সন্ত্রাস নির্মূলে প্রয়োজন গণতন্ত্রের উপস্থিতি এবং জনগণের ঐক্য ষ তারেক রহমান সরকারের প্রতিহিংসার শিকার
স্টাফ রিপোর্টার : বিরাজমান জঙ্গি ইস্যুতে সরকার ব্লেম গেম খেলছে। এই ইস্যুতে সরকারের ভূমিকা জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ বলে কূটনীতিকদের জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল বুধবার বিকালে দেশের চলমান জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দলের অবস্থান তুলে ধরতে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি।
গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিকাল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসীদের হামলা, শোলাকিয়ার কাছে সন্ত্রাসী জঙ্গি হামলার ঘটনার পাশাপাশি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অর্থ পাচার মামলায় নি¤œ আদালতের খালাসের রায় বাতিল এবং সাজা প্রদানের বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কূটনীতিকদের কাছে ব্রিফিং করেন।
বৈঠকের পর স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি দেশের বড় রাজনৈতিক দল, বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপি কূটনীতিকদের সাথে মাঝে মাঝে কথা বলে। এটা একটা নিয়মিত বৈঠক হয়েছে। বিশেষ কিছু নয়।
বৈঠকে স্পেন, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, সউদী আরব, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, নরওয়ে, নেপাল ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আসম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, আসাদুজ্জামান রিপন, ব্যারিস্টার রুমিন ফারাহানা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পৌর নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অনিয়মের বিষয়াবলী জানাতে গত ২০ জানুয়ারি সর্বশেষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কূটনীতিকদের কাছে অর্থ পাচার মামলায় হাইকোর্টের রায়ে তারেক রহমানকে সাজা দেয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তাদেরকে ‘ইনডেক্স অব ডকুমেন্টস’ শিরোনামে (উচ্চ আদালত রায়ের কপি ও নিম্ন আদালতের রায় কপি) একটি বই সরবরাহ করা হয়।
স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, তারেক রহমান সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। তাকে অন্যায়ভাবে সরকার উচ্চ আদালতের মাধমে সাজা দেয়া হয়েছে। কীভাবে অর্থ পাচার মামলার ক্ষেত্রে ন্যায় বিচারকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছেÑকূটনীতিকদের কাছে আমরা আইনগত দিকটি ব্যাখ্যা করেছি।
অপর এক সদস্য জানান, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান কী তা বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। কূটনীতিকদের কাছে জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের বিষয় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যে আহবান জানিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করা হয়। জাতীয় ঐক্য কেনো প্রয়োজন এবং জঙ্গি যে কেবল প্রশাসন দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়, তা আমরা তুলে ধরেছি। কূটনীতিকরা কেউ কেউ জাতীয় ঐক্যের ধারণাটি বিস্তারিতভাবে জানতে চেয়েছেন। আমরা তার জবাব দিয়েছি। তবে কূটনীতিকদের পক্ষ থেকে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
তিনি বলেন, আমরা কূটনীতিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছি, সরকার জঙ্গি ইস্যু নিয়ে ব্লেম গেম করছে। সরকার এখন পর্যন্ত তদন্ত করে বিশ্বাস যোগ্য কোন তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি। তারা শুধু জামায়াতসহ বিরোধীদলকে এ জন্য দায়ী করছে। কিন্তু তারা (সরকার) তাদের বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণই এখন পর্যন্ত উপস্থাপন করতে পারেনি। কিন্তু গুলশানের ঘটনার পর দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতার এক সন্তান এর সঙ্গে জড়িত। জঙ্গি দমনে সরকারের কর্মকা- বা ভূমিকায় দেশের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের এক উপদেষ্টা জানান, কূটনীতিকদের আমরা বলেছি, কথায় কথায় এখন সংখ্যালঘুসহ নানা সম্প্রদায়ের মানুষ হত্যা হচ্ছে। কারও কোনো জীবনের নিরাপত্তা নেই। কিন্তু কেউ ধরা পড়ছে না। যদিও কাউকে সন্দেহজনকভাবে ধরা হয়, তাদেরকেও ক্রস ফায়ারের নামে হত্যা করা হয়। যার কারণে সঠিক কোনো তথ্য বের হচ্ছে না। আমরা কূটনীতিকদের বলেছি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে নির্মূল করতে হলে দেশে ঐক্য ও গণতন্ত্র থাকতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এসব দমন করা সম্ভব নয়। এসব বিষয় অনুধাবন করেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাতে কোনো সাড়া দেয়নি। উল্টো দোষারোপ করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন