চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজকেন্দ্রিক ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘের্ষ ৪ ক্যাডার গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে। গতকাল (রোববার) বেলা আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত টানা সংঘর্ষ চলাকালে কলেজ ক্যাম্পাসসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা দৃশ্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গুলি ও বোমার শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়। সড়কে যানবাহন চলাচল, আশপাশের দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। দু’টি কলেজ ও আশপাশের আরো কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার শিক্ষার্থী এবং এলাকার বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
দুই পক্ষ থেমে থেমে একে অপরের প্রতি ইট-পাটকেল, ককটেল ছুড়ে মারে। দুই পক্ষের অবস্থান থেকে গুলির শব্দ শোনা যায়। ক্যাডাররা প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশী অস্ত্রের মহড়া দেয়। কলেজ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ থাকলেও তারা ছিল নীরব দর্শক। দুই পক্ষের লড়াইয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ৪ ক্যাডার। গুলিবিদ্ধ জীবন, বাপ্পি, ইলিয়াছ, ইমামকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
ছাত্রশিবিরকে হটিয়ে ত্রিশ বছর পর ‘দখলে’ নেয়া ওই দু’ুটি কলেজে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের। কলেজ এলাকায় বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজিকে ঘিরে লড়াই তুঙ্গে ওঠে। এক পক্ষ অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাস্তানির অভিযোগ করে আসছে। এসব অভিযোগে সিএমপির কমিশনারকে স্মারকলিপিও দেয়া হয়েছে গত সপ্তাহে। দেশের নামকরা দু’টি কলেজ পুলিশের সহযোগিতায় দখলে নেয়ার পর সেখানে আধিপত্য বিস্তারের বিরোধে জড়িয়ে পড়া এক পক্ষ নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী। অপর পক্ষ সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী।
গত ১৬ ডিসেম্বর কলেজ দু’টি দখলে নেয় ছাত্রলীগ। পুলিশ ও কলেজ কর্তৃপক্ষ ওই দিনই কলেজ দু’টির সব ক’টি ছাত্রাবাস বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের বের করে দেয়। ছাত্রলীগের নিরাপত্তায় চকবাজার থেকে সরিয়ে পুলিশ ফাঁড়ি নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে। ছাত্রলীগকে আরো নিরাপদ করতে কলেজ দু’টির সব ক’টি গেটে তালা দেয়া হয়। অবরুদ্ধ কলেজে এখন নিজেরাই নিজেদের বিরুদ্ধে লড়ছে। পুলিশের তথ্য মতে, গত আট মাসে অন্তত ত্রিশবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে তারা। পরিস্থিতি সামাল দিতে সম্প্রতি চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ। কয়েক দিন কোনো পক্ষকেই মিছিল-সমাবেশ করতে দেয়া হয়নি। তবে পুলিশ বেশি দিন তাদের সে অবস্থানে থাকতে পারেনি।
গত কয়েক দিন ধরে ফের দুই পক্ষ মুখোমুখি হয়। এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরে গতকাল সকাল থেকে দুই পক্ষ কলেজ এলাকায় অবস্থান নেয়। মহিউদ্দিন চৌধুরীর সমর্থকরা কলেজ ক্যাম্পাসে আর নাছির সমর্থকরা কলেজের বাইরে অবস্থান নিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে। তাদের হাতে এসময় দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।
প্রতক্ষদর্শীরা জানায়, কলেজের প্রবেশমুখে নাছিরের অনুসারীরা অবস্থান নিয়ে মহিউদ্দিনের অনুসারীদের ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখে। কয়েক ঘণ্টা ধরে ক্যাম্পাসের ভেতরে তারা অবরুদ্ধ থাকে। আর বাইরে অপর পক্ষ লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান করে। পুলিশ মাজখানে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করে। এসময় গনি বেকারি থেকে গোলজার মোড়ের রাস্তায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা আড়াইটায় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় বিপুল সংখ্যক বহিরাগতও হামলা ও পাল্টা হামলায় অংশ নেয়। গুলি আর ককটেলের শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। এক পক্ষ কলেজের ভেতরের দিকে গুলি ও ককটেল ছুড়ে। অন্য পক্ষ কলেজ ক্যাম্পাস থেকে পাল্টা জবাব দেয়।
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মাহমুদুল করিম অভিযোগ করে বলেন, যুবলীগ ক্যাডার টনুসহ বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। আমরা প্রতিবাদ করতে চাইলে আমাদের দিকে ককটেল ছুড়ে মারে। এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন। তার ব্যাপক গুলিবর্ষণ করে। টনু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, রনির অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা করেছে। তারা প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণ করেছে।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের ভাবমর্যাদা নষ্ট করতে বারবার চট্টগ্রাম কলেজে বহিরাগতরা হামলা চালাচ্ছে। আমরা এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন কিন্তু আজো পর্যন্ত তারা ব্যবস্থা নেয়নি।
চকবাজার থানার ওসি আজিজ আহমেদ বলেন, দুই পক্ষ প্রায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। গুলি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গুলির শব্দ শুনেছি, কারা গুলি করেছে তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ উঠেছে পুলিশ দুই পক্ষকেই মদদ দিচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন