আশরাফুল ইসলাম নূর, খুলনা থেকে : বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষায় কোন পদক্ষেপই কি কাজে আসছে না! প্রতিদিন কোন না কোন মিডিয়াতে সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারকে নক করা হচ্ছে। তবুও কার্যত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না সরকার।
সুন্দরবন ও প্রাণী সংরক্ষণবাদীদের মতে, রয়েল বেঙ্গল টাইগার সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আজই শেষ সময়। এদিকে, কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়েই আজ ঢাকঢোল পিটিয়ে বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করছে বনবিভাগ। সর্বশেষ গত ২১ জুলাই সুন্দরবনের বাঘের ১৫ পিস হাড়সহ দুই পাচারকারীকে গ্রেফতার করে র্যাব-৬। কিছুদিন পর পর খুলনাঞ্চল থেকে বাঘের চামড়া ও হাড় উদ্ধার করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এভাবে ক্রমেই বাঘ শূন্য হতে চলেছে সুন্দরবন। তাহলে কি বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুরক্ষায় কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না?
সুন্দরবনের বিশাল ভূখ-ে বাঘের বসতির স্থান কমে আসছে। খাদ্যাভাব, বন ধ্বংস ও চোরাকারবারীদের থাবায় বাঘ সংরক্ষণের কোন প্রক্রিয়ায় কাজ হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সংস্থা বাঘ সংরক্ষণে নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছে।
সুন্দরবন বিভাগের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০০০-২০১২ সালের মধ্যে ১৩টি টাইগার রেঞ্জ দেশে ৬৫৪টি চামড়া ও দেহাবশেষ ও হাড় জব্দ হয়েছে। এতে ধারণা করা হয়, এই সময় এক হাজার ৪২৫ টি বাঘ মারা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী শতাব্দীতে এই প্রাণীটি পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। বাঘ বনের জীব- বৈচিত্র্য, খাদ্য শৃঙ্খল ও প্রতিবেশ চক্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক। বনের উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধি যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্য তৃণভোজী প্রাণী যেমন হরিণ, শূকর ইত্যাদি শিকার করে বনের প্রতিবেশ চক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বাঘ বন রক্ষায় অতন্দ্র প্রহরী এবং একটি বনের জীব-বৈচিত্র্যের অবস্থা নিরূপণের নির্দেশক প্রজাতি। যে বনের অবস্থা ভালো সেখানে বাঘের সংখ্যা বেশি থাকে।
সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গণপিটুনি, চোরা শিকারীসহ নানা কারণে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ বেঙ্গল টাইগার সুরক্ষায় বনবিভাগ কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব বিভাগের সূত্রে জানা যায়, গত ১২ বছরে সুন্দরবন ও এর আশেপাশের লোকালয়ে ৩৫টির অধিক বাঘ হত্যা করা হয়েছে। খাদ্য ও পানীয় পানির সংকটে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বাঘ অনেক সময় লোকালয়ে চলে আসে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ছিল ১০৬টি। প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে কত বাঘের মৃত্যু হয়েছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সুন্দরবন পশ্চিম ও পূর্ব ২টি বিভাগের ৪টি রেঞ্জ পশ্চিমে খুলনা ও সাতক্ষীরা পূর্বে শরণখোলা ও চাঁদপাই বন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে ঢুকেপড়া বাঘ গণপিটুনির শিকার হয়ে প্রায়ই মারা পড়ে। গত এক যুগে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে ২৪টি ও পূর্ব বিভাগে ১২টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সবচেয়ে বেশি ১৪টি বাঘ গণপিটুনিতে মারা গেছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মোঃ জহির উদ্দিন আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, বিশ্ববাঘ দিবস উপলক্ষে আজ সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালিত হবে। খুলনার প্রধান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হচ্ছে দাকোপের নলিয়ানে।
বাঘ-মানুষ দ্বন্দ্বের বিষয়ে বন অধিদপ্তরের বন সংরক্ষক (বন্যপ্রাণী অঞ্চল) তপন কুমার দে জানান, প্রতি বছর গড়ে ৩০ থেকে ৫০ জন মানুষ বাঘের আক্রমণে মারা যায়। আর গড়ে দু’তিনটি বাঘ লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে মারা পড়ে। গত ১৫ বছরে বাঘের আক্রমণে মানুষ মারা গেছে ৩২৮ জন। এসময় মানুষের হাতে বাঘ মারা পড়েছে ৩০টি। আরও ১৩টি বাঘ বার্ধক্যজনিত কারণে মারা গেছে বলে জানান এ বন কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন