শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

গুলিবিদ্ধ জঙ্গি হাসানকে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন মা

প্রকাশের সময় : ২৭ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুরে তাজ মঞ্জিল (জাহাজ বিল্ডিং)-এর জেএমবি আস্তানা থেকে আহত অবস্থায় গ্রেফতার জঙ্গি হাসান ওরফে রাকিবুল হাসান রিগ্যান-এর বিধবা সেবিকা মা রোকেয়া বেগমের স্বপ্ন ছিল একমাত্র মেধাবী ছেলেকে ডাক্তারি পড়াবেন। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে গত বছরের ২৬ অক্টোবর তারিখের সকালে মেডিকেল কোচিং-এর জন্য ক্লাস করতে গিয়ে আর বাসায় ফেরেনি রিগ্যান। এক বছর পর গতকাল সকালে রোকেয়া খবর পেলেন তার আদরের ছেলেটা ঢাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের শয্যায় মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বগুড়া সদর থানার পুলিশ রোকেয়া বেগমের বাসায় গিয়ে এই মর্মান্তিক খবরটাই শুধু তাকে দিল না সেই সাথে জিজ্ঞাসাবাদে তাকে থানাতে নেয়া হলো। সার্বিক পরিস্থিতিতে রোকেয়া বেগম বিস্মিত হতভম্ব!
পরে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদে রোকেয়া বেগম জানান, তিনি বগুড়ার নন্দিগ্রাম থানার বিজরুল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবিকা (স্টাফ নার্স) পদে কর্মরত আছেন। ফলে একমাত্র ছেলে রাকিবুল হাসান রিগ্যানকে ডাক্তার বানানোর স্বপ্ন দেখতে থাকেন। মেধাবী রিগ্যানকে ভর্তি করেন বগুড়ার একমাত্র মাল্টি মিডিয়াভিত্তিক স্কুল করতোয়া মাল্টি মিডিয়ায়। শুধু তাই নয় বগুড়া শহর থেকে বাড়ি একটু দূরে হওয়ায় নিজের বাড়ি বিক্রি করে স্কুলটির নিকটবর্তী জামিল নগরে বাড়ি কিনে সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। ২০১৩ সালে ওই স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে এইচএসসি পাসের পর রেটিনা কোচিং সেন্টারে মেডিকেলে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে জঙ্গি হাসান ওরফে রিগ্যান। বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত পুলিশের কাছে জবানবন্দি দিয়ে পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়া পান রোকেয়া বেগম। এরপর থেকে নিজের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তা/সহকর্মী এবং পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত অবসন্ন এখন তিনি।
তবে বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রিগ্যানদের নতুন বাড়ি জামিল নগর শিবির অধ্যুষিত হওয়ায় এবং রেটিনা কোচিং সেন্টারটিও শিবির পরিচালিত হওয়ায় রিগ্যান শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিরোধ আন্দোলনে শিবিরের পক্ষে জোরালোভাবে সব কর্মসূচিতে অংশ নেয়। পাশাপাশি সমবয়সী আদমদীঘি উপজেলার মাসুদ রানা এবং দুপচাঁচিয়ার শিহাব নামের ২ তরুণের সংস্পর্শে এসে খুবই গোপনীয়তার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গি নেটওয়ার্কের সাথে। ২/৩ বছর আগে মারা যায় রিগ্যানের বাবা রেজাউল করিম। কিন্তু তারপরও মা রোকেয়া ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর জন্য আরো সিরিয়াস হওয়ার পরামর্শ দেয়। কিন্তু ছেলে তখন বেছে নিয়েছে ভয়ংকর এক পথ, যেখানে ধ্বংস মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নেই।
এরই এক পর্যায়ে গত বছরের ২৬ অক্টোবর সকালে কোচিং করতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায় রিগ্যান। রাতে বাসায় না ফেরায় পরদিন ২৭ অক্টোবর বগুড়া সদর থানায় উদ্বিগ্ন মা রোকেয়া বেগম একটি জিডি করেন। এরপর গত এক বছর ধরে পুলিশের কাছে ধরনা দিয়েছেন শতবার। বিভিন্নভাবে খরচ করেছেন লক্ষাধিক টাকা।
পরে জানা যায়, যেদিন রিগ্যান উধাও হয় সেদিন একই সাথে মাসুদ ও শিহাবও উধাও হয়। এর মধ্যে সম্প্রতি মাসুদ রাজধানী ঢাকার এস আই ইব্রাহিম হত্যা মামলায় কেরানীগঞ্জের কামরাঙ্গীর চর থেকে গেস্খফতার হয়। গত রমজানে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া থেকে বগুড়া পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় শিহাব। কিন্তু অধরা থেকে যায় রিগ্যান। এর মধ্যেই পলাতক হওয়ার ঠিক বছর পূর্তির দিনেই ২৬ অক্টোবর সকালে রোকেয়া বেগমের কাছে খবর এলো যে ছেলেকে তিনি ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলেন সেই ছেলেটি (তার স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটিয়ে) জঙ্গি হিসেবে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সাথে!
সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল
স্টাফ রিপোর্টার জানান, কল্যাণপুরের আস্তানা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেফতার হওয়া একমাত্র জঙ্গি সদস্য রাকিবুল হাসান রিগ্যানের সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার পরিবারের ইচ্ছা ছিল ছেলে চিকিৎসক হবেন। তাকে বগুড়ার রেটিনা নামে একটি কোচিং সেন্টারেও ভর্তি করা হয়। আর ওই কোচিং সেন্টারে পড়তে গিয়েই জঙ্গি সংগঠনে যুক্ত হয় হাসান। রেটিনা নামে বগুড়ার ওই কোচিং সেন্টারের এক সময় শিক্ষক ছিলেন জেএমবি নেতা ফাঁসি হওয়া বাংলা ভাই। শফিক নামে এক ব্যক্তির মাধ্যমে কল্যাণপুরের ওই বা ১ মাস ধরে অবস্থান করছিলেন তিনি। সেখানে হাসান বাবুর্চির কাজ করতেন বলে তার দাবি। ওই ফ্ল্যাটে আরো ১০ জন থাকতেন। পুলিশকে সে জানায়, সিরিয়া যাওয়ার কথা ছিল তার। আইএসে যোগ দিতে বিশ্বের অনেক দেশ থেকে অনেকের সিরিয়া যাওয়ার নজির রয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হাসানের বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে উপস্থিত একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, সে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম কথা বলছে। একবার বলে সে পড়াশোনা করে, আবার বলছে, আমি পড়াশোনা করি না।
এদিকে হাসানের মা রোকেয়া আক্তার দাবি করেছেন, এক বছর আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ তার ছেলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Rabbi ২৭ জুলাই, ২০১৬, ১২:২১ পিএম says : 0
arokom jeno ar kono mayer sontan na hoy
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন