ইনকিলাব ডেস্ক : তুরস্কের প্রধান বিরোধী দল ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) নেতা দেভলেত বাহসেলি বলেছেন, ১৫ জুলাইয়ের অভ্যুত্থানের পেছনে পেন্টাগন ও সিআইএ ছিল বলে যে গুজব রটেছে, তা সত্য হলে ধরে নিতে হবে ‘সমস্যাটি গুরুতর’। গত মঙ্গলবার আঙ্কারায় দলের পার্লামেন্ট সদস্যদের এক সভায় বক্তৃতাকালে দেভলেত এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, অভিযোগ রয়েছে, ওই অভ্যুত্থানের পেছনে ছিলেন ইসাফের (ন্যাটো নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনী) কমান্ডার এক মার্কিন জেনারেল। তুরস্কের বিভিন্ন মিডিয়ায় এই জেনারেলের নাম জানিয়েছে, জন এফ. ক্যাম্পবেল। এমএইচপি নেতা বলেন, বলা হচ্ছে, এই মার্কিন জেনারেল ১৫ জুলাইয়ের আগে দুবার গোপনে তুরস্কে এসে ইরজুরাম প্রদেশে এবং আদানার ইনসারলিক বিমান ঘাঁটিতে গোপন সভা করেছিলেন। এসব দাবি সত্য হলে এর অর্থ দাঁড়াবে, সিআইএ ও পেন্টাগন ওইসব অভ্যুত্থানকারীদের পেছনে ছিল। এর অর্থ হবে, এটা একটা মারাত্মক সমস্যা, যুক্তরাষ্ট্র এই সমস্যা থেকে উত্তরণ করতে পারবে না।
ইনসারলিক বিমান ঘাঁটি থেকেই ইরাক ও সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র বিমান হামলা চালিয়ে থাকে। এমএইচপি নেতা বলেন, এই বিমান ঘাঁটির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা থেকে থাকলে ওয়াশিংটন ও আঙ্কারার মধ্যকার জোটে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিদ্রোহে ইন্ধন দেয়া মানে, যুক্তরাষ্ট্র ও বৈশ্বিক শক্তি কেন্দ্রগুলো তুরস্ককে গৃহযুদ্ধে ফেলে দিতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা অভ্যুত্থান চেষ্টাটিতে ওয়াশিংটনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি দৃঢ়ভাবে নাকচ করে দিয়েছে।
এদিকে, তুরস্কে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে দমনাভিযানের অংশ হিসেবে দেশটির কর্তৃপক্ষ উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পত্রিকা-চ্যানেল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। বিবিসি বলছে, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের ফলে দেশটিতে ৩টি সংবাদ সংস্থা, ১৬টি টেলিভিশন চ্যানেল, ৪৫টি পত্রিকা এবং ১৫টি ম্যাগাজিন বন্ধ হয়ে যাবে। গেল ১৫ জুলাইয়ের ওই সামরিক অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার জেরে সামরিক বাহিনীর ১,৭০০ সদস্যকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে ১৪৯ জন জেনারেল এবং অ্যাডমিরালও রয়েছেন। সরকারের অভিযোগ এই অভ্যুত্থানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত তুর্কি ধর্মীয় নেতা ফেতুল্লাহ গুলেন দায়ী। তবে তিনি এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। অভ্যুত্থানে অন্ততপক্ষে ২৪৬ জন নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি আহত হয়েছে ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। বিভিন্ন গণমাধ্যম বন্ধ ও সামরিক বাহিনীর সদস্যদের বরখাস্তের এ খবর তুর্কি সরকারি রেশমি গেজেটে প্রকাশিত হয়েছে। তবে কোন কোন গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে সেগুলোর নাম-তালিকা এখনো প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, বন্ধ হতে যাওয়া গণমাধ্যমগুলোর অধিকাংশই ক্ষুদ্র সংস্থা, প্রাদেশিক গণমাধ্যম। তবে বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা এবং সংস্থাকেও সরকার লক্ষ্যে পরিণত করেছে। সামরিক বাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়াদের মধ্যে সেনাবাহিনীর ৮৭ জন জেনারেল, বিমানবাহিনীর ৩০ জন জেনারেল এবং নৌবাহিনীর ৩২ জন অ্যাডমিরাল রয়েছেন। এর আগে গত বুধবার, তুর্কি কর্তৃপক্ষ ৪৭ জন সাংবাদিককে আটকের নির্দেশ দেয়। ইতোপূর্বে ৪২ জন রিপোর্টারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কয়েকদিন পরই এই নির্দেশ দেয়া হলো। বিবিসি, রয়টার্স ও ডেইলি সাবাহ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন