নভেম্বরের মধ্যে সিগন্যাল পাবার প্রত্যাশা : মামলামুক্ত নেতাদের তালিকা করা হচ্ছে
আফজাল বারী : সরকারের ‘আঁকা ছক’ বিএনপির হাতে। এর পাল্টা প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ডানাও মেলেছে অনেক দূর। টার্গেট আরেকটি সংসদ নির্বাচন। হয় মধ্যবর্তী নয়তো সরকারের মেয়াদ পূরণের পর। অতীতের গরমিলের হিসেবটার পুনরাবৃত্তি ঘটতে দেবে না- এমনতর নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলের অভ্যন্তরে। দলটির শীর্ষ নেতাদের কাছে তথ্য আছে, চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে একটি সিগন্যাল মিলবে। যা তাদের প্রত্যাশার অনুকূলে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দলটির নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ের একাধিক নেতার সাথে আলাপকা জানান, তাদের সিনিয়র নেতাদের সাজা দিয়ে সরকার ফাঁকা মাঠ তৈরী করতে চায়। ২০১৩ সালেল ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে চায়। তার আগে বিএনপিকে কা-ারিহীন করতে চায়। কিন্তু এবার সে সুযোগ দিতে নারাজ দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। তিনি পাল্টা ছকে পা ফেলছেন। নির্বাচনী মাঠে স্তরে স্তরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রস্তুত রাখাতে চান তিনি। এজন্য সংসদীয় আসনের কয়েকগুণ প্রার্থী তালিকা করা হচ্ছে। মামলার থাবায় ক্ষত হলেও বাছাই পর্বে বাদ যাবেন না এমন নেতার তালিকা করছেন তিনি।
সে ক্ষেত্রে ছাত্রসংসদের কমিটিগুলোর দুই দশকের ফাইল ওয়ার্ক করা হচ্ছে। সাথে রাখা হচ্ছে সুশীল সমাজের আরেকটি তালিকাও। দলটির চেয়ারপার্সন বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, শুধু দল বা জোট নয় আগামীর সরকার হবে সকল শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধির সমন্বয়ে। দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ গঠন করবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন দলীয় কাউন্সিলে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদ্য আ স ম হান্নান শাহ ইনকিলাবকে বলেন, অনেকদিন আগেই সরকারের হাতে একটি ‘ছক’ ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। সেটি হলো বিএনপিকে বিপর্যস্ত করা, নেতৃত্বে শূন্যতা সৃষ্টি করা এবং নির্বাচনের মাঠ প্রতিদ্বন্দ্বীবিহীন করা। বিএনপির সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যানকে সাজা দিয়ে সে ছকের সূচনা করেছে। বাকি সময়ে দলের সিনিয়র নেতাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, অতীতে রাজনৈতিক চালে বিএনপিকে কাবু করা গেলেও এবার তা সফল হবে না। পাল্টা ব্যবস্থা বিএনপির হাতে আছে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনী আসন ৩শ’। বিএনপির মনোনয়নপত্র বিক্রি হয় ৩ জাহার। এ হিসেব একযুগ আগের। ইতোমধ্যে প্রতিনি আসনেই কয়েকগুণ নেতার সংখ্যা বেড়েছে যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবার মতো যোগ্য। কাজেই সরকার চাইলেই যে মাঠ ফাঁকা করতে পারবে সে বাসনা পূরণ হবে না। তারা যে চিন্তা নিয়ে হাটছে আমরাও যে বসে থাকবো না। তবে জনগণ চায় তারা একটি নিরপেক্ষ, নির্দলীয় নির্বাচনের আয়োজন করুন। ফলাফল কি হয় তখন বুঝা যাবে।
বিএনপি ও আদালত সূত্রে জানা যায়, গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ১৫৮ জন কেন্দ্রীয় নেতার বিরুদ্ধে ৪ হাজার ৩৩১ মামলা ছিল। সারা দেশে নেতা-কর্মীদের নামে মামলা ২১ হাজার ৬৮০টি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে ৮৬টি মামলা আছে। ২৫টিতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ৮৩টি, মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে ৫৩, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে ২৩টি মামলা আছে। এ ছাড়া গত বছরের ২ অক্টোবর পর্যন্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ৩০টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ২১, তরিকুল ইসলাম ১২, আ স ম হান্নান শাহ ১০ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন ৬টি মামলার আসামি ছিলেন। যুগ্ম-মহাসচিবের মধ্যে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে মামলা সেঞ্চুরির বেশি। দলটির ৩৮৬ সদস্যের বিএনপির কমিটির সম্পাদক পর্যায়ের ১১৮ জনসহ বাকি সদস্যদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ডজন মামলা রয়েছে। দলটির জেলা, থানা ও ইউনিয়ন কমিটির ‘সুপার টেন’ পর্যন্ত মামলার জালে জড়ানো আছে।
বিএনপির আইনজীবীদের বিশ্লেষণে, মামলার নিষ্পত্তির গতি বলে দেয় সরকার কোনদিকে এগুচেচ্ছ। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে সরকার আগাম নির্বাচন দিতে পারে। এতে বিএনপির অনেক নেতা নির্বাচনের অযোগ্য হতে পারেন। অন্যদিকে আগামী নির্বাচনে সরকার যাদের মাঠে রাখতে চায় ইতোমধ্যে তাদের প্রতি বিশেষ বার্তা দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলীয় এমপিদের এখন থেকেই জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবার জন্য প্রকাশ্য নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের মিত্র দল জাতীয় পার্টির ভেতরেও একই ধরনের আলোচনার আভাস পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির নীতি-নির্ধারনী পর্যায়ের এক নেতা ইনকিলাবকে জানান, আগামী নভেম্বরে সরকারকে দাতাগোষ্ঠী বিশেষ করে বিশ্ব মোড়লদের কাছে একটি নির্বাচনী রূপ রেখা দাখিল করতেই হবে। সেটি যে ছকেই হোক। তবে তার আগে নিজেদের ভীতশক্ত করবার ট্রায়াল দিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। পাল্টা প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিএনপিও বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে। উদাহরণ টেনে ওই সূত্র জানান, প্রস্তুতি এমনতর যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যদি দাদা হয় বিএনপি তার নাতির সমবয়সী প্রার্থী দিতেও দ্বিধা করবে না। বিএনপির বদ্ধমূল ধারণা, ক্ষুব্ধ ভোটার একবার সুযোগ পেলে প্রার্থীর রাজনৈতিক বয়স বিবেচনা করবে না। তাদের জমানো ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে। প্রতিপক্ষের ভরাডুবিই হবে না জামানত নিয়েও টান পড়তে পারে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন