শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

দেশে এক কোটি ৩৫ লাখ টন আমন চাল প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

৫২ লাখ হেক্টরে আবাদের কাজ করছেন কৃষক
নাছিম উল আলম : দেশে প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টন চাল প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে ৫২.৬০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদে কৃষকরা মাঠে মাঠে সকাল-সন্ধ্যা কাজ শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে আমন বীজতলা তৈরি প্রায় শেষ। লক্ষ্যমাত্রার ২০ ভাগ জমিতে রোপা আমনের আবাদও সম্পন্ন হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ধানের দরপতনের কারণে উৎপাদন ব্যয় না ওঠায় কৃষকরা আমন ও বোরোসহ সব ধরনের ধান আবাদে কিছুটা আগ্রহ হারিয়ে গম ও পাট আবাদে ঝুঁকছে বলে জানা গেছে। একসময় দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল হিসেবে আমনকে বিবেচনা করা হলেও গত চার দশকে বোরো ধান আবাদে বিপ্লব ঘটায় আমনের অবস্থান এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে। তবে কৃষি অর্থনীতিতে আমনের অবদান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে এখনো আমন প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রায় ৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের মাধ্যমে ১৫ লাখ ৫৯ হাজার টন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
তবে সাম্প্রতিক শ্রাবণের বর্ষণসহ বাড়তি জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কিছু আমন বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইতোমধ্যে। কৃষকরা নতুন বীজতলা তৈরিসহ যেকোনো উপায়ে প্রধান এ খাদ্য ফসলের আবাদ ও উৎপাদন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে।
চলতি মৌসুমে দেশে ৫২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। যদিও মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির অভাবে বীজতলা তৈরি কিছুটা বিলম্বিত হওয়া ছাড়াও বর্তমানে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় রোপা আমনও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এমনকি অনেক এলাকায় বিপুল পরিমাণ আমন বীজতলাও বিনষ্ট হচ্ছে একই কারণে। এরপরও লক্ষ্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে আশাবাদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।
গত বছরও দেশে প্রায় ৫৫ লাখ হেক্টরের কিছু বেশি জমিতে আমান আবাদ হলেও দু’দফার অতিবর্ষণে প্রায় ৩ লাখ হেক্টর জমির ফসল বিনষ্ট হয়। ফলে আমন উৎপাদন লক্ষ্য অর্জন পুরোপুরিভাবে সম্ভব হয়নি। সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে চলতি মৌসুমে দেশে ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে ১.৩৪ কোটি টন চাল পাওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। লক্ষ্যমাত্রার পায় ২০ ভাগ জমিতে ইতোমধ্যে আমন আবাদ সম্পন্ন হয়েছে বলেও দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬টি জেলায় ৭ লাখ ৫৩ হাজার ৯৮৭ হেক্টর জমিতে এ দানাদার খাদ্য ফসল আবাদের মাধ্যমে প্রায় ৭.৬০ লাখ টন চালপ্রাপ্তির লক্ষ্যে কাজ করছেন কৃষকরা। এ লক্ষ্যে বরিশাল অঞ্চলে চলতি মৌসুমে প্রায় ৫১ হাজার হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা তৈরির কথা থাকলেও কৃষকরা ইতোমধ্যে প্রায় ৫৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো বীজতলাও তৈরি করেছেন। আর গতকাল পর্যন্ত আবাদ সম্পন্ন হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে আমন ও বোরোর আবাদ দেশের অন্য এলাকার তুলনায় কিছুটা বিলম্বিত হয়ে থাকে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মতে, ১৯৫০-৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সর্বমোট চাল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল মোট ৬২ লাখ টন। সে সময় বীজ ও সব ধরনের অপচয় বাদে চালের নিট প্রাপ্তি ছিল ৫৬ লাখ টনের কাছাকাছি। ৪ কোটি ২১ লাখ জনসংখ্যার দৈনিক মাথাপিছু ৪৫৪ গ্রাম হিসেবে তখন খাদ্যশস্যের প্রয়োজনীয়তা ছিল ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টন। ১৯৬৮ সালে দেশে ‘আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-‘ইরি’ উদ্ভাবিত উফশী জাতের ধানের আবাদ শুরু হয়। ফলে ১৯৭৫ সালে চালের উৎপাদন ১.০৭ কোটি টনে উন্নীত হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার টনে। যার মধ্যে ঐ সময়ে আমন ধান থেকে চালের প্রাপ্তি ছিল প্রায় ১ কোটি ৩৫ লাখ টনের মতো। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রী প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৫ দশকে প্রায় ৭০টি উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের প্রায় ৩৫টি আমনেরও জাত রয়েছে। এমনকি ব্রি ইতোমধ্যেই বন্যা ও লোনা পানি সহিষ্ণু আমন ধানের জাতও উদ্ভাবন করেছে। উদ্ভাবিত আমনের উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান থেকে হেক্টরপ্রতি ৪ টন পর্যন্ত চাল পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব উফশী জাতের আমন বীজ এখনো দেশের সব এলাকায় না পৌঁছলেও গত বছর পর্যন্ত দেশের মোট আবাদকৃত জমির প্রায় ৮০ ভাগই ব্রি উদ্ভাবিত ধানের আবাদ হচ্ছে। শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই এখনো স্থানীয় সনাতন জাতের কম ফলনশীল আমন বীজ আবাদের আধিক্য রয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অথিধদফতরের পরিসংখ্যানে জানা গেছে।
গত বছর ‘খরিপ-২’ মৌসুমে সারাদেশে ৫২ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রায় ৫৪ লাখ হেক্টরে আবাদ হলেও ২.২০ লাখ হেক্টর জমির আমন ফসল বন্যা ও অতিবর্ষণসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন