মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জঙ্গিবাদ দমনে জনযুদ্ধ দরকার -এইচটি ইমাম

প্রকাশের সময় : ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : জঙ্গিবাদ দমনের জনযুদ্ধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের হলরুমে এক গোল টেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। ‘ইসলামের আলোকে জঙ্গি ও সন্ত্রাস মোকাবিলায় আমাদের করণীয় শীর্ষক’ এ গোল টেবিলের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি। গত বছর শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের টানা আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে এইচ টি ইমাম বলেন, আপনারা মনে রাখবেন ওই যে ১০০ দিনের সন্ত্রাস, এটাকে আমরা ঠেলে ঘুটিয়ে দিয়েছি। জনগণের শক্তির ওপরে কিছুই নেই। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে আমরা জনযুদ্ধে পরিণত করেছিলাম। এবারও আরেকটি জনযুদ্ধ দরকার। এই যুদ্ধে শামিল হয়ে আমাদের আলেমরা, মন্ত্রীরা, শিক্ষকরা, ছাত্ররা সকলেই মিলে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। মাঠে নামি। এদেরকেও (জঙ্গি) আমরা ওই সন্ত্রাসের মতো ঠেলে ঘুটিয়ে বন্ধ করতে পারব। এটা আমার বিশ্বাস।
গ্রামে-গঞ্জে ওয়াজ মাহফিলের নামে যে অত্যাচার হয়, চাঁদাবাজি হয়, ফতোয়া দেয়া হয় এগুলোর বিরুদ্ধে সকলে মিলে কাজ করারও আহ্বান জানান এইচটি ইমাম। জামায়াত-শিবিরের উত্থানের পটভূমি তুলে ধরে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে জামায়াতের যে বিভিন্ন গ্রুপগুলো উঠে এসেছে এরাই ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন নামে গণহত্যা করেছে। কিন্তু ১৬ ডিসেম্বরের পর এরা কোথায় গেল? এদের অনেকে সরাসরি পাকিস্তানে চলে গেছে। এদের অনেকে ব্রিটেনে চলে গেছে। অনেকে আমেরিকায় চলে গেছে। আবার অনেকে দেশের মধ্যেই ঘাপটি মেরে থেকে গেছে।
তিনি বলেন, কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এদের সকলকে নিয়ে এলো। এদের সকলকে নিয়ে অদ্ভুত জিনিস সৃষ্টি করল। সেটা হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। এটা আর কিছুই না। বাংলাদেশকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ধারা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে এইচটি ইমাম আরও বলেন, পরবর্তীতে তার স্ত্রীর সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার খুনিদের নিয়ে ফ্রিডম পার্টি গঠন করা হলো। এটাও জঙ্গিবাদের অংশ।
বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে এইচটি ইমাম আরও বলেন, পাকিস্তান কখনও মনে-প্রাণে বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। সেই জিনিসটা এখন আরও প্রকাশ্য হয়ে উঠেছে। তাদের পার্লামেন্টে একটি স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে যেভাবে কথা বলা হচ্ছে, আর তাদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এই দেশে (বাংলাদেশে) কারা কথা বলছেন। এগুলোর মিল খুঁজলেই জঙ্গিবাদের সূত্র পাওয়া যায়।
ইমাম বলেন, জঙ্গিদের লক্ষ্য হচ্ছে অরাজকতা সৃষ্টি করে তোলপাড় সৃষ্টি করা। বাংলাদেশকে বিশ্বের কাছে আন্তর্জাতিক জঙ্গির তকমার ছাপ মারা। আর সবগুলোরর ক্ষেত্রে একটি নাম ‘আইএস’ ব্যবহার করা। তাই বাংলাদেশ থেকে মওদুদীবাদীদের উৎখাত করতে না পারি, জঙ্গিবাদ উৎখাতে এদের শিক্ষা বন্ধ করতে না পারি তাহলে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষাকার্যক্রমের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের প্রচার বিভাগের চেয়ারম্যান আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খেলাধুলার কোনো জায়গা নেই। সংস্কৃতি চর্চা হয় না। শুধু কতগুলো ফোরাম আছে। এগুলোর কর্মকা- হয়। তাই এখন অন্যান্য যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেগুলোও খতিয়ে দেখতে হবে। এখন খাতিরের সময় না। প্রশ্রয় দেয়ারও দরকার নেই।
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়ার জন্য শিক্ষকদের ব্যর্থতাকেও দায়ী করেন। তিনি বলেন, শিক্ষকরাই দায়ী। কাজেই আমি মনে করি আমাদের প্রত্যেক শিক্ষকের পেছনটা দেখা উচিত এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও সব জায়গাতেও এখন আর খাতিরের সময় নাই। এখন আর এই প্রশ্রয় দেয়ার আর কোনো সময় নাই। এই মওদুদীবাদের শিক্ষা যদি আমরা উৎখাত না করতে পারি তাহলে কিছুই হবে না।
গোল টেবিল আলোচনায় আলেমা-ওলামা ও শিক্ষাবিদরা মতামত জ্ঞাপন করেন। আলোচনায় তারা বলেন, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদী কর্মকা- ইসলাম সমর্থন করে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম, সাম্যের ধর্ম। তাই দেশের মানুষকে এ বিষয়ে সচেতন ও সতর্ক করতে দেশবরেণ্য পীর, মাশায়েখ, আলেম, ওলামা ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে সরকারি উদ্যোগে আলাদা সেল গঠন করা যেতে পারে। শুধু ইসলামী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণা করলে হবে না, দেশের সব আলেম শ্রেণিকে এর অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। বক্তারা আরও বলেন, জঙ্গিবাদ ইস্যুটি বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে বেশি প্রচারণা করা হচ্ছে। কারণ এর পেছনে রাজনৈতিক যোগ বিয়োগ আছে। যারা রাজনৈতিকভাবে সুবিধা পাবে তারাই এর পেছনে ইন্ধন দিচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেন।
আলোচনায় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, জঙ্গিবাদ বৈশ্বিক সমস্যা। কিন্তু বাংলাদেশে এটি রাজনৈতিক সমস্যা। এর সামনে জেএমবি-হরকাতুল জিহাদ। পেছনে হচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। আর এটাকে সার্টিফিকেশন দেয়ার জন্য হচ্ছে আইএস (ইসলামিক স্টেট)। কারণ আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবেই এটিকে আইএস নাম দেয়া হচ্ছে। যাতে আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী আইএস ইস্যুতে বাংলাদেশে নাক গলাতে পারে।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাঁওয়ের ইমাম ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, ইসলামে আত্মঘাতী হওয়া জঘন্য অপরাধ। মদ খেয়ে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তার জানাজা যেমন পড়া যাবে, যারা ইসলামের নাম করে আত্মঘাতী হামলা করে মৃত্যুবরণ করে তাদের জানাজা পড়াও জায়েজ হবে। বাংলাদেশে এ সকল জঙ্গিবাদী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে সচেতন ও সতর্ক করতে দেশের আলেম সামাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আর সরকারের উচিত হবে ইসলামী ফাউন্ডেশনের পাশাপাশি এ দেশের আলেম সমাজকে নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করা। প্রয়োজনে আলাদা একটা সেলও গঠন করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পাকিস্তান ও ইসলাম রক্ষার নামে মওদুদীর চিন্তায় গড়া নিজামী, মুজাহিদদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে নিষ্ঠুরতা আমরা দেখেছি তা আজকের আইএসের হত্যা-নিষ্ঠুরতাকেও হার মানায়। মূলত জামায়াত-শিবির এদেশে আইএসেরই প্রক্সি দিচ্ছে।
জামায়াতকে মরা ইঁদুরের সঙ্গে তুলনা করে মাসউদ বলেন, ইঁদুর না সরিয়ে হাজার বালতি পানি তুললেও যেমন কূপ পবিত্র হয় না। তেমনি জামায়াত নিষিদ্ধ না করে হাজার চেষ্টা করেও জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়া অসম্ভব। তিনি এইচটি ইমামের কাছে প্রশ্ন রাখেন, জামায়াত নিষিদ্ধ করতে লজ্জা পাচ্ছেন কেন? জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে তো যুুদ্ধাপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের পর্যবেক্ষণ রয়েছে। তাহলে লজ্জা কিসের?
সরকারের শরিক ১৪ দলীয় জোটের তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী জঙ্গিবাদ দমনে কতকগুলো করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ তুলে ধরেন।
নজিবুল বশর বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে লাখ লাখ আলেম-ওলামা ও হাজার হাজার ওয়াজিন আছেন। ওয়াজিনরা ইসলামের নাম নিয়ে ওয়াজ নসিহত করে যাচ্ছে। তারা কারা, তারা সরকারবিরোধী কিনা? তারা জামায়াতের অনুসারি কিনা? তারা যদি কোরআন-সুন্নতের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ওয়াজ করে তাহলে এটা বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
জঙ্গিবাদের জন্য জামায়াতে ইসলামকে সরাসরি দায়ী করে ইসলামী ঐক্যজোট (একাংশ)’র চেয়ারম্যান মিছবাউর রহমান চৌধুরী বলেন, জামায়াতকে ছোট করে দেখলে হবে না। দোস্তি করলে হবে না। তাদের টাকায় বিলবোর্ড টাঙানো ঠিক হবে না। এরা নাই কোথায়। এমনকি এরা সাংবাদিকদের মধ্যেও আছেন।
জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচারণায় একটি সেল গঠনের দাবি জানিয়ে মিছবাউর বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ঠাঁই হবে না। কারণ যারা জিহাদের নামে মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের লাশ নেয়ার লোকও নেই। এমনভাবেই দেশের মানুষ জঙ্গিবাদকে ঘৃণা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য আকতারুজ্জামান বলেন, বিগত সময়ে যারা বাসে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেছে। আর যারা এই সময় গুলশানে ক্যাফেতে ঢুকে মানুষকে জিম্মি করে হত্যা করছে তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এক। এদের শুধু কৌশল পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের দায়িত্ব যে ছাত্রটিকে আপনি ভর্তি করলেন, সে কোথায় যায়, কী করে, কতদিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে, অনুপস্থিত থাকার যথাযথ কারণ আছে কিনা; তা দেখা। অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-পরিষদের চেয়ারম্যান এইচটি ইমামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার গোলাম মাওলা নক্শবন্দী, ইসলামী আরবী বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য আহসান উল্লাহ, ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন