শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিদেশীদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই : তোফায়েল

প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সারাদেশে বিদেশীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি ইইউ’র
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির ঐক্য থাকায় তাদের নিয়ে জাতীয় ঐক্য হতে পারে না। তিনি বলেন, দলে দলে ঐক্য জাতীয় ঐক্য নয়; জাতীয় ঐক্য হচ্ছে মানুষে মানুষে ঐক্য, এটা হয়ে গেছে। কাজেই কারো সাথে ঐক্য করার কোনো প্রয়োজন নেই। এটা আমরা মনে করি।
বিভিন্ন স্থান থেকে ৯ জন লোক কেন কল্যাণপুরে যাবেÑপ্রশ্ন তুলে তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রত্যক্ষদর্শীর প্রত্যেকের উইটনেসের পরও যে দলটি (বিএনপি) বলতে পারে যে তারা জঙ্গি কি না সন্দেহ, তারা কোন হিসেবে জাতীয় ঐক্যের আহ্বান করতে পারে? এদের (নিহত সন্ত্রাসী) অনেকের অরিজিন হলো জামায়াত। এদিকে গুলশানের জঙ্গি হামলা ঘটনার পর বিদেশী ব্যবসায়ী ও কূটনীতিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে পরিস্থিতি এখন প্রায় স্বাভাবিক। আশা করা হচ্ছে, আগামীতে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা আর ঘটবে না বলে উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে যা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগে প্রভাব পড়বে না। অপরদিকে সাম্প্রতিক জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় গুলশান-বনানীর মতো সারাদেশে বিদেশীদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন।
গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরি মায়াউডনের নেতৃত্বে আগত কূটনীতিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দেশবাসী এখন ঐক্যবদ্ধ। ধর্মের নামে যারা এসব সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করছে, সে বিষয়ে দেশের আলেম সমাজ বিবৃতি দিয়েছে, মসজিদে মসজিদে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বয়ান হচ্ছে। বাংলাদেশে বিদেশীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিদেশী ব্যবসায়ী, কূটনীতিক বা মধ্যস্থতাকারী সকলেই নিরাপদে থাকবেন এবং বাণিজ্য বিনিয়োগের কাজ স্বাভাবিকভাবেই করবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বিনিয়োগে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। আগত কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীরা সরকারের গৃহীত কঠোর পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে দেশের প্রচার মাধ্যমের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। বাণিজ্যমন্ত্রী গতকাল ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরি মায়াউডনের নেতৃত্বে আগত কূটনীতিক ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে চলমান বাণিজ্য অব্যাহত ও জোরদার করার জন্য কূটনীতিক ও ব্যবসায়ীগণ বাণিজ্যমন্ত্রীর কাছে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানালে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার ইতোমধ্যে কার্যকর সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। গুলশানের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার পর সন্ত্রাসীদের একাধিক পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইলে যে কোনো ধরনের সহযোগিতা দেবে সরকার। সরকারের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। একই সঙ্গে ‘গুলশানের ঘটনা পুরো জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে দিয়েছে’ মন্তব্য করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের এ ঘটনা বেশি দিন থাকবে না। অ্যাবসোলিউটলি ইট উউল বি নরমাল কান্ট্রি। কোনো সন্দেহ নেই।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ-ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিজনেস কাউন্সিল একযোগে কাজ করছে। বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গঠিত থ্রি প্লাস ফাইভ অর্থাৎ তিন সচিব এবং পাঁচ রাষ্ট্রদূতের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি ১৮ আগস্ট সভা করবে। সেখানে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। ব্যবসায়ীদের চাহিদা মোতাবেক সব ধরনের সহযোগিতা দিবে বাংলাদেশ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাঙালি বীরের জাতি রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে। সন্ত্রাসের কাছে মাথানত করবে না। দেশবাসী সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। বিদেশীদের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। এর আগে বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য রেখে জাতীয় ঐক্যের কথা বলে, এটা হতে পারে নাÑবলেন তোফায়েল। তিনি বলেন, কল্যাণপুরে যারা মারা গেল তাদের গুলি সামনের দিকে লাগল না পেছনের দিকে লাগল, এটা কি কোনো ব্যাপার হতে পারে? সারা পৃথিবীর মানুষ, সারা বাংলাদেশের মানুষ মনে করে তারা জঙ্গি। শুধু মনে করে না বিএনপি। এখন একাত্তরের মতো প্রত্যেক মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়িয়েছে জানিয়ে তোফায়েল বলেন, বাবা-মা নিজের জন্ম দেওয়া ছেলেকে স্বীকার করে না। যাকে আদর-যতœ করে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছে, সেই বাবা-মা প্রিয় সন্তানের মুখ দেখতে যায় না, এটাই হলো বাংলাদেশ।
বৈঠকে বাংলাদেশের বিরাজমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বিদেশীদের অবস্থান তুলে ধরে ইইউ রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন বলেন, গুলশান ও শোলাকিয়ার মতো ঘটনাগুলো বিদেশীদের উদ্বিগ্ন করেছে। এসব ঘটনার পর নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদারে বাংলাদেশকে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে বিদেশীদের আস্থা ফিরে আসে। পিয়েরে মায়াদুন আরো বলেন, গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকাগুলোর নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সরকারকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে সারা বাংলাদেশের। দেশের ১৬ কোটি মানুষ নিরাপদ বোধ করলে এ দেশে ব্যবসাসহ বিভিন্ন কারণে এ দেশে বসবাসকারী বিদেশীরাও নিরাপদ বোধ করবেন। বেসরকারি খাতসহ সব ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান পিয়েরে মায়াদুন।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুইডেনের রাষ্ট্রদূত জোহান ফ্রিসেল, স্পেনের রাষ্ট্রদূত এডোয়ার্ডো ডি লেইগলেসিয়া ওয়াই ডেল রোসেল, নেদারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মিসেস লিয়োনি কোয়েলিনেয়ার, যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত মিসেস আলিসন ব্লাক, ইতালির চাজ ডি এফেয়ার্স জিওসিপি সেমেনজা, জার্মানি ও ডেনমার্কের প্রতিনিধি। এছাড়া প্রতিনিধিদলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ব্যবসায়ীগণও উপস্থিত থেকে আলোচনায় অংশ নেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন