চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসায় আইসোলেশন সেন্টার তৈরির হিড়িক পড়েছে। হাসপাতালে শয্যা আর চিকিৎসা সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা এসব সেন্টার গড়ে তুলছেন। ইতোমধ্যে প্রায় ৬শ’ শয্যার পাঁচটি সেন্টার চালু হয়েছে। আরো অন্তত ১০টি সেন্টার চালুর অনুমতি চেয়ে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে আবেদন করা হয়েছে।
করোনা সংক্রমণের উচ্চঝুঁকির চট্টগ্রাম নগরীতে পৌনে এককোটি মানুষের বসবাস। অথচ এখানে একটি হাসপাতাল দিয়ে করোনা চিকিৎসা শুরু হয়। জেনারেল হাসপাতালের একশ’ শয্যার সাথে ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে ৩০ শয্যার একটি ইউনিট খোলা হয়। আক্রান্তের হার বাড়তে শুরু করলে চমেক হাসপাতালে তড়িঘড়ি করে একশ’ শয্যার করোনা ইউনিট চালু হয়। ততক্ষণে রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। আর উপসর্গ নিয়ে করোনার কয়েকগুণ বেশি রোগী হাসপাতালে আসতে থাকে। ফলে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বেহাল অবস্থা তৈরী হয়।
অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলো করোনা আতঙ্কে প্রায় সবধরনের রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেয়। এতে হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছুটোছুটি করে রোগী মারা যেতে থাকে। এমন এক ভয়ানক ভীতিকর পরিস্থিতিতে করোনা রোগীদের জন্য আইসোলেশন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়ে। তবে তার আগেই ফৌজদারহাটে দেশের প্রথম ফিল্ড হাসপাতালের ৫০ শয্যায় করোনা চিকিৎসা শুরু হয়।
ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সিটি হলে চালু হয়েছে ২৫০ শয্যার সেন্টার। সেন্টারটিতে ১৬ জন চিকিৎসকসহ ৬০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোভিড রোগীদের পাশাপাশি অন্য রোগীদেরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার আগে নগরীর পতেঙ্গা হাইস্কুলে স্থানীয় কয়েকজন চিকিৎসকের উদ্যোগে একটি আইসোলেশন কাম ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালু হয়। হালিশহরে চালু হয়েছে একশ’ শয্যার আরও একটি সেন্টার। সর্বশেষ শনিবার নগরীর বাকলিয়ায় স্থগিত হওয়া চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর উদ্যোগে ৭০ শয্যার একটি সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। সেন্টারটিকে একশ’ শয্যায় উন্নীত করার কাজ চলছে। ফৌজাদারহাটে আবুল খায়ের গ্রুপের ২০ শয্যার আরো একটি সেন্টার চালুর অনুমতি দিয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এছাড়া মহানগর বিএনপির উদ্যোগে একটি, চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন পুলিশের উদ্যোগে একটি, গাউসিয়া কমিটির একটিসহ অন্তত দশটি সেন্টার চালুর প্রক্রিয়া চলছে।
বিএমএ চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি প্রফেসর ডা. মুজিবুল হক খান বলেন, করোনা চিকিৎসায় আইসোলেশন সেন্টার জরুরি। যাদের করোনা পজেটিভ, তবে তেমন জটিল কোন উপসর্গ নেই তাদের এসব সেন্টারে সরিয়ে নেওয়া হলে সংক্রমণ কমে আসবে। যাদের বাসা বাড়িতে আসোলেশনে থাকার সুযোগ নেই তাদের এসব সেন্টারে নিয়ে আসা যাবে। এসব সেন্টারে যাদের অবস্থার অবনতি হবে তাদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যাবে। তিনি বলেন, তবে সেন্টারগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্সসহ চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকতে হবে। ওষুধসহ অক্সিজেন এবং সার্বক্ষণিক অ্যাস্বুলেন্স সুবিধাও নিশ্চিত করতে হবে। যে কয়টি সেন্টার চালু হয়েছে সেগুলোতে এসব সুবিধা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, নতুন করে কোন সেন্টার অনুমোদন দিতে গেলে এসব বিষয় অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ইতোমধ্যে ৫টি সেন্টার অনুমোদন পেয়ে সেবা চালু করেছে আরো বেশ কয়েকটি চালুর আবেদন করেছে। চালু সেন্টারগুলোতেই বেশির ভাগ শয্যা খালি, নতুন করে সেন্টারের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনায় আনা হবে। এদিকে চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা সাত হাজার ৬৮৯ জন ছাড়িয়ে গেছে। গতকাল ৪ জনসহ এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১৬৯ জন। আরো ২৫ জনসহ সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৭২ জন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন