রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ভয়ংকর প্রতারক মো. সাহেদ ক্যাসিনো কারবারেও জড়িত। নিয়মিত ক্যাসিনো খেলতেন। ক্যাসিনোর গডফাদার হিসাবে পরিচিত যুবলীগ থেকে বহিস্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, খালেদ মাহমুদ ভুইয়া ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী জিকে শামীমের সঙ্গে তার গভীর সখ্যতা ছিল সাহেদের। কাকরাইলের ভুইয়া ম্যানশনে সম্রাটের অফিসে গিয়ে প্রায়ই আড্ডা দিতেন। উত্তরা, গুলশান ও মতিঝিলে ক্যাসিনো খেলতেন। তবে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন এসব খেলাধুলা করতেন। দেশের বাইরে সিঙ্গাপুর গেলে ম্যারিনা বেতে গিয়ে ক্যাসিনো খেলতেন। করোনা টেস্টের জালিয়াতি করার ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এসব তথ্য পেয়েছে। তবে গতকাল পর্যন্ত ভয়ংকর প্রতারক মো. সাহেদকে গ্রেফতার করতে পারেনি আইন-শৃংখলা বাহিনী। দেশের ভেতরেই আত্মগোপনে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তের সাথে জড়িত র্যাব কর্মকর্তারা।
তাছাড়া রিজেন্ট হসপাতালের কয়েকজন সাবেক কর্মকর্তাও এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, এমন কোন কাজ নেই সাহেদ করেনি। ক্যাসিনো কারবার চালিয়েও অর্থ কামিয়েছেন। যুবলীগের অনেক বিতর্কিত নেতাদের সাথেও তার গভীর সখ্যতা ছিল। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান শুরু হলে তার চালচলনের ধরন পাল্টে যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানায়,সাতক্ষীরায় অনেকটা অভাব-অনটনের মধ্যে বড় হয়েছেন প্রতারক সাহেদ। ২০০০ সালের দিকে তিনি ঢাকায় এসে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান। জোট সরকারের আমলে তার সাথে পরিটয় বির্তকিত ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের। মামুনের মাধ্যমে নিয়মিত যেতেন হাওয়া ভবনে। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই সময় থেকেই সাহেদ কৌশলে লোকজনের সাথে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। ওয়ান-ইলেভেনের সময় কিছুটা বেকায়দায় পড়ে যান। মামুন গ্রেপ্তার হলে কৌশলে অন্য জগতে চলে যায় মামুন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে ভীড় করেন কিছু আওয়ামী লীগ নেতার কাছে। জাহির করতে থাকেন তিনি একজন আওয়ামী লীগার। ভীড়তে থাকেন সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে। ২০১০ সালে ধানমন্ডিদে এমএলএম ব্যবসা চালিয়ে অনেকে পথে বসিয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করে। তবে এই যাত্রায় কারাগাওে যেতে হয়। দেনদরবার ও লবিং করে কারাগার থেকে ছাড়া পান। তারপর থেকে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেন সাহেদ। ২০১৭ সালের দিকে যুবলীগ নেতা সম্রাট ও খালিদের সাথে তার পরিচয়। প্রতারণার পাশাপাশি ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়েন সাহেদ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রিজেন্ট হাসপাতালের সাবেক এক কর্মকর্তা গতকাল বলেন, ২০১৬ সাল থেকে সাহেদের সাথে চাকরী করছি। বাহিরে থেকে মনে হয় সে অনেক ভালো মানুষ। কিন্ত তার মতো চালাক লোক দেশে আছে কিনা তার সন্দেহ। এমন কোন কাজ নেই সে করে না। রাতের বেলায় উত্তরা, গুলশানে কিছু নামিদামি হোটেলে ক্যাসিনো খেলতেন। তাছাড়া মাঝে মধ্যে মোহামেডান ও ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্ল্যাবেও যেতেন। সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন ক্যাসিনো খেলতেন। সম্রাট ও খালেদের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। কাকরাইলের ভ্ইুয়া ম্যানসনে সম্রাটের অফিসে প্রায়ই যেতেন। তিনি আরও বলেন, জিকে শামীমের সাথেও তার ভালো সম্পর্ক ছিল। জিকে শামীম গ্রেপ্তার হওয়ার আগে কয়েকবার উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে রিজেন্টের প্রধান কার্যালয়ে এসেছিলেন। সাহেদ গনপুর্তের বেশ কিছু ঠিকাদারী কাজ ভাগিয়ে নিয়ে জিকে শামীমের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দিতেন। আমাকে নিয়ে একাধিকবার জিকে শামীমের নিকেতনের অফিসে গেছেন। মাঝেমধ্যে সিঙ্গাপুর যেতেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সাহেদের ব্যাপারে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তা শুনলেই বিস্ময়কর। কোন কিছু বিশ্বাস করতে পারছি না। সে কঠিন একটা বাটপার। এমন কোন কাজ নাই যা তার দ্বারা সম্ভব হবে না। ক্যাসিনো কারবারেও সে জড়িত। সাহেদ তার হাত লম্বা বানানোর জন্য বেছে নেন মিডিয়া ও রাজনীতিকে। এই সুবাদে প্রেসিডেন্ট-প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির সান্নিধ্যে গিয়ে ছবি তুলে তা প্রচারের ব্যবস্থা নেন। অভিযোগ আছে, নানা কারসাজি করে বেসরকারি টিভি চ্যানেলেও মুখ দেখাতে শুরু করেন সাহেদ। একসময় টকশোতে নিয়মিত হয়ে যাওয়া সাহেদ এমনকি চ্যানেল আইয়ের তৃতীয় মাত্রার মতো দর্শক-আস্থার টকশোতে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যান। তাকে প্রথম টিভি পর্দায় আনা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কয়েকজন সাংবাদিক ভূমিকা রাখেন বলে প্রচার আছে। সাহেদের প্রতারণার কাজে মিডিয়ায় তার এই পরিচয় ব্যবহার করেন তিনি। সঙ্গে নিজের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড পত্রিকার সম্পাদক পরিচয় তো ছিলই।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন