স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেছেন, কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের বয়স ২০-২৫-এর মধ্যে এবং তারা উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। কল্যাণপুরের সন্দেহভাজন জঙ্গিরা এবং গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে হামলাকারীরা একই দলের সদস্য। নিহত জঙ্গিদের পরনে কালো পাঞ্জাবি এবং জিন্সের প্যান্ট ছিল। তবে কিসের ভিত্তিতে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বয়স এবং শিক্ষাগত বিষয়
নিশ্চিত হওয়া গেল সে বিষয়ে তিনি ব্যাখ্যা দেননি। পুলিশ কমিশনার একই সাথে বলেছেন, নিহত ‘জঙ্গিদের’ পরিচয় সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এখন তাদের পরিচয় নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কাজ করছে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া এসব কথা জানান। তিনি বলেন, নিহত জঙ্গিদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে বাসা থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। নিহতদের ছবি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে। তারপর যাচাই-বাছাই করে নিশ্চিত হয়ে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে। কমিশনার বলেন, গুলশানের হামলায় নিহত জঙ্গি ও কল্যাণপুরে নিহত জঙ্গিদের হামলার ধরণ, পোশাক, বয়স, রুমাল, ব্যবহৃত ব্যাগসহ প্রায় সবকিছুর মিল রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, তারা একই গ্রুপের। নিহত জঙ্গিদের পরনে ছিল কালো পাঞ্জাবি, জিন্স প্যান্ট, একজন ছাড়া সবার পায়ে কেডস ছিল।
অভিযান শেষে আস্তানা থেকে ১৩টি তাজা গ্রেনেড, বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ তৈরির সরঞ্জাম, ৪টি রাইফেল, ৪টি পিস্তল, ৫ রাউন্ড গুলি, ১টি তলোয়ার, ৩টি চাকু, ৪টি গেরিলা চাকু, ২টি কালো পতাকাসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।
ঐ আস্তানায় ১১ জঙ্গি থাকত উল্লেখ করে তিনি বলেন, গত সোমবার রাতে পুলিশের অভিযানের সময় ২ জঙ্গি বাড়ির পেছন দিয়ে লাফিয়ে পড়ে। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ও গুলি ছোঁড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি করলে ১ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আটক করা হয়। সে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তার নাম হাসান, বাড়ি বগুড়ায়। সে জানায়, তারা ১১ জন থাকত সেখানে। তার কাছ থেকেও নিহতদের নাম পরিচয় সম্পর্কে তথ্য নেয়া হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
কমিশনার বলেন, কল্যাণপুরের ৫ নং রোডের ৫৩ নং বাড়ি তাজমঞ্জিলে রাত সাড়ে ১২টায় পুলিশ তল্লাশিতে যায়। তারপর ৬তলা ভবনের ৫ তলা থেকে জঙ্গিরা আল্লাহু আকবার বলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড ছোঁড়ে। এরপর পুলিশ বাড়িটি ঘিরে ফেলে। ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও সোয়াত ঘটনাস্থল রেকি করে অভিযানের পরিকল্পনা করে। ভোর ৫টা ৫১ মিনিটে সোয়াতের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এক ঘণ্টা গুলি বিনিময় শেষে ৬টা ৫১ মিনিটে অভিযান সমাপ্ত করে। এ সময় গুলিতে ৯ জঙ্গি নিহত ও পুলিশের এক সদস্য আহত হয়। পুলিশ কমিশনার বলেন, জঙ্গিরা গত ২০ জুন বাড়িটি ভাড়া নেয়, সেখানে তারা বৃহৎ কোন নাশকতার পরিকল্পনা করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাসা ভাড়ার সময় কোন তথ্য না রাখায় বাড়ির মালিক আতাহার উদ্দিন আহমেদকে আটক করা হয়েছে বলেও জানান কমিশনার। আতাহার সাবেক কাস্টমস কর্মকর্তা।
এ অভিযানকে ইতিহাসের অন্যতম সফল অভিযান উল্লেখ করে তিনি বলেন, জঙ্গিদের অপতৎপরতা এ দেশের মাটিতে বরদাস্ত করা হবে না। জঙ্গিদের শেকড় উৎপাটন করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন