শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

জিকা ভাইরাস : সতর্ক হতে হবে

প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলসহ বিশ্বের অন্তত ৩০টি দেশে জিকা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী রেড অ্যালার্ট জারি করেছে। বাংলাদেশে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের কোনো আশঙ্কা আপাতত দেখা না গেলেও আমাদের স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা জিকা ভাইরাস মোকাবিলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দিয়েছেন। প্রতিবেশী ভারত অথবা এশিয়ার কোনো দেশে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের সিম্পটম অনেকটাই ডেঙ্গু ভাইরাসের মতো। একইভাবে জিকা-উপদ্রুত অঞ্চলে এডিসজাতীয় মশার কামড়েই এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। জিকা ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক বা কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো অনাবিষ্কৃত থাকায় অনেকটা ডেঙ্গু জ্বরের মতোই হাত-পা ও শরীরের পেশিতে ব্যথা এবং রাশ ওঠার লক্ষণ দেখা যায় এবং ডেঙ্গুর মতো গুরুতর সমস্যা বা মৃত্যুঝুঁকি না থাকলেও জিকা ভাইরাসে আক্রান্তদের তরল খাবার এবং বিশ্রামে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়। তবে জিকা ভাইরাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, গর্ভবতী নারীরা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে গর্ভজাত সন্তানের মস্তিষ্কের গঠনে বিকলাঙ্গতার আশঙ্কা থাকে। গত বছর ব্রাজিলে জিকা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে প্রায় ৪০ হাজার অপূর্ণ মস্তিষ্কের শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জানা যায়।
এশিয়া এবং ইউরোপে এখনো জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। তবে গত দু’দিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত চারজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে এশিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশ জিকা ভাইরাসের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। গ্লোবালাইজড বিশ্বে কোনো দেশই কোনো অনাকাক্সিক্ষত ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে অন্য দেশের সাথে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও পরিবহন বন্ধ করে দিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেয়া ছাড়া বিকল্প নেই। বৈদেশিক শ্রমবাজারে আমাদের শ্রমিকরা সারাবিশ্বেই ছড়িয়ে আছেন। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া ও ক্যারিবিয়া থেকে আসা বিমানযাত্রী এবং জাহাজের ক্রু এবং যাত্রীপণ্যের ওপর উপযুক্ত পরীক্ষা ও কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে। জিকা ভাইরাসের চেয়ে ডেঙ্গু ভাইরাসে প্রাণহানির আশঙ্কা অনেক বেশি হওয়ায় জিকা ভাইরাস সংক্রমণ রোধের বাড়তি সতর্কতা ডেঙ্গুসহ নানাবিধ স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত এডিস মশার উৎপত্তি ও আক্রমণ থেকে বাঁচতে রাজধানীসহ সারাদেশে পরিচ্ছন্নতা ও জনসচেতনতা তৈরির বাড়তি উদ্যোগ নিতে হবে। এ উপলক্ষে ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা অভিযান এবং মশক নিধন কর্মসূচি নতুন মাত্রা লাভ করবে বলে আশা করা যায়। একইভাবে দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশন, পৌরসভা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত পারিবারিক ও পরিবেশগত পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির সরকারি ও নাগরিক উদ্যোগ প্রয়োজন।
জিকা ভাইরাস এশিয়া এবং আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থেকেই সারাবিশ্বে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। দু’বছর আগে পশ্চিম আফ্রিকায় শুরু হওয়া ভয়াবহ ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশ্বসম্প্রদায়ের উদ্যোগ ছিল অপ্রতুল। অল্প কয়েক মাসের মধ্যেই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন এবং গিনির ইবোলা-উপদ্রুত অঞ্চলে অন্তত ১১ হাজার মানুষ অসহায় মৃত্যুর শিকার হয়। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের অনগ্রসর অঞ্চলে মহামারি আকারে নতুন নতুন রোগ ছড়িয়ে পড়ার ধারাবাহিক ঘটনাগুলো নিয়ে নানা জল্পনা ও এবং কন্সপিরেসি থিউরিও চালু রয়েছে। গত দশকে সার্স ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ও সোয়াইন ফ্লু নিয়েও অনুরূপ বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণ মোকাবিলায় বাংলাদেশ যথেষ্ট সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। সোয়াইন ফ্লু সংক্রমণে গত বছর ভারতে দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়। বর্তমানে পাকিস্তানে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। প্রতিবেশী এসব দেশ থেকে, এমনকি গোলার্ধের অন্যপ্রান্ত থেকেও সহজেই এসব ভাইরাস বাংলাদেশে চলে আসতে পারে। তবে এসব ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা যেন আতঙ্কে পরিণত না হয়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা- এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও বাণিজ্য যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। জিকা ভাইরাসের রেড অ্যালার্ট আমাদের আরো স্বাস্থ্য সচেতন এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়ক হবে, এই প্রত্যাশা আমাদের। জিকা ভাইরাসসহ সম্ভাব্য সব ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, সব স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সমাজকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। যেসব রোগের চিকিৎসা এবং প্রতিষেধক এখনো অনাবিষ্কৃৃত, প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ ব্যবস্থাই তা মোকাবিলার একমাত্র অবলম্বন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন