পাশে দেড় কিলোমিটার এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক গাড়ি মোতায়েন করা হয়। ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকা ঘিরে রাখে পুলিশ।
ঘটনাস্থলের খুব কাছের বাসিন্দা হযরত আলী জানান, পুলিশ প্রথমে আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদে থাকার জন্য মাইকিং করে। এ জন্য কাউকে ঘর থেকে বের না হতে সতর্ক করে দেয়। একই সাথে ওই বাড়ির আশপাশের বাড়ির বাসিন্দাদের ঘরের দরজা বন্ধ করে ফ্লোরে অবস্থান নিতে বলা হয়। পুলিশের এ ধরনের ঘোষণার পর মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা জানান, রাত দেড়টার দিকেও গুলির শব্দ পাওয়া যায়। সূর্য ওঠার আগে পুলিশের অপারেশন স্টর্ম-২৬ অভিযান শুরু হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এক অজানা শঙ্কায় পুরো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছেন বলে জানান জলিল মিয়া, শিক্ষার্থী সুরুজ, ৩ নম্বর রোডের মুদি দোকানি বাশার এবং একই এলাকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী লিজা।
চার নম্বর রোডের বাসিন্দা লিয়াকত জানান, সোমবার রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে গোলাগুলির আওয়াজ পেলেও তারা কেউ ঘর থেকে বের হওয়ার সাহস পাননি। জাহাজ বিল্ডিংয়ের উল্টো দিকের বাড়ির এক কেয়ারটেকার বলেন, মূল অভিযানটা হয়েছে ভোর রাতের দিকে। সেসময় তাদের সব লাইট, দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল। ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের মেঝেতে বা অন্য কোনো সাপোর্টে থাকতে বলা হয়।
জাহাজ বিল্ডিংয়ের সামনের তুশি-নোভা অ্যাপার্টমেন্টের ষষ্ঠ তলার বাসিন্দা মো: জাকির বলেন, রাত পৌনে ১২টা থেকে কখনো পাঁচ মিনিট, কখনো ১০ মিনিট, কখনো আবার দীর্ঘ সময় গুলির আওয়াজ ছিল না। ফজরের পর প্রচ- গোলাগুলির আওয়াজ পাই। কোন দিক দিয়ে কে গুলি করে, গুলি ভেতরে এসে পড়ে কি নাÑ এ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম। আতঙ্কে একবার বিছানায়, একবার ফ্লোরে শুয়ে পড়ি। ঘুমের তো প্রশ্নেই আসে না। এলাকায় হঠাৎ করে এ ধরনের ঘটনায় নির্ঘুম রাত পার হয়েছে।
এদিকে গতকাল কল্যাণপুরের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘটনাস্থল জাহাজ বিল্ডিংয়ে যেতে কল্যাণপুরের মেইন রোডেই রাখা একের পর এক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের গাড়ি। মেইন রোডসংলগ্ন দু-একটি দোকান খোলা থাকলেও পূর্ব দিকের সব দোকান বন্ধ ছিল। অপারেশন শেষ হলেও ঘটনাস্থলের অন্তত এক কিলোমিটারের মধ্যে সবগুলোই পুলিশের গাড়ির পাশাপাশি অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি সারিবদ্ধ করে রাখা। আর রাস্তায় অবস্থানরত পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়াতে বেশিরভাগ মানুষই ঘর থেকে বের হননি। বিশেষ করে যুবক ও শিশুদের তেমন দেখাই মেলেনি।
গতকাল ভোরে পুলিশের অপারেশন শেষ হলেও ঘটনাস্থলেই নিহত জঙ্গিদের লাশ পড়ে থাকে। পুলিশ ঘটনাস্থলে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়নি। বিকেল ৪টার দিকে লাশ মর্গে নেয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে সিআইডি ও পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন। পুলিশের এসব প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করার আগ পর্যন্ত ঘটনাস্থলের আশপাশের রাস্তাও বন্ধ করে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে অজানা আতঙ্কের একটি রাত ও দিন পার করেছেন কল্যাণপুরের বাসিন্দারা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন