যারা তুরস্কের গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি চিন্তিত অভ্যুত্থানকারীদের ভাগ্য নিয়ে তারা তুরস্কের প্রকৃত বন্ধু নয়
ইনকিলাব ডেস্ক : পশ্চিমা দেশগুলোর তীব্র সমালোচনা করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, আপনারা নিজের চরকায় তেল দিন, অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানোই ভাল। তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থান চেষ্টার পর পশ্চিমা দেশগুলো আঙ্কারার সঙ্গে সংহতি প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। অভ্যুত্থান চেষ্টার পর তুরস্কে ব্যাপক ধরপাকড় এবং বরখাস্তের জন্য পশ্চিমা দেশের নেতৃবৃন্দ এরদোগানের সমালোচনা করছেন। তিনি এর বিপরীতে পশ্চিমাদেরকে বলেন, নিজের চরকায় তেল দিন।
গত শুক্রবার আঙ্কারায় প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে এরদোগান পশ্চিমা দেশগুলোর সমালোচনা করে বলেন, যারা তুরস্কের গণতন্ত্রের চেয়েও বেশি চিন্তিত অভ্যুত্থানকারীদের ভাগ্য নিয়ে তারা তুরস্কের প্রকৃত বন্ধু নয়। এরদোগান বলেন, যখন সন্ত্রাসী হামলায় ১০ জন নিহত হয় তখন আপনারা বিশ্বকে জ্বালিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু যখন তুর্কি প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান চেষ্টা হলো আপনারা অপরাধীদের পক্ষ নিলেন। তুরস্কে অভ্যুত্থান চেষ্টার পর থেকে সেনা সদস্য, বিচারক, আইনজীবী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ অন্তত ১৮ হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮ হাজার মানুষের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যেই বেশকিছু সংবাদমাধ্যমকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই সরকারি নিয়ন্ত্রণকে পশ্চিমা নেতাদের একাংশ কর্তৃত্ববাদী আচরণ বলে অভিহিত করেছেন। ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় তুর্কি সেনাবাহিনীর একাংশ অভ্যুত্থান ঘটিয়ে দেশের শাসনভার নেয়ার দাবি করে, যা দেশটির টেলিভিশনে প্রচার করা হয়। মধ্যরাতে ক্ষমতা দখলের ঘোষণা দিয়ে তুরস্কের ডানপন্থী সরকার উচ্ছেদের দাবি করে দেশটির সেনাবাহিনীর একাংশ। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে তারা জানায়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার রক্ষার স্বার্থে সশস্ত্র বাহিনী তুরস্কের ক্ষমতা দখল করেছে। টেলিভিশনের পর্দায় পড়ে শোনানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, এখন শান্তি পরিষদ দেশ চালাবে এবং কারফিউ ও সামরিক আইন জারি থাকবে। একই সঙ্গে তুরস্কের বিদ্যমান বৈদেশিক সব সম্পর্ক বহাল থাকবে এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা প্রাধান্য পাবে। কারফিউর বিরোধিতা করে এরদোগানের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে এলে সংঘর্ষ শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর সব অংশের সমর্থন না থাকায় এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তৎপরতায় জনগণ রাস্তায় নেমে এলে বিদ্রোহী সেনাদের উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এর আগে প্রেসিডেন্ট এরদোগান যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র একজন জেনারেলের বিরুদ্ধে তুরস্কে সামরিক অভ্যুত্থানের ব্যর্থ চেষ্টা চালানোর পরিকল্পনাকারীদের পক্ষ নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন। এমন অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং দুর্ভাগ্যজনক বলে বর্ণনা করেছেন মার্কিন জেনারেল জোসেফ ভোটেল। তুরস্কে গত ১৫ জুলাইয়ে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে ২৬৫ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে অভ্যুত্থানকারী ১০৪ জন। বাকিরা পুলিশ ও বেসামরিক লোকজন। ওই অভ্যুত্থানের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৭শ’ সেনাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়েছে সামরিক বিভাগের প্রায় ৪০ ভাগ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে। এছাড়া ৬৬ হাজারের বেশি সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীকেও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে ৫০ হাজার পাসপোর্ট। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ১৪২টি পত্রিকা ও সংবাদ মাধ্যম। আটক করা হয়েছে কয়েকজন সাংবাদিককেও। আল-জাজিরা, দ্য গার্ডিয়ান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন