শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গি ইস্যুতে চাপা উদ্বেগ আ’লীগে

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গত সোমবার গভীর রাতে রাজধানীর কল্যাণপুরে ৫ নম্বর রোডের ৫৩ নম্বর ভবনে (জাহাজ বিল্ডিং) জঙ্গিদের আস্তানায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে ৯ জন নিহত এবং সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর গুলশান-কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর ‘জঙ্গি তৎপরতায়’ উদ্বেগ ছড়াচ্ছে গোটা দেশজুড়ে। জঙ্গি নির্মূলে সরকার আত্মবিশ্বাসী ও সক্ষম বলে দাবি করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গিবিরোধী লড়াই আর সচেতনতা তৈরির কথা বলছেন সরকারি দল আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে এখনো পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন তারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি হামলা ও তৎপরতায় আমরা উদ্বিগ্ন নই। তবে সিরিয়াসভাবে বিষয়টিকে মাথায় নিয়ে কঠোরভাবে দমনের চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যেই বিষয়টি মোকাবিলার জন্য আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দেশ থেকে চিরতরে আমরা জঙ্গিদের নির্মূল করবই।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ডিসি সম্মেলনের তৃতীয় দিনে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রশাসনের আওতায় স্থানীয় পর্যায়ে সন্ত্রাস ও নাশকতাবিরোধী যেসব কমিটি করা হবে, সেগুলো দলীয় হবে না।
তিনি বলেন, প্রশাসনিকভাবে গঠিত সন্ত্রাসবিরোধী কমিটিতে বিভিন্ন দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন। এক প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে মাঠপর্যায়ে কমিটি গঠন করছে। এটা আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত। তবে প্রশাসনিকভাবে যে কমিটি হবে, তা দলীয় হবে না। এখানে সব ধরণের, সব দলের লোক থাকবে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদকম-লীর একজন সদস্য বলেন, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে সমগ্র দেশবাসী উদ্বিগ্ন, সরকারি দলের নেতা হিসেবে আমরাও ব্যতিক্রম নই। এসব কর্মকা-ের কারণে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হচ্ছে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সরকার দেশ-বিদেশে প্রশ্নের মুখে পড়বে এটা নিশ্চিত।
দেশে পরপর দুটি জঙ্গি হামলা এবং সর্বশেষ রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের তৎপরতায় ৯ জঙ্গি নিহতের পর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতিনিধি বা রাষ্ট্রদূতেরা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। জঙ্গি নির্মূলে সরকারকে সহযোগিতা দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছে এসব দেশ। জঙ্গি হামলার তদন্তে বিদেশি গোয়েন্দা সহযোগিতা নেয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে, যদিও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, এই তথ্য ঠিক নয়। যুক্তরাষ্ট্র চারটি প্রস্তাব দিয়েছে জানালেও তাদের প্রস্তাবে কী কী রয়েছে, সেটা অবশ্য বলেননি তথ্যমন্ত্রী।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর একজন সদস্য বাংলাদেশের ওপর বিদেশি খবরদারি বাড়তে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক আইএস জঙ্গিদের নৃশংসতার কারণে তাদের নিয়ে বিশ্বনেতাদের মধ্যে উদ্বেগ আছে। এই জঙ্গি সংগঠনটি পরমাণু শক্তিধর ফ্রান্সে জঙ্গি হামলা চালিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করেছে। আরও হত্যার হুমকিও দিয়েছে। আরেক পরাশক্তি যুক্তরাজ্য আইএসের পরবর্তী লক্ষ্য হবে-এমন কথাও জানিয়ে দেয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই। হামলা হয়েছে অর্থনৈতিক শক্তিধর দেশ জার্মানিতেও। এই আইএস বাংলাদেশেও তৎপর, এমন কথাও বলছে জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ। বাংলাদেশ সরকার আইএসের অস্তিত্ব স্বীকার না করলেও বিদেশি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে দেশীয় জঙ্গিদের যোগাযোগের বিষয়টি অস্বীকার করছে না। এই অবস্থায় জঙ্গি তৎপরতা মোকাবিলায় দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে পরাশক্তি হিসেবে পরিচিত দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা।
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সহায়তা সরকার নিতেই পারে। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘিত হয়, এমন কোনো প্রস্তাব মেনে নেবে না সরকার।
বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতা নতুন কোনো প্রবণতা নয়। মূলত নব্বই দশকের শুরুর দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দেশে কার্যক্রম শুরু করে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ। তবে এখন উগ্রবাদে কেবল এই দুই দেশভিত্তিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা নয়, স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা আনসারউল্লাহ বাংলাটিম, আনসার আল ইসলাম, আন্তর্জাতিক সংগঠন হিযবুত তাহরীরসহ বিভিন্ন গোষ্ঠী এখনো সক্রিয় দেশে। দেশীয় জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদিন বা জেএমবি তো রয়েছেই। আর এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে, জঙ্গিরা অস্ত্র আর প্রযুক্তির দিক থেকে সেকেলে নয় কোনোমতেই। বরং গুলশানের হলি আর্টিজান আর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলার পর জঙ্গিদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ আর ব্যাপক নৃশংসতার পরিকল্পনার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আর্টিজানে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে জঙ্গিরা হত্যা করেছে খুবই কম সময়ে। আর শোলাকিয়া ময়দানে দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতে হামলা হলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটতে পারত। এই দুই ঘটনার পর বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জোরদার হয়েছে। কিন্তু জানা যাচ্ছে, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী-পুরুষ, তরুণ-প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উগ্রবাদে জড়িয়েছে। এমনকি পরিবারের সব সদস্যদের নিয়েও ‘নিখোঁজ’ হওয়ার কাহিনী এসেছে গণমাধ্যমে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা পরিস্থিতিতে অতীতের যে কোন অবস্থার চেয়ে গুরুতর হিসেবেই দেখছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা নিয়ে দলের গত ২৩ জুলাই দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকেও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের আগেও দেশে এরকম সন্ত্রাসী কর্মকা- হয়েছে, এখনও সেই রকম ঘটনা ঘটেছে। তাই এ জঙ্গিদের মোকাবিলায় নেতাকর্মীদের সচেতন হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জনগণকে সচেতন করতে নেতাদের নির্দেশ দেন। শুধু আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী বৈঠকে নয়, বিষয়টিতে প্রধানমন্ত্রী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন গত মন্ত্রিসভার বৈঠকেও। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, আগস্ট মাসে দেশে আরও হামলা হতে পারে বলে গোয়েন্দা তথ্য আছে সরকারের আছে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী। জঙ্গি হামলা চালাতে জঙ্গিরা আত্মঘাতী স্কোয়াডসহ নারী সদস্যদের নিয়োগ করেছে, এমন গোয়েন্দা তথ্যও আছে বলে মন্ত্রীদের জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
জঙ্গিবিরোধী সচেতনতা তৈরির বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগও। দলীয়ভাবে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। কেবল নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতা নয়, সরকারি দল কাজে লাগাতে চায় দলের বাইরেও স্থানীয় পর্যায়ে বিশিষ্টজন, পেশাজীবী আর ধর্মগুরুদের। গত এক মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হুমকি দেয়া জঙ্গিদের আর্থসামাজিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এদের মধ্যে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান যেমন আছে, তেমনি আছে দিনমজুর পরিবারের সদস্যরা। উগ্রবাদে যেমন ইংরেজি মাধ্যমপড়–য়া এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জড়িয়েছে, তেমনি আছে কওমি বা আলিয়া মাদরাসাপড়–য়া শিক্ষার্থীরা। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ত এমন তরুণরাও যে এসব তৎপরতায় জড়াননি, এটাও বলা যাচ্ছে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
সালমা ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১:২৪ পিএম says : 0
সরকার হিসেবে ভালো, মন্দ সব কিছু সফলতা ও ব্যর্থতা তাদের
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন