শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ঢাকায় ১০ পশুর হাট

উত্তর সিটির ইজারা চ‚ড়ান্ত : দক্ষিণে এখনও বাকি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২০, ১:৫৪ এএম | আপডেট : ১০:৩৭ এএম, ১৫ জুলাই, ২০২০

ঈদুল আযহার আর দুই সপ্তাহ বাকি। এবার ঢাকায় ১০টি কোরবানির পশুর হাট বসবে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় পাঁচটি এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বসবে বাকি পাঁচটি অস্থায়ী পশুর হাট। এর বাইরে উত্তরে গাবতলী ও দক্ষিণে সারুলিয়ার স্থায়ী পশুর হাটেও চলবে কোরবানির পশুর বেচাকেনা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে এবার অনলাইনে পশু কেনাকাটার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলেও শেষ পর্যন্ত রাজধানীর পশুর হাট নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানার কিছু বাধ্যবাধ্যকতা দেয়া হয়েছে। যদিও তা মানানো সম্ভব নয় বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

করোনার সংক্রমণ এড়াতে এবার অনলাইনে কোরবানির হাটকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতারা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ই-ক্যাবের উদ্যোগে ‘ডিজিটাল হাটে’ কোরবানির পশু (গরু-ছাগল) বিক্রি করছে বেশ কয়েকটি অনলাইন প্রতিষ্ঠান এবং এগ্রো ফার্ম। এর মধ্যে রয়েছে- দারাজ ডটকম, আজকের ডিল ডটকম, একশপ ডটকম, সব্জিবাজার ডটকম, ই-শপ ফুড ফর নেশন, সাদেক-এগ্রো, গরুরহাট ডটকম, আনন্দমেলা, প্রিয়শপ ডটকম, দেশিগরুবিডি ডটকম। অনলাইনে পশু কেনাকাটার সময় আবার প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে। কোরবানির হাটে মাত্র ছয়/সাত দিনে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়। সে কারণে প্রতারকচক্র ফাঁদ পেতে কয়েক দিনে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে পারে। এ বিষয়ে ডিএমপির সাইবার ক্রাইম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, অনলাইনে যারা কোরবানির পশু বিক্রি করছে তাদেরকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কেউ প্রতারণা করে পার পাবে না। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, কোনো ক্রেতা যদি ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে পশু কিনে তাহলে আমরা শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করছি। যখন কোনো ক্রেতা আমাদের প্লাটফর্ম থেকে কোরবানির পশু কিনবে এবং অর্ডার কনফার্ম করবে তখন ক্রেতার পরিশোধিত টাকার মধ্যে ২৫ ভাগ আমরা বিক্রেতাকে পরিশোধ করবো। ক্রেতা পশু বুঝে পাওয়ার পর বাকী ৭৫ ভাগ টাকা বিক্রেতাকে পরিশোধ করা হবে।

জানা গেছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যেও এ বছর রাজধানীতে স্থায়ী দুইটি হাটের বাইরে আরও ২৪টি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু ডিএনসিসির ১০টি ও ডিএসসিসির ১৪টি হাটের ইজারার জন্য দুই দফা দরপত্র আহŸান করেও কাঙ্খিত দর পাওয়া যায়নি। এ কারণে সব হাট ইজারা দেওয়া সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত দুই সিটিই পাঁচটি করে হাটের ইজারা চূড়ান্ত করেছে। এর বাইরে অন্য কোনো হাট ইজারা না দেওয়ারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে উত্তর সিটি। আর দক্ষিণ সিটি ১৯ জুলাই পর্যন্ত হাট ইজারার সুযোগ উন্মুক্ত রাখলেও ওই সময়ে গিয়ে হাট ইজারা নেওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যাবে না বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ডিএনসিসির ইজারা চূড়ান্ত হওয়া হাটগুলো হলো, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তরা ১৭ নম্বর সেক্টরের বৃন্দাবন থেকে উত্তর দিকে বিজিএমইএ পর্যন্ত খালি জায়গা, সম্পূর্ণ নতুন হিসেবে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচল ব্রিজসংলগ্ন মস্তুল ডুমনি বাজারমুখী রাস্তার উভয়পাশের খালি জায়গা, ভাটারা সাঈদনগর ও আব্দুল্লাহপুর এলাকায় বেঁড়িবাধ সংলগ্ন মৈয়নারটেক শহীদনগর এলাকা। যে পাঁচটি হাট ইজারা দেওয়া যায়নি, সেগুলো হলো, উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ ও ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, বাড্ডা ইস্টার্ন হাউজিং (আফতাব নগর) বøক-ই সেকশন ৩-এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়কসংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইন ও মিরপুর সেকশন ৬ ওয়ার্ড ৬ (ইস্টার্ন হাউজিং)। করোনার ঝুঁকি এড়াতে ও কাঙ্খিত দর না পাওয়ায় উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমের অংশ এবং ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের ফাঁকা জায়গা, ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে হাটগুলো বাতিল করে গত দুই জুন একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ডিএনসিসি। এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. মোজ্জাম্মেল হক বলেন, আমরা আগেই তিনটি হাটের ইজারা সম্পন্ন করেছিলাম। করোনার ঝুঁকি বিবেচনায় আর কোনো হাট না বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তবে জনস্বার্থে হাট বাড়ানোর বৈঠকে আরও দু’টি হাট (ভাটারা ও মৈয়নারটেক) ইজারার জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এসব হাটের জন্য কাঙ্খিত দর পাওয়া যায়নি। তবু জনস্বার্থে এসব এলাকায় হাট বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কারণ ভাটারা এলাকার আশপাশে আর কোনো হাট না থাকায় সে এলাকার বাসিন্দাদের পশু কিনতে উত্তরা যেতে হতো। তাই এ সিদ্ধান্ত।

ডিএসসিসি’তে চূড়ান্ত ৫ হাট
ডিএসসিসির কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন আশপাশের খালি জায়গা, আফতাবনগর বøক-ই, এফ, জি-এর সেকশন ১ ও ২ নম্বর এলাকা, হাজারীবাগ লেদার টেকনোলজি কলেজ সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাহজাহানপুর মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গাসহ মোট পাঁচটি হাট ইজারার জন্য চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে সংস্থাটিতে তৃতীয় দফায় আহŸান করা দরপত্র খোলা হবে আগামী ১৯ জুলাই। ওই দিন বাকি হাটগুলোতে কাঙ্খিত দর পেলে ইজারা দেওয়া হবে। আর না পাওয়া গেলে পাঁচটি হাটই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে বিগত বছরগুলোতে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ সুবিধায় কোরবানি দেওয়ার জন্য রাজধানী ঢাকায় নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করে দিতো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু এবছর ঈদের ব্যবস্থাপনা নাগরিকদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সংস্থাটি বলছে, করোনার কারণে মানুষকে রাস্তা বা বাসার বাইরে কোরবানি না দিতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। সে কারণে ঈদের দিন কোরবানির কোনও ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে না। আর উত্তর সিটি করপোরেশন কোরবানি ব্যবস্থাপনার ডিজিটাল উদ্যোগ নিয়েছে। সংস্থাটি অনলাইনে পশু কেনাকাটা থেকে শুরু করে মাংস বাসায় পৌঁছে দেওয়ারও উদ্যোগ নিয়েছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে নগরীর বিভিন্ন স্থানের নির্ধারিত এলাকায় পশু জবাই দেওয়ার স্থানও চিহ্নিত করে দেবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এবছর হাটের পাশাপাশি ডিজিটাল হাটের ব্যবস্থাও করেছি। মানুষ চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে পশু কেনাকাটা করতে পারবে। এখান থেকে কিন্তু আমরা একটা টাকাও পাচ্ছি না। শুধু কেনাকাটা নয়, চাইলে পশু জবাই করেও আমরা বাসায় পৌঁছে দেবো। সেই ব্যবস্থাও করছি। এজন্য ফুডপান্ডা, সেবা ডটকম, এসএ পরিবহনসহ অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গেও আমরা চুক্তি করতে যাচ্ছি। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরের মতো এ বছরও পশুর হাটে লোকসমাগম বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে করে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা বেশি থাকবে। হাটে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা নিরুৎসাহিত করে সবাইকে অনলাইনে বেচাকেনার পরামর্শ দিচ্ছি। অনলাইনে পশু কেনার বিষয়ে উৎসাহিত করে মন্ত্রী আরও বলেন, এরই মধ্যে ‘ডিজিটাল হাট’ নামে একটি পশুর হাটের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম উদ্বোধন করা হয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করব, যাদের পক্ষে সম্ভব তারা যেন অনলাইন থেকে কোরবানির পশু কিনে নেন। এতে হাটে ভিড় কমবে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকিও কমবে।

বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হেসেন বলেন, আমাদের অনেক খামার আছে যেখানে ক্রেতারা চাইলে নিজেরা গিয়ে গরু পছন্দ করতে পারবেন। আবার অনলাইনে তো দেখে কেনার সুযোগ থাকছেই। প্রতারণার সুযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা আমাদের ডেইরি ফার্ম এসোসিয়েশনের সদস্য তাদের কাছে কোন ধরণের প্রতারণার শিকার হলে এসোসিয়েশন সহযোগিতা করতে পারবে। তবে এর বাইরের কেউ হলে আমাদের করার কিছু থাকে না। ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, অনলাইনে কোরবানির গরু কেনাকাটা করে কেউ যেন প্রতারিত না হয় এবং করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ঘরে বসে কোরবানির ব্যবস্থাপনা সেবা সহজ করইে ডিজিটাল হাটের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে স্বচ্ছতার জায়গা নিশ্চিত করেই ডিজিটাল হাট প্লাটফর্মে পশু কেনাকাটা করা হচ্ছে।

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, কোরবানি খোলা জায়াগায় দেওয়া হলে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। একটা পশু যখন কোরবানি হবে তখন সেখানে একাধিক মানুষ থাকবে। ইতোমধ্যে লক্ষণ-উপসর্গবিহীন করোনায় আক্রান্ত হার বেড়েছে। সেখানে কে আক্রান্ত কে নয় সেটা বোঝার উপায় নেই। তাই অপরিচিত মানুষের সংস্পর্শে কোনোভাবেই যাওয়া যাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (8)
Ranadhir Dash ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২০ এএম says : 0
পশুর হাট শহরের বাহিরে, করোনাতো বাহির ভিতর বুঝবে না তার কাজ সে ঠিকই করে যাবে, কঠোরভাবে স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করেই হাট পরিচালনা করতে হবে যদিও বলা হচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা গাইড লাইন অনুসরণ করা হবে তবে অদূর ভবিষ্যৎ ই বলে দিবে কতটুকু স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে হাটে পশু বেচা-কেনা হচ্ছে।
Total Reply(0)
Yousuf Ali ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২১ এএম says : 0
মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা কঠিন হলেও পশু স্বাস্থ্য বিধি পালন করা সম্ভব।
Total Reply(0)
Farzana Hai ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২১ এএম says : 0
These huts will be Next covid hotspot...no doubt
Total Reply(0)
Shamsul Hoque ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২২ এএম says : 0
কোরবানির জন্য যতগুলো বড় এবং খোলা জনবিচ্ছিন্ন মাঠ আছে সব গুলোকে ব্যবহার করা হোক।
Total Reply(0)
Ariful Hasan ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২২ এএম says : 0
অবশ্যই হাট বসা উচিত। লকডাউন খুলে দেয়া উচিত। আমাদের মত দেশের জন্য এগুলো না।
Total Reply(0)
Sohel Hossain ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২২ এএম says : 0
আমি মনে করি ঢাকার আশেপাশে অনেকে গরু পালে। এবং তারা কুরবানীর জন্যই গরু এগুলো পালন করে থাকে। যারা কুরবানী দিবে তারা ওখান থেকে গরু কিনে বাসায় নিয়ে যাবে।
Total Reply(0)
Md. Harunur Rashid ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২৪ এএম says : 0
মনে রেখো, হাট যত কমবে ভীড় ততো বাড়বে। সুতরাং, হাট কমানো নয়, আগের চেয়ে বাড়ানো হোক। এতে ভীড় কমার সাথে সাথে সংক্রমণও কমবে।
Total Reply(0)
Hamidullh Hamid ১৫ জুলাই, ২০২০, ২:২৫ এএম says : 0
দূরত্ব নিশ্চিত করে বেশি সংখ্যক হাট বসানোর ব্যবহার করা যাতে ভীড় কম হয়।
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন